হাইটেক পার্কের স্বপ্ন অধরাই থেকে যাচ্ছে রংপুরবাসীর। প্রকল্প বাস্তবায়নের মেয়াদ শেষ হলেও শুধু জমি অধিগ্রহণ হয়েছে। এতে হাইটেক পার্ক বাস্তবায়ন নিয়ে হতাশ হয়ে পড়েছেন স্থানীয় এলাকাবাসীসহ তথ্যপ্রযুক্তি নিয়ে লেখাপড়া করা শিক্ষার্থীরা। অ্যাপ্রোচ সড়কের জমি অধিগ্রহণ ও করোনা পরিস্থিতি কাজে ধীরগতি এনেছে বলছেন প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
জানা যায়, ২০১৭ সালের ২৭ এপ্রিল রংপুরসহ ১২টি জেলায় আইসিটি বা হাইটেক পার্ক স্থাপনে প্রকল্প অনুমোদন করে একনেক। রংপুর নগরীর খালিশাকুড়ি এলাকায় হাইটেক পার্ক নির্মাণের জন্য ৮ দশমিক ৫৯ একর জমি নির্ধারণ করা হয়। হাইটেক পার্কের নকশায় একটি সাততলা বিশিষ্ট স্টিল স্ট্রাকচারের মাল্টিটেনেন্ট ভবন, তিনতলা বিশিষ্ট ক্যান্টিন ও অ্যাল্ফিম্ফথিয়েটার ভবন এবং আরসিসির একটি ডরমিটরি ভবন রয়েছে। দেশের আড়াই হাজার তরুণ-তরুণীকে আইটি বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়ার লক্ষ্যে এ পার্ক নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষ। এ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয় ১৫৪ দশমিক ৫৪ কোটি টাকা ও প্রকল্প বাস্তবায়নের মেয়াদ নির্ধারণ করা হয় ২০১৭ সালের জুলাই থেকে ২০২০ সালের জুন পর্যন্ত। কিন্তু প্রকল্প বাস্তবায়নের মেয়াদ শেষ হলেও শুধু হাইটেক পার্কের জন্য জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। ফলে হাইটেক পার্ক নির্মাণ নিয়ে হতাশ এলাকাবাসী ও সচেতনরা। প্রশাসনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এরই মধ্যে ভবন নির্মাণের জন্য মাটি পরীক্ষা ও সরেজমিন পরিদর্শন করেছে হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষ।
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, সাবেক তপোধন ইউনিয়ন কমপ্লেক্সের বিপরীত পাশে খালিশাকুড়ি বিলে নির্ধারণ করা হয়েছে হাইটেক পার্কের স্থান। কার্পেটিং উঠে যাওয়া সড়কের ধারে একটি গাছে টাঙিয়ে দেওয়া হয়েছে হাইটেক পার্কের তথ্য সংবলিত একটি সাইনবোর্ড। রাস্তার ধারে একটি ধানি জমির পর খালিশাকুড়ি বিল। বিলের চারপাশে নির্ধারিত জমি পিলার ও তার দিয়ে ঘিরে রাখা হয়েছে। বিলে বর্ষার পানি কমে যাওয়ায় মাছ ধরার উৎসবে যোগ দিয়েছিলেন এলাকার বিভিন্ন বয়সী মানুষ। জায়গা নির্ধারণের পিলারে পোকামাকড় শিকারে ফিঙ্গে পাখির অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকার দৃশ্য দেখা গেছে। তিন বছর ধরে বিলটিতে উন্নয়ন কাজ না হওয়ায় অনেক স্থানে হেলে পড়েছে পিলার। কিছু জায়গায় চুরি হয়ে গেছে ঘের দেওয়া কাঁটাতার।
খালিশাকুড়ির বাসিন্দা মো. জামিল বলেন, বিলের মধ্যে একটি উন্নতমানের প্রতিষ্ঠান হবে বলে আমরা আশায় বুক বেঁধে ছিলাম। পার্কটি নির্মাণ হলে আইটি নিয়ে কাজ করার জন্য দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে ছেলেমেয়েরা আসত। আমাদের এলাকার রাস্তাঘাট, হোটেল-রেস্তোরাঁ গড়ে উঠত। কিন্তু প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়ে গেলেও জমি নির্ধারণ ছাড়া কোনো কাজ হয়নি।
স্থানীয় সাজ্জাদ হোসেন বলেন, 'এক অফিসের লোকজন আসি মাটি পরীক্ষা করে গেইল। এরপর থাকি কারও কোনো খোঁজ নাই। ওই ঘিরা দেওয়া জায়গা কোনা অমনেই আছে। কোন দিন পার্ক হইবে তার ঠিক-ঠিকানা নাই। হামরা চাই পার্ক কোনা টপ করি হোক।'
এ ব্যাপারে রংপুর জেলা প্রশাসক আসিব আহসান সমকালকে বলেন, রংপুর জেলায় হাইটেক পার্কের জন্য প্রায় ১০ একর সরকারি খাসজমি আমরা হাইটেক কর্তৃপক্ষকে বরাদ্দ দেওয়ার জন্য তথ্য মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছি। ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ওই খাস জমির সামনে ১ দশমিক ৩৪ শতক জমি অ্যাপ্রোচ সড়কের জন্য প্রশাসনিক অনুমোদন চেয়ে হাইটেক কর্তৃপক্ষকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। আমরা এখনও কোনো প্রশাসনিক অনুমোদন পাইনি। পেলে এটিও অধিগ্রহণ করা হবে। গত বছর হাইটেক কর্তৃপক্ষ ওই জমির সয়েল টেস্ট ও পর্যবেক্ষণ করেছে। করোনার কারণে কাজের ধীরগতি এসেছে। আমরা আশা করছি দ্রুত এটির বাস্তবায়ন হবে।

বিষয় : রংপুরে হাইটেক পার্ক

মন্তব্য করুন