ঢাকা বৃহস্পতিবার, ০৭ ডিসেম্বর ২০২৩

এবার কাজুবাদাম রপ্তানির আশা

সাফল্য

এবার কাজুবাদাম রপ্তানির আশা

পাহাড়ের বুকে সারি সারি কাজুবাদাম গাছ। ছবিটি বান্দরবান থেকে তোলা - সমকাল

 জাহিদুর রহমান

প্রকাশ: ০৪ নভেম্বর ২০২৩ | ১৮:২৪ | আপডেট: ০৫ নভেম্বর ২০২৩ | ০০:২৪

দাম না পেয়ে একসময় কাজুবাদামের গাছ কেটে ফেলেছিলেন পাহাড়ের অনেক কৃষক। সময়ের ব্যবধানে এখন সেই কাজুবাদাম চাষেই বেশি আগ্রহ তাদের। আর তাতে বছর ঘুরতেই পাহাড়ে বাড়ছে কাজুবাদামের ফলন। এতে বদলে গেছে পাহাড়ি এলাকার চিত্র। রপ্তানির আশায় উদ্যোক্তারাও ঝুঁকছেন কাজুবাদামের দিকে।

তেমনই একজন ওয়াজেদুল ইসলাম মবিন। তিনি ও তাঁর তিন বন্ধু মিলে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার বাইসারি ইউনিয়নে ১০০ একর জমিতে ‘কাজু অ্যান্ড কফি এগ্রো’ গড়ে তুলেছেন। মবিনের ভাষ্য, একসময় চিন্তা করতাম, পাহাড়ে নতুন কী করা যায়। পরে চিন্তা করলাম, বাংলাদেশে যেহেতু কাজুবাগান নেই, এটা নিয়ে একটু চেষ্টা করি। প্রথমে আমরা নিজেরা ছয় হাজার চারা লাগালাম। পরবর্তী সময়ে কৃষি মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে সরকারের প্রকল্প থেকে আরও আট হাজার চারা পেলাম। চারা লাগানোর জন্য সরকারি প্রকল্প থেকে সার দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি দুটি সোলার প্যানেলের মাধ্যমে গভীর নলকূপ থেকে পানি তুলে সেচের মাধ্যমে শুষ্ক মৌসুমে গাছগুলোতে পানি সরবরাহ করা হচ্ছে। গাছে ফুল ও ফল খুব ভালো হয়েছে। বাগান থেকে আমরা ফল পেয়েছি। একই সঙ্গে এবার আমরা সেই বাগানে সঙ্গী ফসল হিসেবে কফির গাছ লাগিয়েছি। বাগানে কম্বোডিয়ান এম টোয়েন্টি থ্রি জাতের চারা লাগানো হয়েছে জানিয়ে এই উদ্যোক্তা বলেন, এই জাতের কাজুবাদাম সবচেয়ে উন্নত এবং মজাদার।

রাঙামাটির রাজস্থলী উপজেলার শফিপুর গ্রামে গড়ে উঠেছে জেলার সর্ববৃহৎ কাজুর বাগান। ছয়-সাতটি টিলা নিয়ে গঠিত এই বাগানের আয়তন ৪০ একর। প্রায় তিন বছর আগে কয়েকজন উদ্যমী অংশীদারকে নিয়ে এই বাগান গড়ে তুলেছেন আসাদুল্লাহ। তিনি শখ করে ২০১৭ সালে কয়েকটি কাজুবাদামের চারা রোপণ করেছিলেন। দুই বছর পর সেই গাছে ফুল আসে, দু-একটি ফলও হয়। এ থেকেই অনুপ্রেরণা পেয়ে কাজু চাষে আগ্রহী হয়ে ওঠেন তিনি। পরবর্তীকালে সরকারের প্রকল্প থেকে চার হাজারের মতো চারাও পেয়েছেন তিনি। এখন তাঁর বাগানে ১০ জন কর্মী কাজ করেন। আসাদুল্লাহ বলেন, পাহাড়ে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ বাগান পরিষ্কার করা। সে জন্য তারা ৪০ হাজার টাকা সরকারি সহায়তাও পেয়েছেন। বাগানে পানি দেওয়ার জন্য সরকারি ‘কাজুবাদাম ও কফি গবেষণা, উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ’ প্রকল্প থেকে সোলার সেচপাম্পও দেওয়া হয়েছে। আগামীতে আরও সেচপাম্প দেওয়া হবে বলে সরকারের পক্ষ থেকে আশ্বাস দেওয়া হয়েছে।

ইতোমধ্যে কাজুবাগানে ফল আসা শুরু করেছে জানিয়ে আসাদুল্লাহ বলেন, গত বছর বাগানের বেশ কিছু গাছে ফলন এসেছে। ডিসেম্বর-জানুয়ারি থেকে গাছে ফুল আসবে। এর পর এপ্রিল ও মে মাসের দিকে বাদাম তোলা শুরু হবে। এ বছর বেশ কিছু গাছ থেকে ভালো ফল পাব বলে আশা করছি। এই বাগানের কাজুবাদাম একদিন বিদেশে রপ্তানি হবে বলে প্রত্যাশা করেন তিনি।

অন্যদিকে, শেরপুরের গারো পাহাড়ে এবার পরীক্ষামূলকভাবে উচ্চ মূল্যের কাজুবাদামের চাষ হচ্ছে। এসব এলাকার বাগানগুলোর কাজুবাদাম পরিপক্ব হতে শুরু করায় চাষিদের মুখেও হাসি ফুটতে শুরু করেছে। ফলে সীমান্তের পাহাড়িদের মনে এখন আশার আলো। 

সংশ্লিষ্টরা ভাবছেন, অবহেলিত ও প্রত্যন্ত পাহাড়ি জনপদের অর্থনৈতিক চাকা ঘুরে যেতে পারে এ উচ্চ মূল্যের কাজুবাদাম চাষে। ঝিনাইগাতী উপজেলার গজনি এলাকার বাগানের কৃষক সোলেমান বলেন, কৃষি বিভাগের এই পাইলট প্রকল্প হচ্ছে এ কাজুবাদাম চাষ। আমার বাগানে গত বছর থেকেই ফুল আসতে শুরু করে এবং এবার পাকতে শুরু করেছে। ৫০ শতক জমিতে ২০০ গাছ রয়েছে। আশা করছি, আগামী বছর থেকে ফলন আরও বাড়বে এবং প্রতি গাছে ১৫ থেকে ২০ কেজি করে বাদাম পাওয়া যাবে।

‘কাজুবাদাম ও কফি গবেষণা, উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ’ প্রকল্পের পরিচালক (পিডি) শহীদুল ইসলাম বলেন, আমাদের প্রকল্পের কাজ চলমান। আমরা উদ্যোক্তাদের সব ধরনের সহায়তা দিয়ে আসছি। ভবিষ্যতেও আমাদের এ ধরনের সহায়তা অব্যাহত থাকবে। অভ্যন্তরীণ চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি রপ্তানি আয় অর্জনে ভবিষ্যতেও আমাদের এ ধরনের সহায়তা অব্যাহত থাকবে।

কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব ওয়াহিদা আক্তার বলেন, পাহাড়ের আশপাশে অনেক কাজুবাদামের প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্প গড়ে উঠেছে। ছোট-বড় শত শত উদ্যোক্তা তৈরি হয়েছে। আগামী এক দশকের মধ্যে এই কাজুবাদাম উচ্চ মূল্যের ফসল হিসেবে দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখবে।

 

আরও পড়ুন