- সারাদেশ
- মাঠ দখল, ইউএনওর সিদ্ধান্তে হতাশ তাহিরপুরের গারোরা
মাঠ দখল, ইউএনওর সিদ্ধান্তে হতাশ তাহিরপুরের গারোরা

মাঠ রক্ষায় সালিশে গারো নেতারা- সমকাল
সুনামগঞ্জের তাহিরপুর সীমান্তের বড়গোপটিলা গারো মাঠ দখলের সমাধান করতে গিয়ে বৃহস্পতিবার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) একতরফা সিদ্ধান্ত দিয়ে এসেছেন বলে মনে করছে স্থানীয় গারো সম্প্রদায়। সালিশে তিনি নতুন বসতি স্থাপনকারী বাসিন্দাদের সঙ্গে সমঝোতার ভিত্তিতে আদিবাসীদের মাঠ ব্যবহার করার নির্দেশনা দিয়েছিলেন।
এর আগে ইউএনওকে মাঠটি গারোদের ফিরিয়ে দেওয়ার উদ্যোগ নিতে বলেন সুনামগঞ্জ-১ আসনের সংসদ সদস্য মোয়াজ্জেম হোসেন রতন ও জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আহাদ। কিন্তু ইউএনওর নির্দেশনায় তাদের আহ্বানের প্রতিফলন ঘটেনি জানিয়ে গারোরা তা প্রত্যাখ্যান করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে সুবিচার চেয়েছেন।
তাহিরপুর উপজেলার কড়ইগড়া সীমান্তের আদিবাসীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বড়গোপটিলায় সদ্য বসতি স্থাপনকারীরা সম্প্রতি আগে থেকেই বসবাসকারী গারোদের মাঠে খেলাধুলা ও সংস্কৃতিচর্চার ক্ষেত্রে বাধা দিচ্ছে। অথচ ১৯৪৮ সালে জঙ্গল কেটে মাঠ প্রতিষ্ঠার পর থেকে এখানেই খেলাধুলা থেকে শুরু করে আদিবাসী দিবসসহ নানা কর্মসূচি পালন করে আসছিলেন কড়ইগড়া, চানপুর, রাজাইরসহ সীমান্তের কয়েকটি গ্রামের আদিবাসীরা।
নতুন বসতি স্থাপনকারীরা এতদিন গারোদের মাঠ পরিচালনার নির্দেশনা মেনেই এটি ব্যবহার করেছেন। কিন্তু তিন মাস ধরে হঠাৎ দফায় দফায় মাঠটি দখলের চেষ্টা চালায় বড়গোপটিলার কিছু যুবক। গারোদের লক্ষ্য করে তারা নানা সাম্প্রদায়িক উস্কানিমূলক কথাবার্তা এবং হুমকিও দেয়। এ নিয়ে ১৩ সেপ্টেম্বর বড়গোপটিলা গারো মাঠে সালিশ বসে। বৈঠকে সালিশকারীরা মাঠ প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে গারোদের মুখ্য ভূমিকা স্বীকার করে নিলেও সেটিতে কর্তৃত্বের বিষয়টি নিষ্পত্তি করতে পারেননি।
এ অবস্থায় জেলা প্রশাসকের নির্দেশে বৃহস্পতিবার দুপুরে সেখানে যান তাহিরপুরের ইউএনও পদ্মাসন সিংহ। তিনি গারোদের তৈরি মাঠ দখলকারীদের সঙ্গে মিলেমিশে স্থানীয় ক্ষুদ্র নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠীকে মিলেমিশে মাঠ ব্যবহারের নির্দেশনা দিয়ে চলে আসেন। এ সিদ্ধান্তে উপস্থিত গারো সম্প্রদায়ের লোকজন এবং স্থানীয় নেতাকর্মীরা ক্ষুব্ধ হন। গারোরা মনে করছেন, এতে তাদের তৈরি মাঠ ব্যবহার করতে গেলে নতুন বসতি স্থাপনকারীদের সঙ্গে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটতে পারে।
মাঠ পরিচালনাকারী সুনীল দাজেল বলেন, 'আমরা ইউএনওর কাছে সুবিচার চেয়েছিলাম। তিনি একতরফা ও অদূরদর্শী সিদ্ধান্ত দিয়ে গেছেন। এতে আমরা মাঠের অধিকার হারাব। তাই এই সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করেছি। আমরা জেলা প্রশাসকের সঙ্গে দেখা করে এ বিষয়ে কথা বলব। তিনি বলেন, প্রায় ৭২ বছর ধরে আমরা মাঠ ব্যবহার করছি। খেলাধুলা ও উৎসবে আমাদের সঙ্গে বাঙালিরা অংশ নেয়। আগে কখনও আমরা আক্রমণের শিকার হইনি।
সালিশে উপস্থিত ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মোতালেব বলেন, ইউএনওর সিদ্ধান্ত মানেননি গারোরা। তাদের আশঙ্কা, এতে সমাধানের বদলে আরও সংঘাত হতে পারে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পদ্মাসন সিংহ বলেন, দু'পক্ষকে মিলেমিশে খেলাধুলা করতে বলেছি। বিশৃঙ্খলা এড়াতে একটি কমিটিও করে দেব। জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আহাদ বলেন, আমি ইউএনওকে সরেজমিন গিয়ে বিষয়টি নিষ্পত্তি করে দিতে বলেছি। তবে তিনি কী সিদ্ধান্ত দিয়ে এসেছেন, তা এখনও জানতে পারিনি।
মন্তব্য করুন