২০ বছর কনডেম সেলে থাকার পর আপিল বিভাগের রায়ে মুক্তি পেলেন শেখ জাহিদ। সোমবার সন্ধ্যায় খুলনা জেলা কারাগার থেকে মুক্তি দেওয়া হয় তাকে। ২০ বছর পর মুক্তি পেয়ে আবেগে কেঁদে ফেলেন জাহিদ। তাকে দেখতে কারাগার এলাকায় ভিড় জমান গণমাধ্যম কর্মী ও উৎসুক মানুষ।

এ সময় সাংবাদিকদের জাহিদ বলেন, ‘কখনও ভাবিনি যে ছাড়া পাব। আমি নির্দোষ ছিলাম। কারাগারে ২০ বছর অনেক কষ্টে কেটেছে।’ তিনি জানান, তার স্ত্রীর পূর্বের স্বামী এই হত্যাকাণ্ডে জড়িত ছিলো বলে তার ধারণা। তার শ্বশুর-শ্বাশুড়ি তাকে এই মামলায় ফাঁসিয়েছে।

জেল ফটকে শেখ জাহিদকে নিতে আসেন তার ভগ্নিপতি আজিজুর রহমান। সমকালকে আজিজুর বলেন, ‘মামলার সময় তদন্ত কর্মকর্তা আমাদের কাছে ৫০ হাজার টাকা চাঁদা চেয়েছিল। টাকা দিতে না পারায় সব জেনেও সেলিমের বিরুদ্ধে চার্জশিট দেয়। বিনা অপরাধে ২০ বছর কারাগারে কাটালো জাহিদ। তার ২০ বছর কে ফিরিয়ে দেবে?’

খুলনা জেলা কারাগারের সুপার মো. ওমর ফারুক জানান, উচ্চ আদালত থেকে মামলার নথি কারাগারে এসে পৌঁছালে সন্ধ্যায় তাকে মুক্তি দেওয়া হয়।

এর আগে পারিবারিক কলহে স্ত্রী-সন্তানকে হত্যার মামলায় ২০০০ সালের জুন মাসে শেখ জাহিদকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেন বাগেরহাটের একটি আদালত। সেই থেকে কারাগারের অন্ধ প্রকোষ্ঠে ঠাঁই হয় তার।

জানা গেছে, খুলনা জেলার রূপসা থানার নারিকেল চানপুর গ্রামের বাসিন্দা শেখ জাহিদ। ১৯৯৭ সালে বাগেরহাটের ফকিরহাট এলাকার রহিমার সঙ্গে বিয়ে হয় তার। ১৯৯৭ সালের ১৬ জানুয়ারি বাগেরহাটের ফকিরহাট থানায় মামলা করেন তার শ্বশুর ময়েনউদ্দিন শেখ। মামলায় রহিমা খাতুন (২৮) ও তার দেড় বছরের মেয়ে রেশমা খাতুনকে ঘুমের মধ্যে শ্বাসরোধ করে হত্যার অভিযোগ করা হয়।

অভিযোগে বলা হয়, শেখ জাহিদ তার স্ত্রী ও কন্যাকে হত্যার পর পালিয়ে গেছেন। এই মামলায় বাগেরহাটের আদালত ২০০০ সালের ২৫ জুন এক রায়ে একমাত্র আসামি শেখ জাহিদকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেন। রায় ঘোষণার আগে জাহিদ আত্মসমর্পণ করেন।

নিম্ন আদালতের রায় অনুমোদনের জন্য হাইকোর্টে পাঠানো হয় ডেথ রেফারেন্স। হাইকোর্ট মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখে বিচারপতি বদরুল হক ও বিচারপতি মিজানুর রহমান ভূঁইয়ার হাইকোর্ট বেঞ্চ ২০০৪ সালের ৩১ জুলাই রায় দেন। এরপর এই রায়ের বিরুদ্ধে কারাগার থেকে ২০০৭ সালে আপিল বিভাগে জেল আপিল করেন জাহিদ। চলতি মাসে মামলাটি নজরে পড়ে প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের বেঞ্চের। মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির উদ্যোগ নেয় সর্বোচ্চ আদালত। নিযুক্ত করা হয় শেখ জাহিদের আইনজীবী। কিন্তু মামলার শুনানি করতে গিয়ে আপিল বিভাগ দেখেন নানা অসঙ্গতি। বিষয়টি আদালতের সামনে তুলে ধরলে দীর্ঘ শুনানী শেষে গত ২৫ আগস্ট প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বে আপিল বিভাগ জাহিদকে খালাস দেন।

রায়ে বলা হয়, স্ত্রী ও কন্যা হত্যার অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ার কারণে খালাস দেওয়া হলো শেখ জাহিদকে।