জাবিতে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে কড়াকড়ি

জাবি প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১০ অক্টোবর ২০২৩ | ১৮:৫৭ | আপডেট: ১০ অক্টোবর ২০২৩ | ১৮:৫৭
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজনে কড়াকড়ি আরোপ করেছে প্রশাসন। শিক্ষা ও প্রাকৃতিক পরিবেশ বজায় রাখার কথা বলে সেলিম আল দীন মুক্তমঞ্চে সব ধরনের অনুষ্ঠান রাত ১০টার মধ্যে শেষ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। অ্যালামনাই ও বিভিন্ন ব্যাচ আয়োজিত নিয়মিত অনুষ্ঠানের ওপরও এসেছে নিষেধাজ্ঞা।
গত সোমবার বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার কার্যালয়ের বিজ্ঞপ্তিতে এসব নির্দেশনা দেওয়া হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, শীতকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের অ্যালামনাই ও ব্যাচগুলোর পুনর্মিলনী এবং বর্ষপূর্তির অনুষ্ঠান প্রায়ই মধ্যরাত পর্যন্ত মুক্তমঞ্চে হয়। এতে শিক্ষা ও ক্যাম্পাসের প্রাকৃতিক পরিবেশ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এর পাশাপাশি ক্যাম্পাসে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড ও বিশৃঙ্খল পরিবেশের সৃষ্টি হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত ২০ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেটের বিশেষ সভায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান সীমিতকরণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের অনুষ্ঠান তিন বছরে একবার আয়োজন করা যাবে। সাবেক ও বর্তমান ব্যাচগুলোর বর্ষপূর্তি কিংবা পুনর্মিলনী অনুষ্ঠান করা যাবে না। রাত ১০টার পর কোনো সংগঠন অনুষ্ঠান করলে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্নের পাশাপাশি কালো তালিকাভুক্ত করা হবে। এসব সংগঠনকে পরে আর অনুষ্ঠান আয়োজনের অনুমতি দেওয়া হবে না।
বিশ্ববিদ্যালয়ে এমন নির্দেশনাকে অযৌক্তিক আখ্যা দিয়ে বিভিন্ন সংগঠন ও শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা প্রতিবাদ জানিয়েছেন।
গতকাল মঙ্গলবার ছাত্রফ্রন্ট জাবি শাখা থেকে পাঠানো বিবৃতিতে বলা হয়, দীর্ঘ সংগ্রামের মধ্য দিয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে যে গণতান্ত্রিক পরিবেশ এবং সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য গড়ে উঠেছে, এ ধরনের নির্দেশনা তার মূলে কুঠারাঘাত করে। শিক্ষার ও প্রাকৃতিক পরিবেশ রক্ষার যে বিষয়ে প্রশাসন বলছে, তা আসলে কথার কথা ছাড়া কিছু নয়। প্রশাসনের নাকের ডগায় বিভিন্ন বিভাগে সান্ধ্যকালীন বা উইকেন্ড কোর্স চালু আছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক পরিবেশ বিনষ্টে এটিই মূল ভূমিকা পালন করছে। হলগুলোয় প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের মুখোমুখি হতে হচ্ছে র্যা গিংয়ের নামে ভয়াবহ নির্যাতনের।
এ বিষয়ে জাহাঙ্গীরনগর সাংস্কৃতিক জোটের সাধারণ সম্পাদক সুমাইয়া জাহান বলেন, ‘সাংস্কৃতিক চর্চা কখনোই শিক্ষার জন্য ক্ষতিকর হতে পারে না। বিশ্ববিদ্যালয়ের সুষ্ঠু সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডল নির্মাণ ও এর পরিচর্যার জন্য প্রশাসনের এমন নিয়ম সংস্কৃতি চর্চার জন্য ক্ষতিকর।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আ স ম ফিরোজ উল হাসান বলেন, ‘শীতকাল বিশেষ করে নভেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত সাবেক শিক্ষার্থীরা অনেকেই ক্যাম্পাসে এসে প্রোগ্রাম করে চলে যান। কিন্তু এর যে প্রভাব বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে, সেটা তারা চিন্তা করেন না। সংকটের বিষয় হচ্ছে, অনেকের মূল প্রোগ্রাম শুরু হয় রাত ১২টার পর এবং তা চলতে থাকে সারা রাত। যা বিশ্ববিদ্যালয়ের সুষ্ঠু পরিবেশের জন্য চ্যালেঞ্জ। সবার মঙ্গলের কথা চিন্তা করেই বিশ্ববিদ্যালয় এমন নোটিশ দিয়েছে।’
উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক মোহাম্মদ মোস্তফা ফিরোজ বলেন, ‘শিক্ষা ও গবেষণার জন্য শিক্ষার্থীরা প্রায় সারা দিনই বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকে। রাতে তাদের পড়াশোনার জন্য একটি নির্দিষ্ট সময় প্রয়োজন। সামগ্রিক বিষয় চিন্তা করে বিশ্ববিদ্যালয় এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে। প্রশাসন এ কাজ বাস্তবায়নের সর্বোচ্চ চেষ্টা করবে।’