‘আমার গর্ভের সন্তানের পরিচয় কী হবে? আমার এখন কী হবে? আমি দিন আনি দিন খায়। স্বামীকে হারলাম তিন থেকে চার বছর আগে। এখন দুই সন্তান নিয়ে দু’বেলা ভাত খেতে খুবই কষ্ট হয়। আবু নামে লোকটি গত চৈত্র মাসে আমার জীবনের সর্বনাশ করেছে। তার সন্তান আমার গর্ভে এখন। আমি এখন দিশেহারা। গ্রামের মাতব্বরা সামজিক সালিশ ডেকে আবুর কাছ থেকে আমার চিকিৎসার জন্য শ্বশুরের হাতে ১৫ হাজার টাকা তুলে দিয়েছে! আমি টাকা পয়সা চাই না। আমি আমার গর্ভের সন্তানের পিতৃ পরিচয় চাই। আমি ন্যায় বিচার চাই।’

এভাবেই আর্তনাদ করছিলেন নেত্রকোণার কলমাকান্দায় ধর্ষণের শিকার হয়ে অন্তঃস্বত্ত্বা হয়ে পড়া এক বিধবা নারী। তিনি দুই সন্তানের জননী।

এ ঘটনায় বুধবার ওই নারী নিজেই বাদী হয়ে কলমাকান্দা থানায় ধর্ষণ মামলা দায়ের করেছেন। অভিযুক্তের নাম দীন ইসলাম আবু (৪৫)। তিনি উপজেলার পোগলা ইউনিয়নের মনকান্দিয়া গ্রামের মো. তারা মিয়ার ছেলে। তিনি বিবাহিত ও ৪ কন্যা সন্তানের জনক। আবু পেশায় কাঠমিস্ত্রী।

পুলিশ ও মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, বেশ কিছুদিন আগে থেকে অভিযুক্ত দীন ইসলাম আবু সন্তানদের খাবার, অর্থ ও পোশাকের প্রলোভন দেখিয়ে বিধবার ভাঙা টিনের ছাপড়া ঘরে গিয়ে তাকে ধর্ষণ করেন। এরপরও বিভিন্ন সময় দীন ইসলাম আবু ওই নারীকে ধর্ষণ করেন। বর্তমানে ওই নারী প্রায় ছয় মাসের অন্তঃস্বত্ত্বা। এরপর বিষয়টি জানাজানি হলে দীন ইসলাম আবুর পক্ষ নিয়ে ঘটনা ধামাচাপা দিতে তৎপর হয়ে ওঠে স্থানীয় প্রভাবশালী একটি পক্ষ। পরে তারা সালিশ ডেকে সাদা স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর রেখে ওই নারীর চিকিৎসার জন্য তার শ্বশুরের হাতে ১৫ হাজার টাকা তুলে দেন। কিন্তু বিষয়টি মানতে না পেরে ন্যায় বিচারের আশায় বুধবার সকালে ওই নারী নিজেই বাদি হয়ে কলমাকান্দা থানায় মামলা দায়ের করেছেন। মামলার পর অভিযুক্ত দীন ইসলাম আবু গাঢাকা দিয়ে়ছেন।

এবিষয়ে অভিযুক্ত দীন ইসলাম আবুর মোবাইলে একাধিকবার ফোন করা হলে রিসিভ করেও তিনি কথা বলেননি।

বড়খাঁপন ইউপির চেয়ারম্যান একেএম হাদিছুজ্জামান হাদিছ বলেন, এক বিধবা নারী (৩৫) ধর্ষণের শিকার হয়ে ছয় মাসের অন্তঃস্বত্ত্বা হয়েছে বলে আমি শুনেছি। ওই বিধবা নারী এলজিইডির আরএমপির সড়কের রক্ষণাবেক্ষণ কাজ করেন। 

এ বিষয়ে কলমাকান্দা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মাজহারুল করিম জানান, ধর্ষণ সামজিক সালিশ অযোগ্য অপরাধ। এ ঘটনায় ইতোমধ্যেই মামলা নথিভুক্ত করা হয়েছে। ওই নারীকে পুলিশ হেফাজতে বুধবার বিকালে নেত্রকোণা আধুনিক সদর হাসাপাতালে পাঠানো হয়েছে। ধর্ষণে অভিযুক্ত দীন ইসলাম আবুকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।