ঢাকা সোমবার, ০৯ ডিসেম্বর ২০২৪

বাউল-সাধু আর দর্শনার্থীতে মুখর লালনের আখড়াবাড়ি

বাউল-সাধু আর দর্শনার্থীতে মুখর লালনের আখড়াবাড়ি

তিনদিনের উৎসবে বর্নিল সাজে সেজেছে পুরো আখড়াবাড়ি। ছবি-সমকাল

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি

প্রকাশ: ১৭ অক্টোবর ২০২৩ | ১১:৪৩ | আপডেট: ১৭ অক্টোবর ২০২৩ | ১২:৪৭

ফকির লালনকে স্মরণ, গান ও আলোচনার মাধ্যমে কুষ্টিয়ার ছেঁউড়িয়ায় শুরু হয়েছে তিন দিনের লালন উৎসব। মঙ্গলবার আনুষ্ঠানিকভাবে ১৩৩তম তিরোধান দিবসের উৎসব শুরু হয়েছে। 

এর আগে দেশ ও দেশের বাইরে থেকে হাজারো লালন ভক্ত বাউল, সাধু আর দর্শনার্থীদের ভিড়ে মুখর হয়ে ওঠে কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার ছেঁউড়িয়া মরা কালী নদীর পাড়ে অবস্থিত আখড়াবাড়ি। বাংলা ১২৯৭ সালের পহেলা কার্তিক ফকির লালন মৃত্যুবরণ করেন। এরপর থেকে তার শিষ্যরা দিনটিকে স্মরণ করে আসছে। সাংস্কৃতিক মন্ত্রণালয় ও কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় লালন একাডেমি নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। প্রতিদিন সন্ধ্যায় উন্মুক্ত মঞ্চে আলোচনা সভার পাশাপাশি রাতভর লালন সঙ্গীত পরিবেশন করা হবে।

তিনদিনের উৎসব ঘিরে বর্ণিল সাজে সেজেছে পুরো আখড়াবাড়ি এলাকা। মঙ্গলবার দিনভর লোকে লোকারণ্য ছিল পুরো এলাকা। এ ভিড় ছড়িয়ে পড়ে কয়েক কিলোমিটার পর্যন্ত। মূল আখড়াবাড়ির ভেতর তিল ধারণের ঠাঁই নেই। অনেকে ভেতরে বসার জায়গা না পেয়ে বাইরে মাঠে ও আশেপাশের ভবনেও আস্তানা গাড়েন।

লালন অনুসারীরা বলেন, তার মূল চিন্তায় ছিল মানুষের কল্যাণ কামনা করা, মানুষের মঙ্গল চাওয়া। তাইতো লালন বলে গেছেন- মানুষ ভজলে সোনার মানুষ হবি। উৎসবের মূল আকর্ষণ থাকে মূলত লালনের গান। এ গান শুনতেই আসেন অনেকে। খালি গলায়, একতারা হাতে গান করেন বেশির ভাগ বাউল।

বাউল আশরাফ ফকির বলেন, এদিন শোকের। আমরা শোক পালন করি। গুরুকে স্মরণ করি তার গানের মাধ্যমে। উৎসবে আমাদের দাওয়াতের প্রয়োজন হয় না। মনের মধ্যে আগে থেকেই দিনটি গাঁথা থাকে। তাইতো টানেই চলে আসি। 

তবে আখড়াবাড়ি ঘিরে একটি চক্র গড়ে উঠেছে। তারা মোমবাতিসহ নানা পণ্যের ব্যবসা করছে। লোকজনকে জোর করে নিতে বাধ্য করে। দামও বেশি নেয়। পাশাপাশি গাঁজার প্রচলন আগের থেকে বেড়েছে। মাজার ও আশপাশে প্রকাশ্যে গাঁজার বেচা বিক্রি চলছে। সেখানে তরুণ-তরুণী ছাড়াও নানা বয়সী লোকজন প্রকাশ্যে গাঁজা সেবন করছে। এটা মাজারের পরিবেশ নষ্ট করছে বলে অভিযোগ করেছেন অনেকে। বিষয়টি বন্ধের দাবি করেছেন সচেতন লোকজন।

ঢাকা থেকে আসা দর্শনার্থী আলম হোসেন ও মেহেরাব হোসেন বলেন, উৎসব দেখতে এসেছি। লোকজনের প্রচুর ভিড়। গান শুনতে ভালো লাগছে। তবে অনুষ্ঠানের সময় খাবার ও আবাসিক হোটেল মালিকরা বেশি দাম রাখছেন। এতে অনেকের সমস্যা হচ্ছে।

লালন ধামের ভেতর ষাটোর্ধ বাউল এনাম শাহ তার সহযোগীদের নিয়ে একতারা হাতে নেচে-গেয়ে লালনের বন্দনা করছিলেন। তিনি বলেন, লালন নিজেও এভাবে গান করতেন। তার কাছে ধর্ম, বর্ণ, জাত-পাতের বিচার ছিল না।

লালন গবেষক ড. আজাদুর রহমান বলেন, লালন ফকির ছিলেন সাধক। তিনি এমন এক সমাজ গঠনের চিন্তা করতেন যেখানে কোন হানাহানি ও মারামারি হিংসা থাকবে না। মানুষের কল্যাণের বিষয়টি ছিল তার মূল চিন্তার জায়গা। তিনি গানে-গানে সমাজের নানা অসঙ্গতির চিত্র যেমন ফুটিয়ে তুলেছিলেন তেমনি প্রতিবাদ করেছিলেন নানা অন্যায়ের। 

whatsapp follow image

আরও পড়ুন

×