ঢাকা মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ ২০২৪

এমপি মোস্তাফিজ ফের আলোচনায়

এমপি মোস্তাফিজ ফের আলোচনায়

সারোয়ার সুমন ও নাসির উদ্দিন হায়দার, চট্টগ্রাম

প্রকাশ: ২৮ আগস্ট ২০২০ | ১২:০০

বাঁশখালীর এমপি মোস্তাফিজুর রহমান ফের আলোচনায়। এবার মুক্তিযোদ্ধাকে সম্মাননা না দেওয়া ও অনুসারী দিয়ে মুক্তিযোদ্ধার ওপর হামলার অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে। এর আগে পছন্দমতো নির্বাচন কর্মকর্তা নিয়োগ না দেওয়ায় উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তাকে মারধর, চাচাকে চেয়ারম্যান পদে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জেতানো, নামে-বেনামে বিভিন্ন প্রকল্পের নামে টিআর-কাবিখার টাকা লুট, জামায়াতপ্রীতি, দলীয় নেতাকর্মীদের মামলায় জড়ানো ও অনুসারী দিয়ে সাংবাদিক ফারুক আবদুল্লাহর বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করানোসহ নানা অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। তার এমন কর্মকাণ্ডে বিব্রত স্থানীয় আওয়ামী লীগ। তার বিরুদ্ধে জানানো হয়েছে দলের সাধারণ সম্পাদককে। অভিযোগ গেছে প্রধানমন্ত্রীর কাছেও।
শুধু বিতর্কিত কর্মকাণ্ড নয়; অর্থবিত্তেও ফুলে-ফেঁপে উঠেছেন আওয়ামী লীগের নবীন এই এমপি। তিনি সাংসদ নির্বাচিত হওয়ার পর তার স্ত্রীও হয়েছেন কোটিপতি। ২০১৪ সালে এমপি নির্বাচিত হওয়ার আগে স্থাবর-অস্থাবর মিলে এমপির স্ত্রীর সম্পদ ছিল সাড়ে ৫৪ লাখ টাকা। কিন্তু ২০১৮ সালে এসেই কোটিপতি হয়ে যান তার গৃহিণী স্ত্রী। আয়ের কোনো উৎস না থাকলেও এমপি মোস্তাফিজের স্ত্রীর পাঁচ তলা একটি ভবন হয়েছে। তা ছাড়া নগদ ও বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানে আছে তার সাড়ে ১৬ লাখ টাকা। নির্বাচন কমিশনে দেওয়া হলফনামায় এসব তথ্য দিয়েছেন খোদ এমপি মোস্তাফিজুর রহমান।
বিভিন্ন অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে গত তিন দিনে এমপি মোস্তাফিজুর রহমানের মোবাইল ফোনে ২০ বারের বেশি ফোন করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি। সমকালের পরিচয় দিয়ে এসএমএস পাঠালেও তিনি সাড়া দেননি। এমপির একান্ত ব্যক্তিগত সহকারী তাজুল ইসলামের মাধ্যমেও এমপির সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করা হয়। কিন্তু সাড়া দেননি তিনি তাতেও। গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পর কথা বলবেন বলে ব্যক্তিগত সহকারী তাজুলকে জানান তিনি। কিন্তু পরে 'মিডিয়ার সঙ্গে এখন কথা বলবেন না' বলে এপিএসকে জানিয়ে দেন। অবশ্য এর আগে বিভিন্ন বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের অভিযোগ তিনি অস্বীকার করেছিলেন সমকালের কাছে। তখন তিনি বলেন, আমি এমপি হওয়ার পর বাঁশখালীতে হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন কাজ হয়েছে। এতে ঈর্ষান্বিত হয়ে আমাদের দলেরই একটি অংশ অপপ্রচারে লিপ্ত। ষড়যন্ত্র করে আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা, বানোয়াট অনেক কিছু বলছে তারা।
তবে দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান বলেন, এমপি মোস্তাফিজের নানা কর্মকাণ্ডে দল বিব্রত। বিষয়টি দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরকে জানানো হয়েছে। দলের সভাতেও বিষয়টি উত্থাপন করা হবে।
