বাজারে ছানা বিক্রি করে যা আয় হয় তা দিয়েই চলে তাদের সংসার। নুন আনতে যাদের পান্তা ফুরায় সেই পরিবার থেকে লেখাপড়া করে স্কাউটসের প্রেসিডেন্ট এওয়ার্ডের জন্য মনোনীত হয়েছে সেই পরিবারের মোস্তাফিজ। পুরো জেলায় ৫ জনের মধ্যে সে একজন। জুড়ী উপজেলার জায়ফর নগর গ্রামের ছানা বিক্রেতা মতছিন আলীর ছেলে মোস্তাফিজুর রহমান। তার বাবা প্রতিদিন বিকেলে মানিকসিংহ বাজারে ছানা বিক্রি করেন। স্কুল ছুটির পর বাবার দোকানে ছানা পৌঁছে দিয়ে সহযোগিতা করে মোস্তাফিজ। 

কোনো দিন রাত ৭-৮টার পর বাড়ি গিয়ে পড়ালেখা করে সে। অদম্য এই মেধাবী জেএসসি ও এসএসসিতে জিপিএ ৫ পেয়েছে। বাড়ির পাশে জায়ফর নগর উচ্চ বিদ্যালয়ে ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি হওয়ার পর বিদ্যালয়ের স্কাউটস শিক্ষক উস্তার আলীর অনুপ্রেরণায় স্কাউটস শুরু করে সে। এরপর মেধা, প্রজ্ঞায় উপজেলা সমাবেশে কৃতিত্বের সঙ্গে উত্তীর্ণ হয়ে জেলা সমাবেশে যোগ দেয়। তারপর সেখান থেকে উত্তীর্ণ হয়ে জাতীয় পর্যায়ে স্কাউটস জাম্বুরিতে যোগদান করে সফলতা অর্জন করে। স্কাউটসের সর্বোচ্চ পদক 'প্রেসিডেন্ট অ্যাওয়ার্ড' ঘোষণা করলে জুড়ীর ৪ জনের মধ্যে মোস্তাফিজ নির্বাচিত হয়। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে পরিবার, বিদ্যালয়সহ সব জায়গায় বইছে আনন্দের বন্যা।

বর্তমানে তৈয়বুন্নেছা খানম সরকারি কলেজের একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী মোস্তাফিজ সমকালকে জানায়, তার বাবার আর্থিক অভাব থাকলেও উঁচু মনের কোনো অভাব নেই। বাবাকে সহযোগিতা করে পড়ালেখা করে সে। কিন্তু প্রায়ই তার বাবা তাকে দোকানে আসতে দিতেন না। কারণ, দোকানে এলে যদি তার লেখাপড়ায় বিঘ্ন ঘটে।

জায়ফরনগর উচ্চবিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সদস্য আব্দুল আহাদ বলেন, মোস্তাফিজ আমার পাশের বাড়ির ছেলে এবং তার বাবাও আমার দোকানের পাশে প্রতিদিন বিকেলে ছানা বিক্রি করেন। তার এ অর্জনে আমাদের স্কুল এবং এলাকা গৌরবান্বিত হয়েছে।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রতীশ চন্দ্র দাস বলেন, মোস্তাফিজ অনেক মেধাবী ছাত্র। এত অভাব-অনটনের মধ্যেও লেখাপড়ায় তার আগ্রহের কোনো কমতি নেই। স্কুল থেকে তাকে সব ধরনের সহযোগিতা করা হয়েছিল।