অকার্যকর স্লুইসগেটে জলাবদ্ধতা

মোস্তফা কামাল, কিশোরগঞ্জ
প্রকাশ: ১১ অক্টোবর ২০২৩ | ২১:২৫ | আপডেট: ১১ অক্টোবর ২০২৩ | ২১:২৫
বৃষ্টিতে কিশোরগঞ্জের শত শত মৎস্য খামারসহ ফসলি জমি তলিয়ে যাওয়ার অন্যতম প্রধান কারণ হিসেবে সংশ্লিষ্টরা একটি অকার্যকর স্লুইসগেটকে চিহ্নিত করেছেন। গত সপ্তাহের ভারী বর্ষণে কিশোরগঞ্জ সদর, হোসেনপুর ও পার্শ্ববর্তী ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার কয়েকশ মৎস্য খামার ডুবে গিয়ে কোটি কোটি টাকার মাছ বেরিয়ে যায়।
সদর উপজেলার রশিদাবাদ ইউনিয়নের ব্রাহ্মণকচুরি এলাকার বাড়ইখালী খালের ওপর পানি উন্নয়ন বোর্ড ১৯৯৩ সালে একটি ৬ কপাটের স্লুইসগেট নির্মাণ করেছিল। কিন্তু সেই গেট দিয়ে ধীরগতিতে যে পরিমাণ পানি বের হচ্ছে, তাতে জলাবদ্ধতা নিরসনে কোনো প্রভাবই পড়ছে না। পানির গতি এতটাই ধীর, স্লুইসগেটের মুখে থাকা কচুরিপানাগুলোও নড়ছে না। স্লুইসগেটটির কোনো তদারকি নেই বলেও এলাকাবাসীর অভিযোগ। ফলে জলাবদ্ধতা নিরসনে রশিদাবাদ ইউপি চেয়ারম্যান স্লুইসগেটের পাশে রাস্তা কেটে দিয়ে দ্রুত পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন।
গতকাল বুধবার সরেজমিন স্লুইসগেট এলাকায় গিয়ে কথা হয় রশিদাবাদ ইউপি চেয়ারম্যান জহিরুল ইসলাম জুয়েলের সঙ্গে। তিনি জানিয়েছেন, জলাবদ্ধতার কারণে কেবল রশিদাবাদ ইউনিয়নেই ২০০ হেক্টর খামার ডুবে গেছে। এতে প্রায় ২৫০ জন খামারি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। যে কারণে চাপে পড়ে মঙ্গলবার বিকেলে সদর উপজেলা চেয়ারম্যান মামুন আল মাসুদ খানসহ এলাকাবাসীকে নিয়ে স্লুইসগেটের পাশে রাস্তা কেটে দিয়েছেন। এতে জমে থাকা পানি দ্রুত নেমে যাচ্ছে। তিনি একটি মাত্র স্লুইসগেট এলাকার জন্য যথেষ্ট নয় মন্তব্য করে বলেন, এখানে আরও একাধিক উন্মুক্ত সেতু দরকার।
এদিকে কাটা রাস্তার ওপর একটি বাঁশের সরু সাঁকো নির্মাণ করে দেওয়া হয়েছে। এর ওপর দিয়ে শিক্ষার্থীসহ নারী, শিশু, বৃদ্ধ সবাইকে ঝুঁকি নিয়ে পারাপার হতে হচ্ছে।
রশিদাবাদ ইউনিয়নের বেরুয়াইল এলাকার বড় খামারি মো. শাহজাহান তাঁর ১২০ একরের খামারে ৬২টি পুকুর রয়েছে বলে জানিয়েছেন। সমন্বিত প্রকল্পে মাছের পাশাপাশি লেয়ার মুরগির খামারও রয়েছে। প্রকল্পের জন্য অগ্রণী ব্যাংক থেকে ২২ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছেন। গত বছর মাছ বিক্রি করেছিলেন ১১ কোটি টাকার। এবার ১৫ কোটি টাকার মাছ বিক্রির প্রত্যাশা ছিল। কিন্তু বৃষ্টিতে সব মাছ ভাসিয়ে নিয়ে গেছে। তিনি জলাবদ্ধতার জন্য ব্রাহ্মণকচুরি এলাকার স্লুইসগেটকে দায়ী করেছেন।
সিংরইলের নজরুল ইসলাম জানিয়েছেন, তাঁর এলাকার ৪০ জনের অন্তত ১৫ কোটি টাকার মাছ বেরিয়ে গেছে। আল আমিনের খামার থেকে কোটি টাকার মাছ বেরিয়ে গেছে।
জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মতিউর রহমান জানান, স্লুইসগেটের ছয়টি কপাট বা রেগুলেটরই খোলা রয়েছে এবং পানি যাচ্ছে। তবে জলাবদ্ধতার পরিমাণের তুলনায় স্লুইসগেটটি মোটেও পর্যাপ্ত নয় বলে তিনি স্বীকার করেন। তিনি বলেন, এটি নির্মাণ করা হয় ১৯৯৩ সালের বাস্তবতায়। এখনকার বাস্তবতায় যথেষ্ট মনে হচ্ছে না। বর্তমানের নিরিখে আরও একটি স্লুইসগেট নির্মাণের ব্যাপারে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলবেন।
- বিষয় :
- কিশোরগঞ্জ
- স্লুইসগেট
- অকার্যকর স্লুইসগেট