মোস্তাফিজুর রহমান বাঁশখালী থেকে ২০১৪ ও ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে এমপি নির্বাচিত হন। প্রথম এমপি নির্বাচিত হয়েই নানা রকম বিতর্কে জড়ান। সর্বশেষ বিতর্কে জড়ান চলতি মাসে। বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রথম প্রতিবাদকারী মৌলভী সৈয়দের ভাই মুক্তিযোদ্ধা আলী আশরাফকে মৃত্যুর পর এমপি মোস্তাফিজুর রহমানের নির্দেশে সম্মাননা না দেওয়ার অভিযোগ ওঠে। এটি নিয়ে জনরোষ তীব্র হলে তিনি বাঁশখালীতে কোনো মুক্তিযুদ্ধ হয়নি বলে বিতর্কিত মন্তব্য করেন। এর প্রতিবাদে পরিবারের সদস্যরা স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে বাঁশখালীতে প্রতিবাদ সমাবেশ করলে সেখানে বাধা দেয় এমপির অনুসারীরা। এর পর মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কমান্ডের ব্যানারে চট্টগ্রাম মহানগর ও দক্ষিণ জেলা নেতৃবৃন্দ ২৪ আগস্ট চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন করলে সেখানে পৌর মেয়র সেলিম, এমপির এপিএস ৪ নং বাহারছড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান তাজুল ইসলাম ও এপিএস মুস্তাফিজুর রহমান রাসেলের নেতৃত্বে ফের হামলা চালানো হয়। এ ঘটনায় মামলা হলে এপিএস রাসেলসহ চারজনকে আটক করে পুলিশ।
এর আগে পছন্দের ব্যক্তিকে নিয়োগ না দেওয়ায় ২০১৬ সালের ১ জুন উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তাকে মারধর করেন তিনি। টিআর-কাবিখার বরাদ্দ নিয়েও নয়ছয় হওয়ার অভিযোগ আছে সাংসদের বিরুদ্ধে। বাঁশখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স মসজিদে সৌর প্যানেল স্থাপনের জন্য ভুয়া বরাদ্দ দেন তিনি। একই অর্থবছরে পশ্চিম ইলশা শেখ রাসেল স্মৃতি সংসদে সৌর বিদ্যুৎ স্থাপনের জন্য এক টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়। অথচ এই নামে কোনো সংগঠনের অস্তিত্বই নেই ওই এলাকায়। কাথারিয়া হালিয়াপাড়া দুর্গা মন্দিরের নামে সৌর প্যানেলের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয় ৩৬ হাজার টাকা। অথচ সেখানে কোনো দুর্গা মন্দিরের অস্তিত্বই নেই। সাংসদের লোকজন এমন হরিলুটের সঙ্গে যুক্ত বলে অভিযোগ আছে অনেক দিন ধরে।
দলীয় কোন্দলেও বারবার নাম এসেছে এমপি মোস্তাফিজের। দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে তিনি সভাপতির পদ আঁকড়ে থাকায় বাঁশখালীতে দ্বিধাবিভক্ত হয়ে আছে আওয়ামী লীগ। মহানগর মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মোজাফফর আহমেদ জানান, ২০১৬ সালের ২৮ জানুয়ারি বাঁশখালীর পুঁইছড়ি মদিনাতুল উলুম মোহাম্মদিয়া মাদ্রাসায় যুদ্ধাপরাধী দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর ছেলে শামীম বিন সাঈদীর সঙ্গে একটি অনুষ্ঠানে অতিথি ছিলেন এমপি মোস্তাফিজ। নেতাকর্মীদের সমালোচনার মুখে ওই অনুষ্ঠান পরে পণ্ড হয়ে যায়। আবার ২০১৫ সালের ২৪ নভেম্বর চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সভায়ও জামায়াতপ্রীতির অভিযোগ তোলেন দলীয় নেতারা। ওই সভায় এমপি দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের বন ও পরিবেশ সম্পাদক মুজিবুল হককে মারতে তেড়ে যান। এদিকে ২০১৮ সালের ১৮ আগস্ট এমপির বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন করে ষড়যন্ত্রের অভিযোগ করেন বাঁশখালীর পৌর মেয়র ও পৌর আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক শেখ সেলিমুল হক চৌধুরী।


আরও পড়ুন

×