- সারাদেশ
- রাস্তার ইট বিক্রি করে কাউন্সিলর বললেন ‘টেকা কি হামি একলাই খাই?’
রাস্তার ইট বিক্রি করে কাউন্সিলর বললেন ‘টেকা কি হামি একলাই খাই?’

ইট তুলে ফেলা সড়ক (বায়ে) ও ক্রেতার বাড়িতে স্তুপ করে রাখা ইট -সমকাল
দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট পৌরশহরের রাস্তার ইট তুলে বিক্রির অভিযোগ উঠেছে এক ওয়ার্ড কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে।
জানা গেছে, কয়েকবছর আগে ঘোড়াঘাট পৌর ভবনের ধার ঘেঁষে ঘাটপাড়ায় প্রায় চার মিটার যাতায়াতের রাস্তাটি ইট দিয়ে কার্পেটিং করেছিল পৌরসভা কতৃপক্ষ। পাশাপাশি রাস্তাটির ধার দিয়ে বন্দরের পানি নিষ্কাশনের জন্য ড্রেনও নির্মাণ করা হয়েছিল। পৌরশহরের পানি ওই ড্রেন দিয়ে সরাসরি করতোয়া নদীতে পড়ত। এই রাস্তাটি দিয়ে নিয়মিত প্রায় অর্ধশত পরিবারের যাতায়াত। সম্প্রতি ৪নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর সাহেব আলী কোন ধরণের টেন্ডার বা চুক্তি ছাড়াই শ্রমিকদের মাধ্যমে রাস্তার ইট তুলে বিক্রি করে দেন।
সরে জমিনে দেখা গেছে, রাস্তাটিতে মাটি ফেলছেন শ্রমিকরা। আর রাস্তার ধার ঘেঁষে জলবায়ু ট্রাস্ট ফান্ডের অর্থায়নে আরসিসি ড্রেন তৈরি করছে কয়েকজন নির্মাণ শ্রমিক। ওই রাস্তার পাশে কয়েকটি বাড়ির ভিতরে দেখা যায় ইটের স্তুপ। ইটের বিষয়ে স্থানীয় কয়েকজনকে জিজ্ঞাসা করা হলে তারা জানান, গত এক সপ্তাহ যাবত ইটগুলো রাস্তা থেকে তুলে কাউন্সিলর বিক্রি করে দিয়েছেন। এর মধ্যে ঘাটপাড়া গ্রামের লিটন মিয়ার কাছে সাড়ে ৩ হাজার টাকা দরে ১৮০০ পিস, মঞ্জু বিডিয়ারের কাছে ৪০০০ পিস, জাহানারা বেগমের কাছে ১০০০ পিস, সুলতানা এবং মৌলিদা বেগমের কাছে ২০০০ পিস ইট বিক্রি করা হয়েছে।
ইটের ক্রেতা মঞ্জু মিয়া বলেন, ‘স্বল্প মূল্যে ইট কেনার জন্য আমাকে তারা অফার দিয়েছিল। আমি ৪ হাজার ইট কিনেছি এবং এর দাম কাউন্সিলরকে দিয়েছি। জনপ্রতিনিধিরা মাটির ওপরে ইট বিছায়। আর আমাদের জনপ্রতিনিধি ইট তুলে মাটি ফেলে।’
আরেক ক্রেতা জাহানারা বেগম বলেন, ‘আমি রাস্তা থেকে তোলা এক হাজার ইট কাউন্সিলরের কাছ থেকে কিনে নিয়েছি। সাড়ে তিন হাজার টাকা চেয়েছিল। আমি আমার ভাইরের মাধ্যমে ৩ হাজার টাকা কাউন্সিলরকে দিয়েছি।’
লিটন মিয়া বলেন, ‘আমাকে প্রথমে সবগুলো ইট কেনার জন্য বলেছিল। কিন্তু সরকারি রাস্তার ইট বলে আমি নেইনি। পরে দেখলাম স্থানীয় অনেকে ইটগুলো কাউন্সিলরের কাছে থেকে কিনে নিচ্ছে। পরে আমিও ১৮শ’ ইট কিনেছি।’
এ ব্যাপারে অভিযুক্ত কাউন্সিলর সাহেব আলী প্রথমে বলেন, ‘ওই রাস্তায় কোন ইট ছিল না এবং কারো কাছে বিক্রিও করা হয়নি। রাস্তাটিতে মাটি ফেলা হচ্ছে। রাস্তার পাশে পুরাতন একটি ড্রেন ছিল। এই ড্রেনের ইট ঠিকাদাররা তুলেছে।’
এক পর্যায়ে কাউন্সিলর সাহেব আলী উত্তেজিত হয়ে বলেন, ‘এগলা টেকা কি হামি একলাই খাই? আরও অনেকে আছে! তাদেরও দেওয়া লাগে। প্রথমে যখন ইট তুলে নিয়ে গেছে, তখন হামি নিজেও বাঁধা দিছি। পরে হামার ওপর মহলের লোক ফোন করছে। তারপর হামি ছাড়া দিছি। যখন ইট তুলে বিক্রি করা হছে, তখন তোমরা বাঁধা দেবার পারেননি।’
জানতে চাইলে পৌর মেয়র আব্দুস সাত্তার মিলন বলেন, ওই রাস্তায় কাজের জন্য কোন প্রকার টেন্ডার হয়নি। রাস্তার পাশে পুরাতন একটি ড্রেন ছিল। সেই ড্রেনের ইট স্থানীয় লোকজন বিভিন্ন সময় নিয়ে গেছে। উন্নয়নের জন্য রাস্তাটিতে মাটি ফেলা হচ্ছে।
মন্তব্য করুন