নাব্য সংকটে ৪৫ নদী
খননের অভাবে মৃতপ্রায় নবীগঞ্জের আউশকান্দি এলাকার শাখা বরাক নদী -সমকাল
নবীগঞ্জ (হবিগঞ্জ) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৪ নভেম্বর ২০২৩ | ১৭:২৫ | আপডেট: ০৪ নভেম্বর ২০২৩ | ২৩:২৫
চলতি শুষ্ক মৌসুমে নাব্য হারানো ৪৫টি নদনদী খননের উদ্যোগ নেওয়া হলেও নানা জটিলতায় কাজ সম্পন্ন হয়নি। এর মধ্যে রয়েছে শাখা বরাক, বিজনা, ডেবনা, রত্না, বিবিয়ানা, খোয়াই, শাখা কুশিয়ারা, কালনী, গোপলার মতো গুরুত্বপূর্ণ নদী। এসব নদী খনন করা হলে কৃষিক্ষেত্রে আমূল পরিবর্তন আসবে।
নবীগঞ্জ, বাহুবল, বানিয়াচং, আজমিরীগঞ্জ, সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুরে এখনও নৌপথই কয়েক লাখ মানুষের যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম। নবীগঞ্জ উপজেলার প্রবহমান বরাক, কুশিয়ারা, গোপলাবিজনা, বিবিয়ানা এখানের বড় নদী। পাহাড় থেকে নেমে আসা বালু ও পলি জমে এ নদীগুলো ক্রমে ভরাট হয়ে নাব্য হারিয়ে ফেলছে। হাওরগুলোতে দেখা দিয়েছে জলাবদ্ধতা। উপজেলার ছোটবড় ৪০টির বেশি হাটবাজারের ব্যবসা-বাণিজ্য পড়েছে হুমকির মুখে। উপজেলার বিবিয়ানা নদী কসবা থেকে আজমিরীগঞ্জ পর্যন্ত শুকিয়ে নৌ চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। উপজেলা সদরের পাশ দিয়ে বয়ে চলা বরাক নদী শুটকি নদীর সঙ্গে মিলিত হয়েছে।
এ নদী দিয়েই কিশোরগঞ্জের কমিরগঞ্জ, ভৈরবসহ দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সঙ্গে নবীগঞ্জের নৌ যোগাযোগ চলে। তবে নাব্য সংকটে বর্তমানে উপজেলা সদরের সঙ্গে অভ্যন্তরীণ ও বাইরের নৌ যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। হেমন্তে প্রবহমান বরাক, গোপলাবিজনা, বিবিয়ানা নদী শুকিয়ে যাওয়ায় ছোট ছোট ডিঙিতে মালপত্র আনা-নেওয়া করতে সমস্যা হচ্ছে। এর ফলে দীর্ঘ নৌপথে মালপত্র আনতে যে খরচ ও ভোগান্তি পোহাতে হয়, সে কারণে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দামও অনেকটা বেড়ে যায়।
ভারতের মণিপুর থেকে নেমে আসা কুশিয়ারা নদী মেঘনার সঙ্গে মিলিত হয়েছে। এর একটি শাখা মিলিত হয়েছে সুরমা নদীর সঙ্গেও। এ নদী থেকেই বালু সংগ্রহ করে সারাদেশে সরবরাহ করা হয়ে থাকে। মেঘালয়ের গারো পাহাড় থেকে নেমে আসা বালু ও পাথরের কারণে নদীটি প্রাচুর্যে ভরা এবং গুরুত্বপূর্ণ। তবে এ বালু-পাথরই নদীটির কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে। নদীপাড়ের বাসিন্দারা জানান, শীতের শুরু থেকে বড় নৌকার পরিবর্তে ছোট ছোট নৌকা দিয়ে বালু লোড করতে হয়। এরপরও নদীর একাধিক স্থানে জেগে ওঠে চর। এ নদীর ওপর প্রায় ২০ হাজার ব্যবসায়ী পরিবারের জীবিকা নির্ভর করে।
একাধিক নৌ শ্রমিক জানান, প্রবহমান বরাক, কুশিয়ারা, গোপলাবিজনা, বিবিয়ানা নদীতে ছোটবড় ইঞ্জিনচালিত ট্রলারের ওপর প্রায় ২০ হাজার নৌ শ্রমিকের জীবন-জীবিকা চলে। এক সময় কার্গো জাহাজ চলাচলকারী খরস্রোতা নদীগুলো এখন মৃত। পাহাড়ি ছড়া দিয়ে নেমে আসা বালুমাটি ও পলি জমে নদীর উৎসমুখ ভরাট হয়ে গেছে। হবিগঞ্জের প্রবহমান এ নদীগুলোর ২৫০ কিলোমিটার নৌপথজুড়ে দেখা দিয়েছে ব্যাপক নাব্য সংকট। শুষ্ক মৌসুমে পানি না থাকলেও বৈশাখ মাসে নদীগুলো আকস্মিক পাহাড়ি ঢল ও অকাল বন্যায় ফুলে ওঠে। এতে বোরো ফসল তলিয়ে যায়।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) হবিগঞ্জ জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক তোফাজ্জল সোহেল জানান, বারবার বাপাসহ বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে নদীগুলো রক্ষায় তাগিদ দেওয়া হয়েছে। তবে কর্তৃপক্ষ কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না। দ্রুত নদীগুলো রক্ষায় কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া না হলে নদীগুলো অস্তিত্বহীন হয়ে পড়বে।
হবিগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী শামীম হাসনাইন মাহমুদ জানান, শাখা বরাক নদীকে দখলমুক্ত করে খননের জন্য কার্যক্রম হাতে নেওয়া হয়েছে। হবিগঞ্জে ৯টি উপজেলায় নাব্য হারানো পাঁচটি নদী খননের প্রস্তাব পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। পর্যায়ক্রমে বাকিগুলো খননের কাজ করা হবে।