সম্পত্তি লিখে নিয়ে দৃষ্টিহীন মা ছকিনা বেগম (৭০) ও বাবা আব্দুল হাফেজ আকনকে (৮০) বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দিল ছেলে, পুত্রবধূ ও তাদের সন্তান। আহত দু'জনকে স্থানীয়রা উদ্ধার করে হাসপাতালে চিকিৎসা দিয়েছেন। ঘটনাটি ঘটেছে মঙ্গলবার রাতে বরগুনার তালতলী উপজেলার ছোটভাইজোড়া গ্রামে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, আব্দুল হাফেজ আকনের গ্রামে একশ শতাংশ জমি রয়েছে। কিছু জমিতে বাড়িঘর বানিয়ে বসবাস করে আসছ দুই ছেলে। পাঁচ বছর আগে হাফেজের স্ত্রী ছকিনা বেগম চোখের দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে অন্ধ হয়ে যান। এতে স্ত্রীকে নিয়ে বিপাকে পড়েন তিনি। ছেলেরা তাদের মা-বাবার দেখভাল ও ভরণপোষণ দিচ্ছিল না। অভাবের কারণে বড় ছেলে মাহবুবুল হক খোকনের কাছে জমি বিক্রির প্রস্তাব দেন বৃদ্ধ হাফেজ। এমন প্রস্তাবে খোকন মা-বাবাকে ঘরে তুলে নেয়। এক বছর ধরে মা-বাবাকে দেখভাল করার সুবাদে ছেলে বাবাকে জমির দলিল দিতে বলে। কিন্তু বাবা এতে রাজি হননি। এতে ক্ষুব্ধ হয় ছেলে খোকন ও তার স্ত্রী সুফিয়া বেগম। নেমে আসে মা-বাবার ওপর নির্যাতন। তাদের নির্যাতন সইতে না পেরে ৩৬ শতাংশ জমি আব্দুল হাফেজ খোকনকে লিখে দেন। কিন্তু এতে সন্তুষ্ট হয়নি খোকন। অনেক চাপাচাপি করে দুই মাস আগে বাকি জমিও লিখে নেয়। এরপরও তাদের ওপর নির্যাতন থামেনি। মঙ্গলবার রাতে তুচ্ছ ঘটনায় দু'জনকে মেরে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেয় ছেলের বউ ও নাতনি।

কান্নাজড়িত কণ্ঠে আব্দুল হাফেজ বলেন, 'মোর সব জাগাজমি লেইখ্যা নিয়া মোর পোলায়, পোলার বউ ও নাতনি এ্যাকছের মোরে ও মোর অন্ধ বউরে মারে। পোলার বউ ও নাতনি মাইর‌্যা মোগো ঘরে গোনে লড়াইয়্যা (ঘর থেকে তাড়িয়ে) দেছে। মোরা এইয়্যার বিচার চাই।'

এ বিষয়ে মাহবুবুল হক খোকনের স্ত্রী সুফিয়া বেগম শ্বশুর-শাশুড়িকে মারধর ও নির্যাতনের কথা অস্বীকার করে বলে, আমরা জমি লিখে নিইনি। শ্বশুর টাকার বিনিময়ে জমির দলিল দিয়েছেন। তবে মঙ্গলবার আমার শ্বশুর-শাশুড়ির সঙ্গে আমার মেয়ের ঝামেলা হয়েছে। এ বিষয়ে সালিশ-বৈঠকের কথা চলছে।

তালতলী থানার ওসি কামরুজ্জামান মিয়া বলেন, এ বিষয়ে লিখিত কোনো অভিযোগ পাইনি। তবে শুনেছি পারিবারিকভাবে এর মীমাংসার চেষ্টা চলছে। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।