ঢাকা শুক্রবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৫

কক্সবাজারে ৩৭ হাজার বসতবাড়ির ক্ষতি

কক্সবাজারে ৩৭ হাজার বসতবাড়ির ক্ষতি

কক্সবাজার প্রতিনিধি

প্রকাশ: ২৬ অক্টোবর ২০২৩ | ১৮:০০

ঘূর্ণিঝড় হামুনে ক্ষতিগ্রস্ত জেলাগুলোর অন্যতম কক্সবাজার। জেলা প্রশাসনের তথ্য অনুযায়ী, ঘূর্ণিঝড়ে কক্সবাজারে অন্তত ৩৭ হাজার ৮৫৪টি বসতবাড়ি মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয়েছে ৫ হাজার ১০৫টি এবং আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৩২ হাজার ৭৪৯টি বতসবাড়ি। জেলায় দুর্গত মানুষের সংখ্যা ৪ লাখ ৭৬ হাজার ৫৪৯ জন। গতকাল বৃহস্পতিবার কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শাহীন ইমরান এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

জেলা প্রশাসকের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, হামুনের আঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কক্সবাজারের ৭১টি ইউনিয়ন ও ২টি পৌরসভা। ভেঙে গেছে পল্লী বিদ্যুতের ৩৫৪টি বৈদ্যুতিক খুঁটি, বিকল হয়েছে ২৩টি ট্রান্সফরমার। ৪৯৬ স্থানে বৈদ্যুতিক তার ছিঁড়ে গেছে। ৮০০টি স্থানে গাছ পড়ে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়েছে। এরই মধ্যে ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর জন্য ১১৭ টন চাল, নগদ ১৫ লাখ টাকা এবং ৫০০ বান্ডিল ঢেউটিন বরাদ্দ দিয়েছে সরকার।

কক্সবাজার শহরের সমিতিপাড়া এলাকায় দারুল কুতুব একাডেমি নামে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি ঘূর্ণিঝড়ে মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত এ প্রতিষ্ঠানে রয়েছে তিন শতাধিক শিক্ষার্থী। গতকাল এই প্রতিষ্ঠানে গিয়ে দেখা যায়, ঘূর্ণিঝড়ের পর দু’দিন পার হলেও ক্ষতিগ্রস্ত বিদ্যালয়টি সংস্কারের কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হুমায়ুন সিকদার প্রতিষ্ঠানটি রক্ষায় জেলা প্রশাসনকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।

এদিকে ঘূর্ণিঝড় হামুনের কারণে দু’দিন বন্ধ থাকার পর গতকাল থেকে টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌপথে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচল আবার শুরু হয়েছে। বিআইডব্লিউটিএ চট্টগ্রামের উপপরিচালক নয়ন শীল জানান, টেকনাফের দমদমিয়া জেটিঘাট থেকে বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে কেয়ারি ক্রুজ অ্যান্ড ডাইনে ১৭৫ জন, কেয়ারি সিন্দাবাদে ৩৬৭ জন ও এমভি বার আউলিয়া জাহাজে ৭৬৮ পর্যটক সেন্টমার্টিন দ্বীপে ভ্রমণে গেছেন। ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানার আগে আবহাওয়া অফিস যে আগাম সতর্কবার্তা দেয়, তা এবার পাননি বলে অভিযোগ করেছেন কক্সবাজারের বহু মানুষ। কক্সবাজার শহরের সমিতিপাড়ার বাসিন্দা মোস্তফা সরওয়ার জানান, ঘূর্ণিঝড়ে হঠাৎ করে কিছু বুঝে ওঠার আগেই ভয়াবহ পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছে পুরো উপকূলবাসী। আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ারও সময় পাননি তারা। এমনকি দুর্যোগপূর্ব কোনো সতর্কবার্তাও পাননি তারা।

কক্সবাজার আবহাওয়া স্টেশনের রাডার সাত দিন আগে থেকে অচল ছিল বলে স্বীকার করেছেন আবহাওয়া অধিদপ্তর কক্সবাজার আঞ্চলিক কার্যালয়ের সহকারী আবহাওয়াবিদ ইমাম উদ্দিন। তিনি জানান, অচল থাকায় আবহাওয়ার সার্বিক তথ্য যথাযথভাবে সরবরাহ করা সম্ভব হচ্ছে না। দেশের অন্য রাডার স্টেশনগুলো সচল থাকায় আবহাওয়ার পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে প্রকৃত তথ্য পাওয়া যাচ্ছে।

গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় আঘাত হানা ঘূর্ণিঝড় হামুনের তাণ্ডবে কক্সবাজার শহরের রাস্তায় রাস্তায় এখনও পড়ে আছে বৈদ্যুতিক খুঁটি ও গাছ। দেয়াল ধসে এবং গাছ পড়ে এ পর্যন্ত তিনজন নিহতের পাশাপাশি আহত হয়েছেন অর্ধশতাধিক। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান বলেছেন, ‘কক্সবাজারে যে পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা করা হয়েছিল, বাস্তবে ক্ষতি তার চেয়ে আরও বেশি। এ ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে সরকার জনগণের পাশে আছে। গতকাল পৌরসভার কুতুবদিয়াপাড়া, সমিতিপাড়া, নুনিয়ারছড়া ও সদরের খুরুশকুল ইউনিয়ন পরিদর্শনকালে প্রতিমন্ত্রী বলেন, বিদ্যুৎ ও মোবাইল নেটওয়ার্ক সচলে সংশ্লিষ্টদের প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

আরও পড়ুন

×