১১ বছর আগে ফেনীর সোনাগাজী উপজেলার মতিগঞ্জ ইউনিয়নের ভাদাদিয়া গ্রামে গৃহবধূ বিবি আয়েশার গলায় নাইলনের রশি পেঁচানো লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। ওই ঘটনায় দায়ের করা হত্যা মামলায় বিবাদীদের পক্ষে সাক্ষী ছিলেন স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা গোলাম সরোয়ার। পরে তাকেই আয়েশা হত্যার মামলায় জড়িয়ে আসামি করা হয় বলে অভিযোগ উঠেছে। গত মঙ্গলবার জেলার জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আদালতে হাজির হয়ে জামিন আবেদন করলে সরোয়ারকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন বিচারক শরাফ উদ্দিন আহমদ। আত্মসমর্পণের আগে গোলাম সরোয়ার সাংবাদিকদের বলেন, মামলার বাদী তার বাবাকে খুনের দায় থেকে রক্ষা করতে আমাকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়েছে।

সোনাগাজী থানা ও আদালত সূত্রে জানা গেছে, ২০০৯ সালে বিবি আয়েশাকে হত্যার অভিযোগ এনে তার মেয়ে হাজেরা আক্তার লাইলি সোনাগাজী থানায় অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিদের আসামি করে মামলা করেন। 

অভিযোগে তিনি উল্লেখ করেন, ঘটনার রাতে গত ২০০৯ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি তার মা বিবি আয়েশা তাদের বসতঘরে ঘুমিয়ে ছিলেন। রাতে তার বাবা জামাল উদ্দিনকে ঘরের সামনে উঠানে রাখা পাকা বাড়ি বানানোর নির্মাণ সামগ্রী পাহারা দিতে দেখে তিনি ঘরের অন্য কক্ষে দুই ভাইকে নিয়ে ঘুমিয়ে পড়েন। ভোরে ঘুম থেকে উঠে ওই কক্ষে গিয়ে দেখেন গলায় নাইলনের রশি পেঁচানো মায়ের নিথর দেহ পড়ে আছে।

ওই ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলার তদন্ত হলেও বাদী লাইলি তার মাকে হত্যা করা হয়নি উল্লেখ করে আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেওয়ার আবেদন করেন। তার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে মামলার তৃতীয় তদন্ত কর্মকর্তা আব্দুল ওয়াহাব আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেন। পরে বাদী আবার এর বিরুদ্ধে নারাজি দিলে আদালত মামলাটি সিআইডিকে তদন্তের আদেশ দেন। তদন্তকালে গোলাম সরোয়ারসহ অন্য সাক্ষীদের সাক্ষ্যের ভিত্তিতে সিআইডি পরিদর্শক এনামুল হক গ্রেপ্তারকৃত আসামি আব্দুল খালেক, আব্দুল কাদের, শাহ আলম ও আজিমা আক্তারকে অব্যাহতি দিয়ে বাদীর বাবা ও নিহতের স্বামী জামাল উদ্দিনকে হত্যাকাণ্ডের জন্য দায়ী করে অভিযোগপত্র দেন। বাদী লাইলি এই অভিযোগপত্রের বিরুদ্ধে ফের নারাজি দিলে আদালত তা নামঞ্জুর করেন। পরে বাদী জজ আদালতে রিভিশন পিটিশন করলে আদালত মামলাটি অধিকতর তদন্তের জন্য আবারও সিআইডিকে দায়িত্ব দেন। ২০১৭ সালে মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব পান সিআইডির অতিরিক্ত বিশেষ পুলিশ সুপার জালাল উদ্দিন আহমদ। তিনি তদন্ত শেষে সম্প্রতি অভিযুক্ত নিহতের স্বামী জামাল উদ্দিনকে অব্যাহতি দিয়ে সাক্ষী গোলাম সরওয়ার, আসামি শাহ আলম, রিয়াদ, আজিমা আক্তার ও রফিকুল ইসলাম মাস্টারের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেন।

অভিযোগপত্রে তিনি উল্লেখ করেন, মামলার বাদীর বাবা দীর্ঘদিন প্রবাসে ছিলেন। তার পাঠানো টাকায় স্ত্রী বিবি আয়েশা একই বাড়ির খুরশিদ আহম্মদের কাছ থেকে কিছু জমি কেনেন। কিন্তু এ নিয়ে শাহ আলম পরিবারের সঙ্গে তার বিরোধ বাধে। ঘটনার মীমাংসার জন্য বিবি আয়েশা ও তার স্বামী স্থানীয় দুই আওয়ামী লীগ নেতা গোলাম সরোয়ার ও রফিকুল ইসলাম মাস্টারের দ্বারস্থ হন। তারা এর জন্য দুই লাখ টাকা চান। টাকা না দেওয়ায় অন্যদের দিয়ে এ দু'জন বিবি আয়েশাকে খুন করান।