অ্যান্টিবায়োটিক লিখছেন পল্লিচিকিৎসক

নিজ চেম্বারে বসে রোগী দেখছেন দন্তচিকিৎসক ফরহাদ হোসেন -সমকাল
সোহেল মিয়া, বালিয়াকান্দি (রাজবাড়ী)
প্রকাশ: ২৬ অক্টোবর ২০২৩ | ১৮:০০
রোগীর ব্যবস্থাপত্রে এখতিয়ারবহির্ভূতভাবে অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ লিখছেন রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দির দেড় শতাধিক পল্লিচিকিৎসক। এ বিষয়ে নজরদারি নেই স্বাস্থ্য বিভাগের। এতে স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রয়েছে এ অঞ্চলের লাখো মানুষ।
অনুসন্ধানে দেখা যায়, বহরপুর বাজারে পল্লিচিকিৎসক প্রভাত কান্তি ঘোষ ও দন্তচিকিৎসক ফরহাদ হোসেন, নারুয়া বাজারে দন্তচিকিৎসক সুমন বিশ্বাস ও বিদ্যুৎ বিশ্বাস এবং বালিয়াকান্দি বাসস্ট্যান্ডে নীলকমল দেবনাথসহ উপজেলার বিভিন্ন বাজারে পল্লিচিকিৎসকরা অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে চেম্বার খুলে নিয়মিত রোগী দেখছেন এবং ব্যবস্থাপত্র দিচ্ছেন। ব্যবস্থাপত্রে প্রয়োজনে-অপ্রয়োজনে অ্যান্টিবায়োটিক লিখছেন তারা। শিশু থেকে বৃদ্ধ সবার ব্যবস্থাপত্রেই ৪-৫ প্রকারের ওষুধের সঙ্গে রয়েছে অ্যান্টিবায়োটিক।
বালিয়াকান্দি সদর ইউনিয়নের ভীমনগর গ্রামের বাসিন্দা হাসিব মোল্লা পল্লিচিকিৎসকের নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, তিনি তাঁর মায়ের জ্বরের চিকিৎসার জন্য পরিচিত একজন পল্লিচিকিৎসকের কাছে যান। তিনি মাকে অ্যান্টিবায়োটিকসহ চার প্রকারের ওষুধ দেন এক সপ্তাহের জন্য। দু’দিন অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়ার পর তাঁর মা মাথা ঘুরে পড়ে যান। চোখমুখে অন্ধকার দেখেন। পরে ওই চিকিৎসকের কাছে গেলে তিনি ওষুধ পরিবর্তন করে দেন।
ব্যবস্থাপত্রে অ্যান্টিবায়োটিক লিখতে পারেন কিনা– এমন প্রশ্ন করলে একাধিক পল্লিচিকিৎসক নিজেদের ভুল স্বীকার করে বলেন, অ্যান্টিবায়োটিক লেখা তাদের উচিত নয়। তবে রোগীর অবস্থা বুঝে তারা কিছু কম মাত্রার অ্যান্টিবায়োটিক লেখেন। অন্যদিকে দন্তচিকিৎসক ফরহাদ হোসেন জানান, অ্যান্টিবায়োটিক লেখা যাবে না– এ ধরনের কোনো নির্দেশনা দিয়ে সিভিল সার্জন অফিস থেকে তাদের কাছে চিঠি দেওয়া হয়নি। এমন নির্দেশনা পেলে তারা অ্যান্টিবায়োটিক লিখবেন না। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মাদ মুক্তাদির আরেফিন জানান, অ্যান্টিবায়োটিক অযথা বা অকারণে ব্যবহারের ফলে জীবাণু নিজেই প্রতিরোধী হয়ে উঠছে। যার কারণে মানুষের মৃত্যুঝুঁকিও বাড়াচ্ছে অ্যান্টিবায়োটিক। কোনোভাবে পল্লিচিকিৎসকরা এটা লিখতে পারবেন না। পল্লিচিকিৎসকরা শুধু প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে ওষুধ বিতরণ করতে পারবেন। উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগের প্রধান হিসেবে এটি দেখার দায়িত্বও তাদের। এখানে তিনি স্বাস্থ্য কর্মকর্তা হিসেবে নতুন এসেছেন। বিষয়টি তিনি এখন থেকে নিয়মিত তদারক করবেন বলে জানান।
ইউএনও রফিকুল ইসলাম জানান, প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রথমে তারা পল্লিচিকিৎসকদের সচেতন করবেন। এরপরও যদি কেউ লেখেন তাহলে তাঁকে আইনের আওতায় আনবেন। রাজবাড়ী সিভিল সার্জন ইব্রাহিম টিটন জানান, অ্যান্টিবায়োটিক তো নয়ই, ডাক্তার না হয়ে কারও ব্যবস্থাপত্র দেওয়ারই সুযোগ নেই। প্রতিটি উপজেলায় এ বিষয়ে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ তদারক করবে।
স্বাস্ব্য অধিদপ্তরের উপপরিচালক (যক্ষ্মা ও কুষ্ঠ নিয়ন্ত্রণ) ডা. শাফিন জব্বার জানান, সরকার মানুষের স্বাস্থ্য সুরক্ষা সেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে কাজ করছে। ইতোমধ্যে নিবন্ধিত চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ বিক্রি নিষিদ্ধ করে ‘ওষুধ ও প্রসাধনী আইন, ২০২৩’-এর খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। খসড়া আইন অনুযায়ী কোনো নিবন্ধিত চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ বিক্রি করা যাবে না জানিয়ে তিনি বলেন, এটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ বলে গণ্য হবে। গত তিন বছরে স্বাস্থ্যসেবার মান বাড়াতে নতুন করে প্রায় ৭০ হাজার জনবল নিয়োগ দিয়েছে সরকার। এর মধ্যে ২০ হাজার চিকিৎসক, ৩০ হাজার নার্স এবং ২০ হাজার অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মী নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তিনি আশা করছেন, পল্লিচিকিৎসকদের অপচিকিৎসা থেকে মানুষ রক্ষা পাবে।