গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলার কিশোরী কমলা আক্তারের সফলতা দেখে পরিবার ও গ্রামের সবাই অবাক। করোনাকালে স্কুল-কলেজ সব বন্ধ থাকলেও এই শিক্ষার্থী সময়টাকে কাজে লাগিয়ে বাড়ির পাশের পতিত জায়গায় গড়ে তোলেন পেঁপে বাগান। পেঁপে বাগান করে সে এখন কিশোরী উদ্যোক্তা।

তের বছর বয়সী কমলা আক্তার উপজেলার মধ্য উড়িয়া গ্রামের আব্দুল কুদ্দুসের মেয়ে। স্থানীয় একটি স্কুলের সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী সে। চার ভাইবোনসহ তাদের পরিবারে সদস্য সংখ্যা ছয়জন। গত মধ্য মার্চে কভিড-১৯ পরিস্থিতিতে স্কুল বন্ধ হয়ে গেলে কমলার সময় কাটে বাড়িতে পড়াশোনা আর স্থানীয় একটি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার বাস্তবায়নে গড়ে ওঠা কিশোরীদের বিনোদন ও শেখার কেন্দ্র মধ্য উড়িয়া সংলাপ সেন্টারে। প্রতিদিন এখানে এসে গ্রামের অন্য সমবয়সী কিশোরীদের সঙ্গে শিক্ষণীয় আড্ডায় সময় পার করে সে। এ সেন্টার থেকেই কমলা ধারণা পায় পড়ালেখার পাশাপাশি কীভাবে পরিবারকে আয়মূখী কাজে সহযোগিতা করা যায়। সংলাপ সেন্টার থেকে শিক্ষা নিয়ে বাড়ির আঙিনায় চারটি পেঁপের গাছ রোপণ করে সে। স্থানীয় কমিউনিটি সার্ভিস প্রোভাইডার-কৃষি সেবাদানকারীদের একজনের কাছ থেকে কীভাবে অধিক ফলন পাওয়া যায় সে বিষয়ে পরামর্শ নেয়। সেবা ও নিয়মিত পরিচর্যায় পেঁপে গাছে বেশ ভালো ফলনও পায় কমলা। তার এমন উদ্যোগে বেশ খুশি পরিবারের অন্য সদস্যরাও। এ ছাড়া করোনা সংকটকালে তার ক্ষুদ্র উদ্যোগে অর্থ উপার্জন বেশ সাড়া ফেলেছে সহপাঠীদের মধ্যেও।

কমলা জানায়, বন্যা ও করোনার মধ্যে পরিবারের চাহিদা মিটিয়ে এরই মধ্যে সে তার উৎপাদিত ৩২০ কেজি পেঁপে বাজারে বিক্রি করেছে। এতে তার আট হাজার টাকা আয় হয়েছে। এতে তার পরিবারের আর্থিক সংকট কমেছে। এখনও তার গাছে যে পরিমাণ পেঁপে আছে, তাতে আরও ১০ হাজার টাকার পেঁপে বিক্রি করতে পারবে আশা করছে কমলা।

কমলার বাবা আব্দুল কুদ্দুস জানান, মেয়ের এমন উদ্যোগ আমাদের চোখ খুলে দিয়েছে। বাড়ির পাশে পড়ে থাকা জমি কাজে লাগিয়ে অর্থ উপার্জন করা যায় তা কমলার কাছ থেকেই শিখলাম।

কিশোরীদের জীবনমান উন্নয়নে স্থানীয় বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা গণ-উন্নয়ন কেন্দ্র (জিইউকে) বেশ কয়েকটি কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। এসব কর্মসূচির মাধ্যমে প্রত্যন্ত অঞ্চলের কিশোরীরা উপকৃত হচ্ছে। ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে বিশেষ করে নারীসমাজকে সঠিকভাবে গড়ে তুলতে এবং পারিবারিক বৈষম্যের শিকার কিশোরীদের সমাজের উন্নয়নের মূলধারায় অন্তর্ভুক্ত করতে জেলার বেশ কয়েকটি স্থানে গড়ে তুলেছে কিশোরীদের বিনোদন ও শেখার কেন্দ্র 'সংলাপ সেন্টার'। সিডস প্রকল্পের আওতায় জিইউকের বাস্তবায়নে এসব সংলাপ সেন্টার পরিচালিত হচ্ছে।