ভাঙ্গায় আওয়ামী লীগের জনসভায় শেখ হাসিনা
নৌকায় ভোট দিন দেশকে ধ্বংস থেকে রক্ষা করবে
অমরেশ রায়, হাসানউজ্জামান ও সাইফুল ইসলাম শাকিল, ভাঙ্গা (ফরিদপুর) থেকে
প্রকাশ: ১০ অক্টোবর ২০২৩ | ১৮:০০
দেশের উন্নয়ন-অগ্রগতি অব্যাহত রাখতে আবারও নৌকা মার্কায় ভোট দেওয়ার জন্য দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, নৌকা আমাদের স্বাধীনতা এনে দিয়েছে। নৌকায় ভোট দিয়ে দেশের উন্নয়ন-সমৃদ্ধি হয়েছে।
নৌকাই এ দেশের মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন করবে। তাই দেশকে এগিয়ে নিতে ও মানুষের সেবা করতে দেশের মানুষের কাছে আবারও নৌকা মার্কায় ভোট দেওয়ার আবেদন জানাচ্ছি।
বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের দুর্নীতি, লুটপাট ও দুঃশাসনের কথা তুলে ধরে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় থেকে দেশকে ধ্বংস করেছে। লুটেরা বিএনপি এতিমের অর্থ আত্মসাৎ করেছে। দুর্নীতি করে সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামি বিএনপির নেতা আর জামায়াত রাজাকার, যুদ্ধাপরাধী। এরা দেশকে ধ্বংস করে দেবে। ধ্বংসের হাত থেকে নৌকাই আপনাদের রক্ষা করবে।
গতকাল মঙ্গলবার ফরিদপুরের ভাঙ্গায় ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত বিশাল জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন। ঢাকা-ভাঙ্গা পদ্মা রেল সংযোগ প্রকল্পের উদ্বোধন উপলক্ষে ভাঙ্গার ডা. কাজী আবু ইউসুফ স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত এ জনসভায় ছিল লাখো মানুষের জমায়েত।
পঁচাত্তর-পরবর্তী সামরিক স্বৈরশাসকদের দুঃশাসন তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জিয়া-এরশাদ-খালেদা জিয়া লুটপাট আর দুর্নীতিতে মত্ত ছিলেন। তাদের সময় কেউ ভোট দিতে পারত না। কথাই তো আছে– তখন নির্বাচন ছিল ১০টা হোন্ডা, ২০টা গুন্ডা; ভোট ঠান্ডা। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর আমরা মানুষের হাতে ভোটের অধিকার তুলে দিয়েছি। একটানা ১৪ বছর দেশে গণতন্ত্র ছিল বলেই দেশকে এত উন্নত করতে পারছি।
ট্রেনে পদ্মা পাড়ির স্বপ্ন পূরণের দিনে ভাঙ্গায় আয়োজিত এই জনসভা এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আগমন ঘিরে পুরো দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের মধ্যে উচ্ছ্বাস ও আনন্দ ছড়িয়ে পড়ে। পদ্মার দুই তীরে প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানাতে তাঁর আসা-যাওয়ার পথ বর্ণিল সাজে সাজিয়ে তোলা হয়েছিল। পথে পথে ছিল রংবেরঙের ব্যানার-ফেস্টুন আর তোরণ।
বেলা ১১টায় সমাবেশের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হলেও ভোর থেকেই জনসভাস্থলে নেতাকর্মী আসতে শুরু করে। ভাঙ্গাসহ ফরিদপুর জেলার সব উপজেলা, মাদারীপুর, শরীয়তপুর, রাজবাড়ী, গোপালগঞ্জ, বরিশালসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বিভিন্ন জেলার নেতাকর্মী এই জনসভায় যোগ দেয়। তাদের সঙ্গে ছিল সর্বস্তরের মানুষের উপস্থিতি।
এর আগে প্রধানমন্ত্রী সড়কপথে মাওয়ায় এসে বেলা ১১টায় পদ্মার মাওয়া প্রান্তে ঢাকা-ভাঙ্গা পদ্মা রেল সংযোগ প্রকল্পের উদ্বোধন করেন। এর পর সেখানে আয়োজিত সুধী সমাবেশে যোগ দেন তিনি।
শেখ হাসিনা বিকেল পৌনে ৩টায় ডা. কাজী আবু ইউসুফ স্টেডিয়ামের জনসভা মঞ্চে উঠলে উচ্ছ্বসিত লাখো মানুষ গগনবিদারী স্লোগান দিয়ে স্বাগত জানায় প্রধানমন্ত্রীকে। এ সময় মঞ্চ থেকে হাত নেড়ে জনতার অভিনন্দনের জবাব দেন তিনি। জনসভায় বক্তৃতা শেষে বিকেল ৪টায় গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় নিজ বাড়ির উদ্দেশে রওনা হন তিনি। সেখানে রাত্রিযাপন শেষে আজ ঢাকায় ফেরার কথা রয়েছে তাঁর।
জনসভায় পদ্মায় রেল সংযোগ চালুর কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, পদ্মা সেতুতে রেললাইন উপহার নিয়ে আজ আপনাদের কাছে এসেছি। এই ট্রেনে চড়েই আমি ভাঙ্গা এসেছি। কাজেই আপনাদের পদ্মা সেতুর সঙ্গে সঙ্গে রেলও দিয়ে গেলাম; বিগত দিনে আর কেউ যেটা চিন্তাও করতে পারেনি।
