সেন্টমার্টিনে হঠাৎ বেড়েছে অবৈধ রিসোর্ট নির্মাণ
সেন্টমার্টিনে নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে স্থাপনা নির্মাণ
কক্সবাজার প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৪ নভেম্বর ২০২৩ | ১৮:১৯ | আপডেট: ০৫ নভেম্বর ২০২৩ | ০০:১৯
কক্সবাজারের সেন্টমার্টিন দ্বীপে হঠাৎ বেড়ে গেছে অবৈধ রিসোর্ট নির্মাণ। বিএনপি-জামায়াতের হরতাল-অবরোধের কারণে এই মুহূর্তে সেন্টমার্টিন অনেকটা পর্যটকশূন্য। এই সুযোগে সেখানে
নানা ধরনের অবৈধ স্থাপনা গড়ে উঠছে বলে মনে করছেন স্থানীয়রা।
পরিবেশ অধিদপ্তরের কক্সবাজার জেলা কার্যালয় বলছে, দ্বীপে গত এক সপ্তাহের অভিযানে ১৬টি রিসোর্ট নির্মাণ বন্ধে লিখিত নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। অনুমতি ছাড়াই সেগুলো নির্মাণ হচ্ছিল। পাশাপাশি এসব রিসোর্টের মালিকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পরিবেশ অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম বিভাগীয় কার্যালয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে।
সেন্টমার্টিনে পরিবেশ অধিদপ্তরের বিশেষ অভিযানের নেতৃত্ব দেন কক্সবাজার কার্যালয়ের পরিদর্শক ফাইজুল কবির। সমকালকে তিনি বলেন, ‘কঠোর নজরদারির কারণে বেশ কিছুদিন সেন্টমার্টিনে অবৈধভাবে স্থাপনা নির্মাণ বন্ধ ছিল। কিন্তু সম্প্রতি হরতাল-অবরোধে দ্বীপে লোকজন কমে যাওয়ায় গোপনে বেশকিছু রিসোর্ট নির্মাণ শুরু হয়েছে। অনুমতি ছাড়া নির্মাণাধীন এমন ১৬টি রিসোর্টের কাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।’ দ্বীপের গলাচিপা ও পশ্চিমপাড়া এলাকায় অবৈধভাবে ওই সব রিসোর্ট নির্মাণ হচ্ছিল বলে জানান তিনি।
যেসব রিসোর্ট নির্মাণ বন্ধের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে তার মধ্যে রয়েছে, সান অ্যান্ড সেন রিসোর্ট, টুইন রিসোর্ট, জল জোসনা, আরণ্য ইকো রিসোর্ট, জলকুটির, জলকাব্য, ডিঙ্গি, রয়েল বিচ রিসোর্ট, গ্রিন বিচ রিসোর্ট, মেঘনা বিচ রিসোর্ট, বিচ ভিউ রিসোর্ট, নোঙর বিচ রিসোর্ট, কোরাল বিচ রিসোর্ট ও সৃষ্টিস্নান রিসোর্ট।
সেন্টমার্টিন দ্বীপ ঘুরে দেখা যায়, গলাচিপা এলাকায় রিসোর্ট নির্মাণ হচ্ছে বেশি। পাশাপাশি ডেইলপাড়া, দক্ষিণপাড়া, পূর্বপাড়া ও উত্তর সি-বিচ এলাকায় নতুন ভবন তৈরি হচ্ছে। দ্বীপের দক্ষিণপাড়ায় নির্মাণ হচ্ছে ‘লুইপাস ইকো রিসোর্ট’। সেখানকার ভবনটি রক্ষার জন্য সমুদ্রসৈকতে ইট, সিমেন্ট, লোহা ও বালু দিয়ে বাঁধ তৈরি করা হয়েছে। পাশেই ‘ট্রপিকানা বিচ রিসোর্টের’ বাউন্ডারি ও কয়েকটি ভবন নির্মাণ চলছে। এ ছাড়া পশ্চিম কোনাপাড়ায় নির্মাণ হচ্ছে ‘সূর্যস্নান টুইন বিচ রিসোর্ট’। এর একটু সামনে ছোট-বড় আটটি রিসোর্ট নির্মাণের কাজ চলছে।
নির্মাণাধীন কয়েকটি স্থাপনার মালিকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা কেউ মন্তব্য করতে রাজি হননি। স্থানীয়রা বলছেন, টেকনাফ থেকে সেন্টমার্টিনে নির্মাণসামগ্রী নেওয়া নিষিদ্ধ। সরকারি কাজের জন্য নিতে হলেও উপজেলা প্রশাসনের অনুমতি লাগে। কিন্তু সংঘবদ্ধ একটি চক্র রাতের আঁধারে নির্মাণসামগ্রী দ্বীপে নিয়ে স্থাপনা গড়ে তুলছে।
সেন্টমার্টিন ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান বলেন, ‘স্থাপনা নির্মাণ হচ্ছে সত্য। আমরা তাদের নিষেধ করছি– এটিও সত্য। কিন্তু বড় বড় মানুষ এসব কাজে জড়িত। আমাদেরও সীমাবদ্ধতা আছে, বোঝেন তো!’ তিনি বলেন, ‘এখানে সরকারি অনেক কাজ চলে। যেমন লাইট হাউস ও পোস্ট অফিস হচ্ছে, সরকারি বিভিন্ন অফিস হচ্ছে। সরকারি মালপত্র আনার ফাঁকে অসাধু ব্যক্তিরাও নিজেদের মালপত্রও নিয়ে আসছে।’
পরিবেশ অধিদপ্তর কক্সবাজার জেলা কার্যালয়ের উপপরিচালক নুরুল আমিন বলেন, ‘সেন্টমার্টিন দ্বীপের পরিবেশ রক্ষায় নিয়মিত তদারকি চলে। অবৈধ স্থাপনা নির্মাণকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়। সম্প্রতি জেলা প্রশাসনের সভায় দ্বীপের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের সিদ্ধান্ত হয়েছে। দ্রুতই অভিযান শুরু হবে।’
টেকনাফের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আদনান চৌধুরী সমকালকে বলেন, সেন্টমার্টিনে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণের বিরুদ্ধে কিছুদিন পরপর অভিযান চালানো হয়। তবে হরতাল-অবরোধের কারণে সপ্তাহখানেক ধরে অভিযান চালানো সম্ভব হচ্ছে না। হয়তো এই সুযোগে কেউ অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ করে থাকতে পারে।