
সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের (এসএমপি) কোতোয়ালি থানার আওতাধীন বন্দরবাজার ফাঁড়ির ইনচার্জ বরখাস্ত হওয়া এসআই আকবর হোসেন ভূঁইয়া কোথায়- এমন প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে হত্যাকাণ্ডের দু'দিন পর থেকে। ১১ অক্টোবর পুলিশ ফাঁড়িতে যুবক রায়হান আহমদকে নির্যাতন করে হত্যার ঘটনার পর ১৩ অক্টোবর থেকে তিনি গা-ঢাকা দেন। শুরুতে এসএমপির পক্ষ থেকে আকবর পুলিশ লাইনে আছেন বলে অফিসিয়ালি দাবি করা হলেও এখন সংশ্নিষ্টরা সেই দাবিতে নমনীয়। আকবর দেশে আছেন, নাকি বিদেশে পালিয়ে গেছেন এমন বিষয়ে এসএমপির গণমাধ্যম কর্মকর্তা অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার আশরাফ উল্ল্যাহ তাহের সমকালকে জানান, পুলিশ তাকে অবশ্যই ধরবে। কেউ পালিয়ে থাকতে পারবে না। মামলার তদন্তকারী সংস্থা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন-পিবিআইর তদন্ত কর্মকর্তা মাহিদুল ইসলাম সমকালকে বলেন, আকবর বিদেশ পালিয়েছেন এমন তথ্য আমাদের কাছে নেই। তবে মামলার তদন্ত চলছে। বিভিন্নজনের সাক্ষ্য নেওয়া হচ্ছে। তদন্ত শেষ হলে যাদের জড়িত থাকার প্রমাণ মিলবে তাদেরই গ্রেপ্তার করা হবে।
ইতোমধ্যে এসআই আকবরকে গ্রেপ্তারে ইমিগ্রেশনে চিঠি দিয়েছে পিবিআই। তার সন্ধান না পাওয়ায় সিলেটের সবক'টি সীমান্তেও নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। সর্বশেষ শনিবার দিনাজপুরের হিলি সীমান্ত দিয়ে আকবর যাতে ভারতে পালাতে না পারেন সেজন্য বাড়তি সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। জয়পুরহাট-২০ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল ফেরদৌস হাসান টিটো গণমাধ্যমকে এমন তথ্য জানিয়েছেন। ইতোমধ্যে আকবরের গ্রামের বাড়ি আশুগঞ্জের বড়তলায় অভিযান চালানো হয়। তাকে সেখানে মেলেনি। তবে আকবর দেশে, নাকি বিদেশে পালিয়েছেন নিশ্চিত করে কেউ বলতে পারছেন না। তিনি যে এসএমপিতে নেই সে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন পুলিশের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা। গত ক'দিন ধরে আকবরের সন্ধান না পাওয়ায় নানা কথা হচ্ছে। হচ্ছে সমালোচনা। আকবর সিলেটের সীমান্তবর্তী ভারতের মেঘালয়ে আছেন বলে জনশ্রুতি রয়েছে। ১৩ অক্টোবর রাত থেকে গা-ঢাকা দেওয়ার পর তিনি মেঘালয়ে পাড়ি জমান বলে অনেকে ধারণা করছেন। অবশ্য পুলিশ এ তথ্যটি মানতে নারাজ। আকবর গা-ঢাকা দেওয়ার আগে পুলিশ ফাঁড়ির কিছু আলামতও নষ্ট করে যান। ফাঁড়ি লাগোয়া জেলা পুলিশ সুপার কার্যালয়ের ফটকের সিসিটিভি ফুটেজ থেকে বাঁচতে পারেননি আকবর ও তার সহকর্মীরা। ওই ফুটেজে ঘটনার দিন রাতে রায়হানকে নিয়ে ফাঁড়িতে প্রবেশের দৃশ্য রয়েছে।
পুলিশ হেফাজতে ১১ অক্টোবর নগরীর আখালিয়া এলাকার যুবক রায়হান আহমদ মারা যাওয়ার ঘটনায় এসএমপির এসআই আকবরসহ ৪ জনকে সাময়িক বহিস্কার ও ৩ জনকে প্রত্যাহার করা হয়। আকবর ছাড়া অন্যরা পুলিশ লাইনে রয়েছেন। বরখাস্তদের মধ্যে রয়েছেন কনস্টেবল হারুনুর রশিদ, তৌহিদ ও টিটু দাস। প্রত্যাহার হওয়া তিনজন হলেন- এএসআই আশেক এলাহী, এএসআই কুতুব আলী ও কনস্টেবল সজিব হোসেন। ঘটনার দিন ভোররাতে রায়হানকে কাষ্ঠঘর থেকে কনস্টেবল তৌহিদ মিয়া ও হারুনুর রশিদ আটক করে নিয়ে আসেন বলে অভিযুক্তরা তদন্ত টিমের কাছে দাবি করেন। এএসআই আশিক এলাহী ওইদিন তাদের সঙ্গে ছিলেন। প্রথমে তাকে ছিনতাইকারী হিসেবে গণপিটুনিতে মারা গেছেন বলে প্রচার করা হয়। ওইদিন বিকেলেই পরিবারের সদস্যদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে পাল্টে যায় ঘটনার দৃশ্যপট। পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পেয়ে বিষয়টি আমলে নেয় এসএমপি। গঠন করে তদন্ত কমিটি। তদন্ত কমিটির সঙ্গে কথা বলার পরই গা-ঢাকা দেন এসআই আকবর। মামলা তদন্তে অগ্রগতিতে জড়িতদের প্রমাণ পাওয়া গেলে পুলিশ লাইনে থাকা অভিযুক্ত বাকি পুলিশ সদস্যরা গ্রেপ্তার হতে পারেন। পিবিআই সিলেটের পুলিশ সুপার মো. খালেদুজ্জামান জানান, তদন্তকালে যাদের নাম পাওয়া যাবে তাদের সবাইকে আইনের আওতায় আনা হবে।
রায়হান হত্যায় বিচার বিভাগীয় তদন্ত দাবি করে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সিলেটের সভাপতি ফারুক মাহমুদ চৌধুরী বলেন, জড়িতদের দ্রুত গ্রেপ্তান না করলে সিলেটে আন্দোলন থামবে না। তিনি বলেন, পুলিশ হেফাজত থেকে কীভাবে আরেক পুলিশ কর্মকর্তা পালিয়ে যান? এখানে দায় কার। এসআই আকবর দেশে থাকেন বা বিদেশে পালিয়ে যান তাকে খুঁজে বের করা পুলিশের কাজ।
মন্তব্য করুন