যৌতুকের দাবি মেটাতে না পারায় এক যুবক স্ত্রীর শরীর ফুটন্ত পানিতে ঝলসে দিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। ‌গুরুতর আহত ওই গৃহবধূ বর্তমানে সিলেটের এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলজ হাসপাতালের বিছানায় যন্ত্রনায় কাতরাচ্ছেন। 

মৌলভীবাজার সদর উপজেলার আব্দা গ্রামে গত রোববার সকাল ৮টার দিকে এই ঘটনা ঘটে। পরে সোমবার রাতে এ ঘটনায় স্বামী, ভাসুর, জাসহ ৫ জনকে আসামি করে মামলা হয়েছে। মামলার পর দুই নম্বর আসামি ভাসুর সুজিতকে (৫০) পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। 

মামলার এজাহার ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, মৌলভীবাজার সদর উপজেলার মাশকান্দি গ্রামের অবিনাশ দেবের মেয়ে অনামিকা দেবের সঙ্গে একই উপজেলার সনজিত নাগের বিয়ে ২০১৫ সা‌লে পা‌রিবা‌রিকভা‌বে সম্পন্ন হয়। বি‌য়ের পর পাস্পারিক সমঝোতায় অনামিকার বাবার দেওয়া স্বর্ণালঙ্কার বিক্রি করে সনজিত সিএনজিচালিত একটি অটোরিকশা কেনেন। এরপর আরও যৌতুকের দাবিতে সনজিত বি‌ভিন্ন সময় স্ত্রীকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন শুরু করেন। এ নিয়ে একাধিকবার সালিশ বৈঠক হয়েছে। কিছু দিন আগে সালিশ বৈঠকে যৌতুক দাবি ও শারীরিক নির্যাতন করবেন না বলে সনজিত মুচলেকা দিলে বিষয়টির মীমাংসা হয়। এর কিছু দিন যেতে না যেতেই ফের ৫ লাখ টাকা যৌতুক দাবি করেন সনজিত। অনামিকা বাবার বাড়ি থেকে টাকা এনে দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন। এরপর থেকে তার ওপরে নেমে আসে আরও বেশি নির্যাতন। গত রোববার সকালে যৌতুকের টাকা এনে দিতে চাপ দেয় স্বামী। তখন অনামিকা আপত্তি জানালে স্বামী তাকে মারপিট শুরু করেন। এক পর্যায়ে চুলা থেকে ফুটন্ত পানি এনে ঢেলে দিলে অনামিকার পিঠসহ শরীরের বিভিন্ন অংশ ঝলসে যায়। খবর পেয়ে বাবার বাড়ির লোকজন এসে অনামিকাকে মৌলভীবাজার ২৫০ শয্যার হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে তাকে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করেন চিকিৎসক।

মৌলভীবাজার ২৫০ শয্যার হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. আহমেদ ফয়সল জামান জানান, অনামিকার শরীরের ১০ শতাংশ পুড়ে গেছে। তাই প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে উন্নত চিকিৎসার জন্য সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়েছে। 

স্থানীয় কনকপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান রেজাউর রহমান রেজা জানান, স্বামী-স্ত্রীর পারিবারিক বিরোধ ও নির্যাতনের ঘটনা বিভিন্ন সময় সালিশ বৈঠকের মাধ্যমে মীমাংসা করে দিয়েছি। তখন যৌতুক সম্পর্কিত কোন অভিযোগ নির্যাতিত নারী করেননি।

মৌলভীবাজার মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইয়াছিনুল হক জানান, মামলার পর সুজিত নামে এক আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অপর আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।