বিদ্যালয়ে ছাত্রের অস্বাভাবিক মৃত্যু

তন্ময় চক্রবর্তী
দশমিনা (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১০ অক্টোবর ২০২৩ | ১৮:০০
বিদ্যালয়ে বসে দশম শ্রেণির এক ছাত্রের অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে। গত সোমবার দশমিনা উপজেলার সৈয়দ জাফর আরজবেগী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে এ ঘটনা ঘটে।
এ ঘটনায় প্রধান শিক্ষক মো. কাওসার আলমের বিচার চেয়ে গতকাল মঙ্গলবার বিক্ষোভ মিছিল, মানববন্ধন ও সমাবেশ করেছেন বিদ্যালয়ের প্রাক্তন ও বর্তমান শিক্ষার্থী এবং এলাকাবাসী। বিদ্যালয়ের সামনে অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তব্য দেন অভিভাবক এসহাক হাওলাদার, মনির হোসেন, প্রাক্তন শিক্ষার্থী গাজী সাইদুর রহমান, সবুজ সরদার প্রমুখ।
ছেলেটির নাম তন্ময় চক্রবর্তী (১৫)। সে একই বিদ্যালয়ের প্রাক্তন সহকারী শিক্ষক প্রয়াত গোপাল চক্রবর্তীর ছেলে। তন্ময়ের চাচাতো বোন ও একই শ্রেণির শিক্ষার্থী লাবণী চক্রবর্তী (১৫) এবং তন্ময়ের মা জয়ন্তী চক্রবর্তীর ভাষ্য, সোমবার ছিল তথ্য ও যোগাযোগ বিষয়ের পরীক্ষা। তন্ময় পরীক্ষা দিতে গেলে শিক্ষক মরিয়ম তাকে খাতা দেননি। তিনি পরীক্ষার জন্য প্রধান শিক্ষকের থেকে অনুমতি নিয়ে আসতে বলেন। তন্ময় প্রধান শিক্ষকের কাছে অনুমতি আনতে গেলে তিনি বিদ্যালয়ের সব বকেয়া পরিশোধ করতে বলেন। অন্যথায় পরীক্ষায় অংশ নিতে দেওয়া হবে না বলে বকাঝকা করেন এবং বিদ্যালয় থেকে বেরিয়ে যেতে বলেন। এর পর তন্ময় বাড়িতে চলে যায়। মায়ের কাছে ঘটনা খুলে বলে। মা সব শোনার পর ছেলেকে আবার বুঝিয়ে-শুনিয়ে বিদ্যালয়ে পাঠিয়ে দেন। কিন্তু শিক্ষকরা তার পরীক্ষা নিতে চাননি। এর পর তন্ময় গ্যাস ট্যাবলেট সেবন করে। বিদ্যালয়ের লাইব্রেরিতে কিছুক্ষণ রেখে সুস্থতার চেষ্টা করে ব্যর্থ হওয়ার পর তাকে কর্মচারী মো. জামাল ও প্রহরী হেমায়েত হোসেন অটোরিকশায় করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। চিকিৎসক প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে পটুয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে পাঠান। সেখানে বিকেলে তন্ময়ের মৃত্যু হয়। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক মিঠুন হাওলাদার জানান, গ্যাস ট্যাবলেট সেবন করেছিল তন্ময়।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. কাওসার দাবি করেন, ‘ওর (তন্ময়) বাবা বিদ্যালয়ের শিক্ষক ছিলেন। তাই কোনোদিন ওর কাছ থেকে আমরা টাকাপয়সা নিইনি। ছেলেটি নেশায় আসক্ত ছিল।’ পরীক্ষায় কেন তন্ময়কে অংশ নিতে দেওয়া হয়নি এবং বিদ্যালয়ে বসে কেন সে গ্যাস ট্যাবলেট সেবন করল–এমন প্রশ্নের সদুত্তর দিতে পারেননি তিনি। ঘটনার দিন বিদ্যালয়ে ছিলেন না দাবি করে বিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষক মো. হেলাল উদ্দিন বলেন, ‘যতটুকু শুনেছি, প্রধান শিক্ষক ছেলেটাকে একটু শাসন করে থাকতে পারেন।’
সহকারী প্রধান শিক্ষক পরেশ চন্দ্র শীল বলেন, ঘটনার সময় তিনি পাশের শ্রেণিকক্ষে ছিলেন। ডাকাডাকির শব্দ পেয়ে লাইব্রেরি কক্ষে গিয়ে তন্ময়কে অসুস্থ অবস্থায় দেখতে পান। তন্ময়কে হাসপাতালে নেওয়া হলে তিনিও মোটরসাইকেলে করে হাসপাতালে যান। ফোন না ধরায় এ বিষয়ে বিদ্যালয়ের প্রহরী হেমায়েত হোসেনের সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি। উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. সেলিম মিয়া জানান, বিষয়টি জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে জানানো হয়েছে। থানার ওসি আনোয়ার হোসেন তালুকদার জানান, জেলা পুলিশ সুপারকে ঘটনাটি জানানো হয়েছে। ময়নাতদন্ত শেষে লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।