শ্রমিক-পুলিশ সংঘর্ষে গাজীপুর রণক্ষেত্র, আহত দেড় শতাধিক

কালিয়াকৈর (গাজীপুর) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২৬ অক্টোবর ২০২৩ | ১৮:০০ | আপডেট: ২৬ অক্টোবর ২০২৩ | ১৮:৪০
সর্বনিম্ন ২৩ হাজার টাকা বেতন দাবিতে গাজীপুরে শ্রমিক অসন্তোষ চলছেই। দাবি আদায়ে চার দিন ধরে শ্রমিকরা আন্দোলন করছেন। গতকাল বৃহস্পতিবার চতুর্থ দিনেও বিক্ষোভ ও সড়ক অবরোধ করেছেন কোনাবাড়ী, মৌচাক ও সফিপুর শিল্পাঞ্চলের পোশাককর্মীরা। এ সময় ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের চারটি পয়েন্টে শ্রমিক-পুলিশ সংঘর্ষ হয়। এতে এলাকাগুলো রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। পুলিশ মুহুর্মুহু টিয়ার গ্যাসের শেল ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে। শ্রমিকরা পাল্টা ইটপাটকেল ছোড়েন। উত্তেজিত শ্রমিকরা যানবাহন ও দোকানপাট ভাঙচুর করেন এবং কয়েকটি গাড়িতে আগুন দেন। এতে ঘটনাস্থলে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়। মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। যাত্রীদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়। সংঘর্ষে দেড় শতাধিক শ্রমিক আহত হয়েছেন।
সকাল সাড়ে ১১টার দিকে সফিপুর ফ্লাইওভারের নিচে আশপাশের ১০-১২টি কারখানার শ্রমিকরা সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করতে থাকেন। শতাধিক পুলিশ জলকামান নিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করে। এতে ব্যর্থ হলে টিয়ার গ্যাসের শেল, রাবার বুলেট ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করা হয়। এখানেও পুলিশের সঙ্গে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। এ সময় পুলিশের রাবার বুলেট ও লাঠিচার্জে অর্ধশতাধিক শ্রমিক আহত হন।
দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের পল্লী বিদ্যুৎ এলাকায় আশপাশের আরও ৮-৯টি কারখানার শ্রমিক জড়ো হয়ে একটি জিপ ও তিনটি মোটরসাইকেলে অগুন দেন। এ সময় উত্তেজিত শ্রমিকরা আশিক দেওয়ানের ডিশ অফিসসহ ১০-১২টি দোকান ভাঙচুর করেন। পুলিশ টিয়ার গ্যাসের শেল ও রাবার বুলেটের বিরুদ্ধে ইটপাটকেল ছোড়েন শ্রমিকরা। দু’পক্ষের সংঘর্ষে শতাধিক শ্রমিক আহত হন। এ সময় কোনাবাড়ী থেকে কালিয়াকৈর উপজেলার সাহেববাজার এলাকার বাইপাস সড়ক পর্যন্ত দীর্ঘ যানজট সৃষ্টি হয়। এতে যাত্রীদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়। যাত্রীদের অনেকে হেঁটে গন্তব্যে যেতে হয়।
বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে কোনাবাড়ী বাসস্ট্যান্ড এলাকায় কোনাবাড়ী শিল্পাঞ্চলের কয়েকটি পোশাক কারখানার শ্রমিকরা সড়ক অবরোধ করেন। তারা মহাসড়ক অবরোধ করায় প্রায় তিন কিলোমিটার যানজট সৃষ্টি হয়। পুলিশ শ্রমিকদের সরাতে গেলেই দু’পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বেধে যায়। পুলিশ রাবার বুলেট নিক্ষেপ ও লাঠিচার্জ করে।
শ্রমিকরা জানান, নিত্যপণ্যের দাম বেড়ে গেছে। অল্প টাকায় সংসার চলে না। সর্বনিম্ন ২৩ হাজার টাকা বেতনের দাবি আদায়ে আন্দোলন করছি। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত মহাসড়কে আন্দোলন চলবে। গাজীপুর শিল্প পুলিশের কর্মকর্তারা জানান, গতকাল সকাল থেকে গাজীপুর মহানগরীর কোনাবাড়ী, তেলিরচালা, মৌচাক, সফিপুর ও চন্দ্রা পল্লী বিদ্যুৎ এলাকার পোশাক কারখানার শ্রমিকরা আন্দোলনে নামেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে গেলে শ্রমিকরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেন। পুলিশ টিয়ার গ্যাসের শেল, সাউন্ড গ্রেনেড ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। যে কোনো অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে পুলিশ সতর্ক অবস্থানে রয়েছে। শ্রমিক বিক্ষোভের কারণে সকাল থেকে মহাসড়কে থেমে থেমে যানবাহন চলে।
কালিয়াকৈর দমকল বাহিনীর স্টেশন কর্মকর্তা রায়হান জানান, রাস্তার পাশে জিপগাড়িতে আগুন দেন শ্রমিকরা। যানজট পেরিয়ে ঘটনাস্থলে যাওয়ার আগেই গাড়িটি পুড়ে যায়। গাজীপুর শিল্প পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ময়নুল হক জানান, প্রতিটি পয়েন্টে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। কালিয়াকৈর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাজওয়ার আকরাম সাকাপি ইবনে সাজ্জাদ বলেন, পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে জেলা, মহানগর ও শিল্প পুলিশ কাজ করছে।
জাপার সমর্থন
বেতন বাড়ানোর দাবিতে শ্রমিকদের চলমান আন্দোলনে সমর্থন জানিয়েছে জাতীয় পার্টি (জাপা)। গতকাল এক বিবৃতিতে দলটির চেয়ারম্যান জি এম কাদের বলেন, তৈরি পোশাক খাতের শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধির দাবি ও আন্দোলন যৌক্তিক।
তিনি বলেন, যে শ্রমিকরা বৈদেশিক মুদ্রা আয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন, তারাই সবচেয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। তাদের সঙ্গে বেমানান বৈষম্য করা হচ্ছে। আট হাজার টাকা বেতন কাঠামোতে এখন আর শ্রমিকদের জীবন চলে না। সিপিডির তথ্যমতে, চার সদস্যের একটি পরিবারে মাসিক খাবার খরচই ২২ হাজার ৪২১ টাকা।