কুষ্টিয়াসহ দেশের কয়েকটি স্থানে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাঙচুর ও অবমাননার প্রতিবাদে কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে নির্মিত হয়েছে 'বঙ্গবন্ধুর বালু ভাস্কর্য'।

বুধবার দুপুর সাড়ে ১২টায় কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতের লাবণী পয়েন্টে স্থাপিত বালুর এই ভাস্কর্যটি উদ্বোধন করেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামাল হোসেন। এটি দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত থাকবে আগামী ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত।

জাতীয় সংগীত পরিবেশনের পর জাতির পিতার জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে ১০০টি কবুতর উড়িয়ে 'বঙ্গবন্ধুর বালু ভাস্কর্যে'র আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়।

জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে এবং স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ব্র্যান্ডিং কক্সবাজারের সার্বিক সহায়তায় ভাস্কর্যটি নির্মিত হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের ভাস্কর্য বিভাগের ১০ শিক্ষার্থী এটি নির্মাণে অংশ নেন। গত ৮ ডিসেম্বর থেকে বুধবার সকাল ৯টা পর্যন্ত দিনে-রাতে পরিশ্রম করে তারা এর নির্মাণকাজ শেষ করেছেন। এটি নির্মাণে ব্যয় হয়েছে প্রায় ৮ লাখ টাকা।

নির্মাণশিল্পীরা জানিয়েছেন, 'বঙ্গবন্ধুর বালু ভাস্কর্য'টি জাতির পিতার সর্বপ্রথম ও সর্ববৃহৎ কোনো বালু ভাস্কর্য। কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতের লাবণী পয়েন্টে নির্মিত হয়েছে ১০ ফুট উচ্চতার একটি ফ্রি-স্ট্যান্ডিং আবক্ষ ভাস্কর্য এবং আরেকটি শোয়ানো অবস্থায় রিলিফ ভাস্কর্য। এগুলো নির্মাণে শিল্পীরা শুধু সৈকতের বালু ও পানি ব্যবহার করেছেন।

ভাস্কর্যটি আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের পর উন্মুক্ত করা হলে সেখানে দর্শনার্থীদের ভিড় ছিল লক্ষণীয়। স্থানীয়দের পাশাপাশি কক্সবাজার সৈকতে ঘুরতে আসা পর্যটকরাও এ ভাস্কর্য দেখতে ভিড় জমান।

উদ্বোধনী বক্তব্যে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামাল হোসেন বলেন, কুষ্টিয়াসহ দেশের কয়েকটি স্থানে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাঙার ঘটনায় প্রতিবাদের ভাষা হিসেবে শিল্পকর্মটি উপস্থাপন করা হচ্ছে। প্রতিবাদের ঢেউ সাগরতীর থেকে সারাদেশে ছড়িয়ে দিতে এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

বাংলাদেশ ও বঙ্গবন্ধু এক অবিচ্ছেদ্য অংশ উল্লেখ করে জেলা প্রশাসক বলেন, কক্সবাজার শহরের কলাতলী এলাকার বঙ্গবন্ধু চত্বরে একটি স্থায়ী ভাস্কর্য নির্মাণের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন।

অভিনব প্রতিবাদ হিসেবে 'বঙ্গবন্ধুর বালু ভাস্কর্য' নির্মাণের উদ্যোক্তা স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ব্র্যান্ডিং কক্সবাজারের সমন্বয়ক ইশতিয়াক আহমেদ জয় বলেন, কুষ্টিয়ায় যখন প্রথমবারের মতো বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাঙার অপচেষ্টা চালানো হয়, তখনই এই আইডিয়া মাথায় আসে।

মূলত উগ্র-মৌলবাদীদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের ভাষা হিসেবে বালু ভাস্কর্যের মতো শিল্পকর্ম উপস্থাপনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে মন্তব্য করেন তিনি। ভাস্কর্য নির্মাণে অংশ নিতে পেরে নিজেকে গর্বিত মনে করছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাস্কর শিক্ষার্থী কামরুল হাসান শিপন।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে কপবাজার সদর আসনের সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমল, পুলিশ সুপার মো. হাসানুজ্জামান, জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অ্যাডভোকেট ফরিদুল ইসলাম, কক্সবাজার পৌর মেয়র মুজিবুর রহমান, মুক্তিযোদ্ধা কামাল হোসেন চৌধুরী, পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নজিবুল ইসলাম ও স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ব্র্যান্ডিং কপবাজারের সমন্বয়ক ইশতিয়াক আহমেদ জয় প্রমুখ বক্তব্য দেন।

বঙ্গবন্ধুর নিজ হাতে সৃজিত ঝাউবাগান সংলগ্ন সৈকতের বালিয়াড়িতে নির্মিত এ ভাস্কর্যের পাশে স্থাপিত মঞ্চে প্রতিদিনই থাকছে নানা অনুষ্ঠানমালা।