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, অনেক জ্ঞানী-গুণী আমার পাশে নেই। কিন্তু বাংলাদেশের মানুষ পাশে আছে। দেশের মানুষ পাশে থাকলে অসাধ্য সাধন করা যায়– পদ্মা সেতু করে দিয়ে সেটা আবারও প্রমাণ করলাম। জাতির পিতা বলেছিলেন, বাংলাদেশের মানুষকে দাবায়ে রাখতে পারবা না। আসলেই পারেনি।
পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট সপরিবারে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিয়োগান্ত ঘটনা তুলে ধরতে গিয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, স্বজন হারানোর বেদনা নিয়ে ছয় বছর পর দেশে ফেরার পর আমার একটাই প্রত্যয় ছিল– আমি এ দেশের মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন করব। তাদের মুখে হাসি ফোটাব; উন্নত জীবন দেব। দেশের মানুষের প্রতি আমি কৃতজ্ঞ, তারা ভোট দিয়ে ক্ষমতায় এনেছে বলেই আজ দেশকে উন্নত ও সমৃদ্ধ করতে পেরেছি। আমার বাবা-ভাই কেউ নেই; আছে বাংলাদেশের জনগণ। তারাই আমার একমাত্র ভরসা। তাদের জন্যই আমার কাজ।
দেশ ও মানুষের কল্যাণে টানা তিন মেয়াদে তাঁর সরকারের গৃহীত পদক্ষেপগুলো তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ অসাম্প্রদায়িক চেতনা নিয়ে দেশকে গড়ে তুলতে চায়। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় এই বাংলাদেশ গড়ে উঠবে। জাতির পিতার বাংলাদেশে একজন মানুষও গৃহহীন ও ভূমিহীন থাকবে না। বাংলাদেশ আজ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছে। সার্বিকভাবে উন্নয়নের ফলে বাংলাদেশ আজ বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল।
করোনা সংকট ও ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের প্রভাবে সৃষ্ট বিশ্বমন্দা ও অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলায় দেশবাসীকে সাশ্রয়ী হওয়ার পাশাপাশি খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধির আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করেন প্রধানমন্ত্রী। একই সঙ্গে দেশের মানুষকে বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী হওয়ার আহ্বানও জানান তিনি।
ফরিদপুরের উন্নয়নে গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জানি, ফরিদপুর অনেক অবহেলিত জেলা। এই জেলায় কোনো বিশ্ববিদ্যালয় নেই। ফরিদপুরের মানুষের আশা– এখানে একটি বিশ্ববিদ্যালয় হবে। আগামীবার ক্ষমতায় আসতে পারলে ইনশাআল্লাহ ফরিদপুরে একটি বিশ্ববিদ্যালয় করে দেব। এ ছাড়া ফরিদপুরের প্রতিটি উপজেলায় কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্থাপন ও কর্মসংস্থান বৃদ্ধির প্রতিশ্রুতি দেন তিনি।
ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি শামীম হকের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক শাহ মোহাম্মদ ইশতিয়াক আরিফের সঞ্চালনায় জনসভায় আরও বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফরউল্লাহ, কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক, লে. কর্নেল (অব.) ফারুক খান, শাজাহান খান, অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক, আবদুর রহমান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল-আলম হানিফ, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, পানিসম্পদ উপমন্ত্রী এ কে এম এনামুল হক শামীম, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বি এম মোজাম্মেল হক, এস এম কামাল হোসেন, মির্জা আজম, কেন্দ্রীয় নেতা সৈয়দ আবদুল আউয়াল শামীম, অ্যাডভোকেট তারানা হালিম, আনোয়ার হোসেন, সাহাবুদ্দিন ফরাজী, ইকবাল হোসেন অপু, মারুফা আক্তার পপি, যুবলীগ চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ, স্থানীয় সংসদ সদস্য মজিবুর রহমান চৌধুরী নিক্সন এবং স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী-ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের নেতারা।