ঢাকা বৃহস্পতিবার, ০৭ ডিসেম্বর ২০২৩

মুহিব্বুল্লাহ হত্যায় সরাসরি অংশ নেয় সমিউদ্দিন

মুহিব্বুল্লাহ হত্যায় সরাসরি অংশ নেয় সমিউদ্দিন

নুর কামাল ওরফে সমিউদ্দিন (মাঝে)

টেকনাফ (কক্সবাজার) প্রতিনিধি

প্রকাশ: ১৬ অক্টোবর ২০২৩ | ০৯:৫১ | আপডেট: ১৬ অক্টোবর ২০২৩ | ১০:২৪

বহুল আলোচিত রোহিঙ্গা নেতা মুহিবুল্লাহ হত্যায় সরাসরি অংশ নেয় নুর কামাল ওরফে সমিউদ্দিন। রোববার মধ্যরাতে গ্রেপ্তারের পর তাকে জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে সোমবার এ তথ্য জানিয়েছে র‌্যাবের মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক খন্দকার আল মঈন। সমিউদ্দিন মিয়ানমারের সাবের আহমেদের ছেলে। গ্রেপ্তারের সময় তার কাছ থেকে সাতটি দেশি-বিদেশি অস্ত্র ও গুলি উদ্ধার করা হয়। 

র‌্যাবের মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক খন্দকার আল মঈন বলেন, ‌‌‘র‍্যাব-১৫ কক্সবাজারের কুতুপালং এলাকার একটি পাহাড়ে অভিযান চালিয়ে মহিবুল্লাহ হত্যার সমন্বয়কারী ও হত্যাকারী এবং গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তা হত্যাকাণ্ডে সরাসরি অংশগ্রহণকারী আরসার কিলার গ্রুপের প্রধান নুর কামাল প্রকাশ সমিউদ্দিনকে গ্রেপ্তার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে সমিউদ্দিন জানিয়েছে, মুহিবুল্লাহকে হত্যার উদ্দেশ্যে খুব কাছ থেকে সরাসরি গুলি চালান তিনি। তারপর ফাঁকা গুলিবর্ষণ করতে করতে আত্মগোপনে চলে যান। সেখান থেকে পালিয়ে মিয়ানমারের আরসা ঘাঁটিতে দীর্ঘদিন থাকে। সম্প্রতি আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর অভিযানে একের পর এক আরসা কমান্ডার গ্রেপ্তার হওয়ায় কিলিং গ্রুপের প্রধান হিসেবে তাকে আবারও ক্যাম্পে পাঠানো হয়।’ 

সমিউদ্দিন জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমারের নাগরিক। ২০১৬ সালে মিয়ানমারে অবস্থানের সময় আরসার কমান্ডার আব্দুল হালিম, মাস্টার নুরুল বশর ও আবু আনাসের মাধ্যমে আরসায় যোগ দেয় এবং মিয়ানমারে আরসার হয়ে ১ বছর বিভিন্ন প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে। ২০১৭ সালে রোহিঙ্গা শরণার্থী হিসেবে বাংলাদেশে প্রবেশ করে শরণার্থী ক্যাম্প-৭ এ বসবাস শুরু করে।

তিনি বলেন, জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে সমিউদ্দিন আরও জানিয়েছেন ২০১৮ সালে আরসার কমান্ডার মুফতি জিয়াউর রহমানের সঙ্গে সাক্ষাতের মাধ্যমে আবারও আরসার নতুন করে সদস্য সংগ্রহ, লোকবল বৃদ্ধিসহ সাংগঠনিক কার্যক্রম শুরু করেন। ৭ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পের আরসার ব্লক জিম্মাদার, হেড জিম্মাদার এবং সর্বশেষ ক্যাম্প কমান্ডার হিসেবে নেতৃত্ব লাভ করেন। আরসা প্রধান আতাউল্লাহর নির্দেশে আরসার ভয়ংকর ও সক্রিয় সদস্যদের নিয়ে ২০ জনের একটি গান গ্রুপ তৈরি করেন যা ‘কিলার গ্রুপ’ নামে পরিচিত। ওই গ্রুপের প্রধান হিসেবে নিজে দায়িত্ব পালন করতেন। এই গ্রুপটি বিভিন্ন সময় টার্গেট কিলিং সম্পন্ন করার পাশাপাশি তাদের কথামতো কেউ চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানালে ভিকটিমকে অপহরণপূর্বক শারীরিক ও পাশবিক নির্যাতনসহ মুক্তিপণ আদায় করত। 

তিনি আরও জানান, আরসার প্রধান আতাউল্লাহ’র নির্দেশে সমিউদ্দিন ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে রোহিঙ্গা নেতা মাস্টার মহিবুল্লাহ হত্যাকাণ্ডের সমন্বয় ও সরাসরি অংশগ্রহণ করে। সমিউদ্দিনসহ প্রায় ১২ জনের একটি দল দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে মাস্টার মহিবুল্লাহ'র অফিসে প্রবেশ করে মহিবুল্লাহকে গুলি করে হত্যা করে। পরবর্তী তারা সেখান থেকে আত্মগোপনে চলে যায়। এছাড়া ২০২২ সালের নভেম্বরে গোয়েন্দা সংস্থা ও র‍্যাবের মাদকবিরোধী যৌথ অভিযানের সময় সন্ত্রাসীদের হামলায় গোয়েন্দা সংস্থার একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নিহত হন। ওই হামলায় একজন র‍্যাব সদস্য গুরুত্বর আহত হন। হত্যার সঙ্গেও সরাসরি জড়িত সমিউদ্দিন। এছাড়া মাঝি শফিক, জসিম, সেলিম, নুর বশর, সালাম, সলিম, কালা বদ্দা, রহিমুল্লাহ ও খালেদ হত্যাকাণ্ডেও জড়িত। রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আলোচিত ৬ জন হত্যাকাণ্ডসহ বিভিন্ন হত্যায় জড়িত বলে তার স্বীকার করার কথা জানান র‌্যাবের মিডিয়া উইংয়ের এই কর্মকর্তা।

আরও পড়ুন