স্বামীর বাড়ি থেকে রহস্যজনকভাবে নিখোঁজ হয়েছিলেন গৃহবধূ হোসনা বেগম। হদিস মিলছিল না তার। অবশেষে তার খোঁজ মিলেছে। ৫১ দিন পর মঙ্গলবার স্বামীর বাড়ির পাশে একটি ধানক্ষেতের মাটি খুঁড়ে তার লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। হত্যার পর কালো কাপড়ে মুড়িয়ে লাশ সেখানে পুঁতে রাখা হয়েছিল। স্বামীর দেওয়া তথ্য অনুযায়ী পুলিশ লাশ উদ্ধারের পর  বুধবার ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠায়।

রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার বালুয়া মাসিমপুর ইউনিয়নের বুজরুক সন্তোষপুর আকন্দপাড়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটেছে। নিহত হোসনা বেগম (২০) বদরগঞ্জ উপজেলার গোপীনাথপুর ইউনিয়নের হাসমত আলীর মেয়ে।

থানা পুলিশ ও অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, প্রায় দেড় বছর আগে মিঠাপুকুর উপজেলার বালুয়া মাসিমপুর ইউনিয়নের বুজরুক সন্তোষপুর আকন্দপাড়া গ্রামের আকমল হোসেনের ছেলে আনারুলের সঙ্গে বিয়ে হয় হোসনা বেগমের। বিয়ের কিছুদিন পর থেকেই কারণে-অকারণে স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির লোকজন হোসনার ওপর নির্যাতন করতে থাকে। ছয় মাস আগে হোসনা অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়েন। এ অবস্থায় দুই মাস আগে তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে আবারও তাকে বেধড়ক মারধর করেন স্বামী। এতে হোসনার গর্ভের সন্তান নষ্ট হয়ে যায়। ২৬ আগস্ট বদরগঞ্জ থেকে মেয়ের বাড়িতে যান হোসনার বাবা হাসমত আলী। গিয়ে বাড়ি তালাবদ্ধ দেখতে পান। মেয়ে জামাইয়ের ফোনও বন্ধ পান। পরে পাশের বাড়িতে জামাইয়ের মা আইরিন বেগমের খোঁজ মেলে। তখন তিনি জানতে চান, তার মেয়ে কোথায়। এর সন্তোষজনক কোনো উত্তর দিতে পারেননি আইরিন বেগম। এরপর আশপাশে খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন কয়েকদিন আগে হোসনাকে বেদম মারধর করা হয়। এতে তিনি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। তারপর থেকে আর তার দেখা পাওয়া যায়নি।

হাসমত আলীর ধারণা ছিল, মেয়েকে হত্যা করে ঘরের ভেতরে অথবা অন্য কোথাও পুঁতে রাখা হয়েছে। মেয়ের সন্ধান পেতে তিনি ওই এলাকার ইউপি সদস্য সাজু মিয়ার মাধ্যমে সালিশ ডাকেন। সালিশে আনারুল ও তার মা আইরিন বেগম হাজির হননি। পরে ২৮ আগস্ট মিঠাপুকুর থানায় জামাই আনারুল হক ও তার মা আইরিন বেগমের নামে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন হাসমত আলী।

হাসমত আলী বলেন, 'মেয়ের সুখের জন্য বিয়েতে প্রায় ৮০ হাজার টাকা যৌতুক দিই। বিয়ের পর থেকে আনারুল কথায় কথায় মেয়ের ওপর অত্যাচার-নির্যাতন করত। ভয়ে সে স্বামীর বাড়ি যেতে চাইত না। এখন মাটিচাপা মেয়ের লাশ পেলাম। ঘাতক জামাই ও তার মায়ের ফাঁসি চাই।'

মিঠাপুকুর থানার উপপরিদর্শক তদন্তকারী কর্মকর্তা আজাদ মিয়া বলেন, ঘাতক আনারুল এতদিন পলাতক ছিল। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে পাশের নবাবগঞ্জ উপজেলায় আত্মীয়ের বাড়ি থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী গৃহবধূর লাশ উদ্ধার করা হয়।