রোববার রাত সাড়ে ১১টার দিকে মোবাইল ফোনে মেয়ের সঙ্গে শেষ কথা ও চিৎকারের শব্দ শুনতে পান বাবা। সকালে এসে মেয়ের নিথর দেহ পড়ে থাকতে দেখেন নদীর পাড়ে। মেহেদির রং মুছে যাওয়ার আগেই মেয়ে সেলিনার শরীরে এলোপাথারি কোপানোর দাগ ও বাম হাত বিচ্ছিন্ন হওয়া লাশ দেখে বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েন বাবা আলামিন। 

ঘটনাটি ঘটেছে রোববার রাত ১২টার দিকে ময়মনসিংহের ত্রিশালের হরিরামপুর ইউনিয়নের রায়েরগ্রাম এলাকায়। ঘটনাস্থল পরির্দশন করেছে পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। তবে ওই রহস্যজনক হত্যাকাণ্ডের কারণ এখনো জানতে পারেনি পুলিশ।

পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, দুইমাস আগে উপজেলার হরিরামপুর ইউনিয়নের রায়েরগ্রামের আলামিনের মেয়ে সেলিনা আক্তারের (২০) বিয়ে হয় আপন মামা রুহুল আমিনের ছেলে শরীফের সঙ্গে। দু’জনের বাড়ি একই গ্রামে থাকলেও পৈতৃক ভিটায় শরীফদের কোন ঘর নেই। দিনমজুর শরীফ কখনো রাজযোগালী, কখনো মাটি কাটার কাজ করেন। বিয়ের পরও একেক সময় একেক আত্মীয়ের বাড়িতে থাকত ওই দম্পত্তি। রোববার দিনভর মাটি কাটার কাজ শেষে সন্ধ্যার পর বউকে নিয়ে বেড়াতে যাওয়ার কথা বলে রায়েরগ্রাম মির্ধা বাজার সংলগ্ন তার হাফিজা খালার বাড়ি থেকে বের হন শরীফ। পরে বেশ কয়েকবার বাবা-মার সঙ্গে কথা বলেন সেলিনা। তবে রাত সাড়ে ১১টার দিকে যখন মোবাইল ফোনে বাবার সঙ্গে মেয়ের কথা হচ্ছিল তখন ওই নব দম্পত্তির মধ্যে ঝগড়া চলছিল। হঠাৎ চিৎকারের শব্দ শুনতে পান বাবা। ওটাই ছিল বাবা-মেয়ের মধ্যে শেষ কথা। এরপর রাতেই শরীফের পরিবারের লোকজন সেলিনার মা-বাবাকে ফোন জানায়, শরীফ গুরুতর আহত, গলা ও মাথায় আঘাতের চিহ্ন, অজ্ঞান অবস্থায় বাড়ির উঠোনে এসে পড়েছিলেন। তাকে নিয়ে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যাওয়া হচ্ছে। তবে কি ঘটনা ঘটেছে তা জানাতে পারেনি তারা। খবর পেয়ে মেয়ের জামাই শরীফকে দেখতে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ছুটে যান সেলিনার বাবা-মা। হাসপাতালে অবস্থানকালে রাত পোহাতেই জানতে পারেন তাদের আদরের মেয়ে সেলিনার নিথর দেহ পড়ে আছে সুতিয়া নদীরপাড় ঘেঁষা স্থানীয় নুরুল হকের একটি অনাবাদী জমিতে। 

শরীফের চাচি জমিলা খাতুন ও ফুফু আমিনা খাতুন জানান, রোববার সন্ধ্যার পর মির্ধা বাজার সংলগ্ন তার হাফিজা খালার বাড়ি থেকে বের হয়ে শরীফ বা সেলিনার মধ্যে কেউ এই বাড়িতে আসেনি।

এদিকে খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরির্দশন করেন অতিরিক্ত জেলা পুলিশ সুপার ফজলে রাব্বি, ত্রিশাল সার্কেল এএসপি স্বাগতা ভট্রাচার্য মৌ, জেলা ডিবি ওসি শাহ কামাল, ত্রিশাল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মাহমুদুল হাসান ও ওসি (তদন্ত) সুমন রায়। পরে ঘটনাস্থল থেকে লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠিয়েছে পুলিশ। এঘটনায় ত্রিশাল থানায় একটি হত্যা মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।

ওসি মাহমুদুল হাসান জানান, এলোপাথারি কুপিয়ে ওই নববধুকে হত্যা করা হয়েছে। শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে তার বাম হাত। তদন্তের মাধ্যমে হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদ্ঘাটনের চেষ্টা চলছে। লাশ ময়নাতদন্তের জন্য ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে।

অতিরিক্ত জেলা পুলিশ সুপার ফজলে রাব্বি জানান, ঘটনাস্থল থেকে আলামত সংগ্রহ করা হয়েছে, তদন্ত চলছে। তবে কি কারণে ওই হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটেছে তা এখনো জানা যায়নি।