ঢাকা বৃহস্পতিবার, ০৭ ডিসেম্বর ২০২৩

তদন্তের চোরাগলিতে বেঁচে গেল তিন সোনা চোরাচালানকারী

তদন্তের চোরাগলিতে বেঁচে গেল  তিন সোনা চোরাচালানকারী

.

 আহমেদ কুতুব, চট্টগ্রাম

প্রকাশ: ০৬ নভেম্বর ২০২৩ | ১৮:০৪ | আপডেট: ০৭ নভেম্বর ২০২৩ | ০০:০৪

তদন্তের চোরাগলিতে চট্টগ্রামে পৌনে তিন কেজি স্বর্ণবার চোরাচালানে জড়িত তিন ব্যক্তিকে কৌশলে বাঁচিয়ে দিয়েছে পুলিশ। স্বর্ণবার বহন করা ব্যক্তি জবানবন্দিতে তিন চোরাচালানকারীর নাম-পরিচয় সুনির্দিষ্টভাবে প্রকাশ করলেও তাদের কারো কোনো সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়নি বলে জানায় পুলিশ। আসল তিন অপরাধীকে বাদী দিয়েই চার্জশিট দিয়েছে পুলিশ। আইনজীবীরা বলছেন, এ তদন্ত প্রশ্নবিদ্ধ। 
গত ৫ এপ্রিল সংযুক্ত আরব আমিরাতের শারজাহ থেকে চট্টগ্রামের শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করেন আতিক উল্ল্যা (৪২)। তাঁর দেহ তল্লাশি করে প্যান্টের ভেতর দুই কেজি ৮৯০ গ্রাম স্বর্ণ পাওয়া, যায় দাম দুই কোটি ৩২ লাখ টাকা। এ ঘটনায় আতিককে গ্রেপ্তার করা হয়। এ স্বর্ণের মালিক আতিক ছিলেন না, অর্থেও প্রলোভনে পড়ে তিনি শুধু বহন করেছিলেন। 

আতিক তাঁর জবানবন্দিতে হাসান নামে একজনের পূর্ণাঙ্গ ঠিকানা দিলেও চার্জশিটে আসেনি তাঁর নাম। ‘হাজি’ নামে একজনের মোবাইল নম্বর থাকার পর তিনিও থেকে গেছেন তদন্তের বাইরে। রাঙ্গুনিয়ার জসিমের নাম-পরিচয় প্রকাশের পর তাঁকেও তদন্তের আওতায় আনা হয়নি। আতিক দুবাই-চট্টগ্রাম আন্তর্জাতিক রুটে স্বর্ণবার চোরাচালানে এ তিনজনের সরাসরি জড়িত থাকার তথ্য প্রকাশ করলেও চার্জশিটে পুলিশ তা উল্লেখ করেনি। শুধু ধরা পড়া বাহক আতিক উল্ল্যা ছাড়া আর কারও চোরাচালানে জড়িত থাকার সঠিক তথ্য প্রমাণ পাওয়া যায়নি বলে চার্জশিটে উল্লেখ করা হয়েছে। 

চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ১৬৪ ধারার জবানবন্দিতে আসামি আতিক উল্ল্যা বলেন, ‘১৭ বছর ধরে দুবাই থাকি। আমার দেশে আসার কথা শুনে রুমমেট হাটহাজারীর হাজিরহাট মন্দাকিনার আবদুল সহিদের ছেলে হাসান আমাকে বলে কিছু স্বর্ণ দেশে নিয়ে গেলে ফ্লাইট ভাড়া ও ৩৫ হাজার টাকা দেবেন। স্বর্ণ বারগুলো শাহ আমানত বিমানবন্দরের টয়লেটে রাখলেই হবে। হাসানের সঙ্গে রাঙ্গুনিয়ার জসিমও স্বর্ণ চোরাচালানের কাজ করে। বিমানবন্দরের বাইরে হাজি নামে একজন ফোন করে ৩৫ হাজার টাকা দেবে।’ 

আতিক বিমানবন্দরে নামার পর ‘হাজি’ তাঁর মোবাইল নম্বর থেকে ফোন করে স্বর্ণ টয়লেটে রেখে বাইরে এসে তাঁর কাছে থেকে টাকা নিয়ে যেতে বলেন। বিমান থেকে নামার পর টয়লেটে স্বর্ণগুলো রাখতে যাওয়ার সময়ই কাস্টম কর্মকর্তারা তাঁর শরীর তল্লাশি করে স্বর্ণের বার উদ্ধার করেন। তাঁর দুটি পাসপোর্ট ও দুটি মোবাইল সেটও জব্দ করা হয়। আতিক হাটহাজারীর ফতেয়াবাদ ২ নম্বর ওয়ার্ড বিট্টালি এলাকার মোহাম্মদ মুসার ছেলে। বর্তমানে তিনি চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি। 

স্বর্ণ চোরাচালান মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পতেঙ্গা মডেল থানার এসআই আবু সাঈদ রানা বলেন, বিমানবন্দরের বাইরে থেকে হাজি নামে যে ব্যক্তি মোবাইলে ফোন দিয়ে আতিককে বাইরে এসে টাকা নিতে বলেছিলেন সে নম্বরটি কুড়িগ্রামের এক মহিলার নামে রেজিস্ট্রেশন করা। তাই ওই মহিলাকে জিজ্ঞাসাবাদ করিনি। হাজির খোঁজ পাইনি। অন্য যে দু’জনের নাম এসেছে তাদের সঠিক ঠিকানা না পাওয়ায় তাদেরও অভিযুক্ত করা সম্ভব হয়নি।

চট্টগ্রামের সাবেক পিপি ফখরুদ্দিন চৌধুরী বলেন, পুলিশ এখানে সঠিক ও নিরপেক্ষভাবে তদন্ত করেছে বলে মনে হচ্ছে না। এটা প্রশ্নবিদ্ধ তদন্ত।

আরও পড়ুন