স্কুলমাঠে আওয়ামী লীগ নেতার গরু-ছাগলের হাট

কান্তনগর সরকারি প্রাথমিক ও উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে সপ্তাহে দু'দিন বসছে পশুর হাট - সমকাল
ধুনট (বগুড়া) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১৬ অক্টোবর ২০২৩ | ১৬:২৬ | আপডেট: ১৬ অক্টোবর ২০২৩ | ১৬:২৬
মাঠে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে অসংখ্য গরু-ছাগল। ক্রেতা-বিক্রেতায় ভরে গেছে মাঠ। পশুর বর্জ্যে মাঠের দফারফা। ব্যাহত হচ্ছে স্বাভাবিক চলাচল। হাট চলাকালে বিদ্যালয়ে ক্লাস পরিচালনার পরিবেশ নেই। এ চিত্র বগুড়ার ধুনটের কান্তনগর সরকারি প্রাথমিক ও উচ্চ বিদ্যালয় মাঠের।
এ মাঠে পশুর হাট বসিয়েছেন আওয়ামী লীগ নেতা জিএম ফিরোজ লিটন ও রেজাউল করিম জোয়ারদার। লিটন কালেরপাড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। রেজাউল একই কমিটির কৃষিবিষয়ক সম্পাদক।
খেলার মাঠে হাটবাজার নিষিদ্ধ ঘোষণা করে সরকার প্রজ্ঞাপণ জারি করলেও খোদ সরকারি কর্মকর্তার মদদে তারা মাঠে হাট বসিয়ে গবাদি পশু কেনাবেচা করছেন বছরের পর বছর ধরে।
কান্তনগর এলাকার শিক্ষানুরাগী ব্যক্তিদের দান করা ১ একর ২১ শতক জমির ওপর ১৯৫৩ সালে বিদ্যালয়টি স্থাপিত হয়। পাশেই প্রতিষ্ঠিত হয়েছে উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়। এ দুটি বিদ্যালয়ের মাঝখানে একটি মাঠ। সপ্তাহে শুক্র ও সোমবার দু’দিন হাট বসে এ মাঠে।
হাটের দিন কোমলমতি শিশুরা খেলাধুলার সুযোগ পায় না। এর ফলে তাদের মানসিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। ক্রেতা-বিক্রেতাদের কোলাহলে পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে। এ ছাড়া গরু-ছাগলের মল-মূত্রের দুর্গন্ধে পরিবেশ দূষিত হয়ে নানা রোগ ছড়াচ্ছে।
কান্তনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রফিকুল ইসলাম বলেন, আওয়ামী লীগের নেতা জিএম ফিরোজ লিটন ও রেজাউল করিম এ মাঠে দীর্ঘদিন ধরে পশুর হাট বসিয়ে ব্যবসা চালিয়ে আসছেন। এ বিষয়টি একাধিকবার উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে লিখিতভাবে জানালেও প্রতিকার মেলেনি।
কান্তনগর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মিজানুর রহমান বলেন, সপ্তাহে দু’দিন খেলার মাঠে হাজার হাজার গরু-ছাগল কেনাবেচা হয়। গবাদি পশুর মল-মূত্রে পুরো ক্যাম্পাস নোংরা হয়ে যায়। দুর্গন্ধে স্কুলে থাকা দুরূহ পড়ে। অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের কারণে শিক্ষক- শিক্ষার্থীরা নানা সংক্রামক রোগে আক্রান্ত হচ্ছে।
তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রী নীতিবালা ঘোষ, রিয়া রানী, সাদিয়া জানায়, দুর্গন্ধে ক্লাসে থাকা যায় না। প্রায়ই অসুস্থ হয়ে পড়ে। অভিভাবক সাধন ঘোষ ও সোলায়মান আলী বলেন, স্কুলমাঠে গরু-ছাগলের হাট বসার কারণে পরিবেশ দূষিত হচ্ছে। দুর্গন্ধের কারণে শিশুরা স্কুলে যেতে চায় না।
হাটের ইজারাদার আওয়ামী লীগ নেতা রেজাউল করিম ও জিএম ফিরোজ লিটন বলেন, সরকারিভাবে জায়গা না থাকায় তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সঞ্জয় কুমার মহন্তের অনুমতি নিয়ে ম্যানেজ করেই স্কুলমাঠে পশুর হাট বসিয়েছি।
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ফজলুর রহমান বলেন, স্কুলমাঠে পশুর হাট বন্ধ করতে উপজেলা সমন্বয় কমিটির সভায় তৎকালীন ইউএনওর সহযোগিতা চেয়েও প্রতিকার মেলেনি। পরে লাখ লাখ টাকা ব্যয়ে নিরাপত্তা প্রাচীর নির্মাণ করা হয়। এরপরও পশুর হাট বন্ধ করা যাচ্ছে না।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আশিক খান বলেন, বেশিদিন হয়নি এ উপজেলায় যোগদান করেছি। খোঁজখবর নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।