চাঁদা না পেলেই গুলি পেট্রোল বোমা

চাটগাঁর ত্রাস ঢাকাইয়া আকবর
আব্দুল্লাহ আল মামুন, চট্টগ্রাম
প্রকাশ: ০৬ নভেম্বর ২০২৩ | ১৮:০৬ | আপডেট: ০৭ নভেম্বর ২০২৩ | ০০:০৬
নাম আলী আকবর। যদিও চট্টগ্রামের অপরাধ জগতে এক নামে সে পরিচিত ঢাকাইয়া আকবর হিসেবে। ইতোমধ্যে চাঁদাবাজি, খুনসহ বিভিন্ন মামলায় জেলে গেছে অন্তত ১৫ বার। কিন্তু প্রতিবারই জামিনে বের হয়ে আবার জড়িয়েছে অপরাধে। আকবর নিজের চাঁদাবাজির রাজত্ব এমনই বিস্তার করেছে, কেউ টাকা দিতে অস্বীকার করলেই চলে গুলি। কখনওবা পেট্রোল বোমা ছুড়ে জ্বালিয়ে দেয় ঘরবাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। সর্বশেষ গত ২৬ সেপ্টেম্বর মধ্যরাতে লক্ষ্মীপুর জেলা থেকে পুলিশ আকবরকে গ্রেপ্তার করে। এ সময় তার কাছ থেকে একটি রিভলবার ও এলজি উদ্ধার করা হয়। পুলিশ বলছে, আকবরের বিরুদ্ধে ডজনখানেক মামলা রয়েছে।
আকবর নগরীর বায়েজিদ বোস্তামি থানার চালিতাতলী পূর্ব মসজিদ জব্বার সওদাগর বাড়ির মোহাম্মদ মঞ্জুরের ছেলে। তবে তাদের আদি বাড়ি ঢাকার নারায়ণগঞ্জে। ফলে সে সূত্রেই আকবরের নামের সঙ্গে যুক্ত হয় ঢাকাইয়া শব্দটি। ২০০০ সালের দিকে চট্টগ্রামের চাঞ্চল্যকর আট খুনের মামলার আসামি শিবিরের দুর্ধর্ষ ক্যাডার সাজ্জাদ হোসেন খানের বিশ্বস্ত সহচর নগর পুলিশের তালিকাভুক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসী সারোয়ার বাবলা ও নুরুন নবী ম্যাক্সনের হাত ধরে অপরাধে হাতেখড়ি আকবরের। তবে সারোয়ার-ম্যাক্সন বাহিনী তৈরি করে চাঁদাবাজি শুরু করলে সাজ্জাদের সঙ্গে দূরত্ব তৈরি হয়।
ব্যবসায়ী, প্রবাসী ও ভবন মালিকদের ফোন নম্বর সংগ্রহ করে বিদেশে পালিয়ে থাকা সাজ্জাদের কাছে পাঠাত আকবর। এর পর সাজ্জাদ ফোনে চাঁদা দাবি করে। কেউ টাকা না দিলে আকবরের কাজ ছিল সহযোগীদের নিয়ে গুলি ও পেট্রোল বোমা মেরে ত্রাস তৈরি করা। এর সুবাদে সাজ্জাদের চাঁদার একটি অংশ পেত আকবরও। এ ছাড়া আকবরের বিরুদ্ধে কখনও সাজ্জাদ কখনও আবার সারোয়ার-ম্যাক্সনের নাম ভাঙিয়ে চাঁদাবাজিরও অভিযোগ আছে। গত বছরের ডিসেম্বরে ভারতে মারা যায় ম্যাক্সন। এর পরই চাঁদার ভাগাভাগি নিয়ে গুরু সাজ্জাদের সঙ্গেও দূরুত্ব তৈরি হয় আকবরের। গত ৫ ফেব্রুয়ারি সাজ্জাদের বড় ভাই ওসমান আলীর কাছে আকবর ১০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। চাঁদা না দেওয়ায় দলবল নিয়ে এসে সাজ্জাদের বাড়িতে হামলা, ভাঙচুর ও আগুন দেয়। কিছুদিন আগে নগরের চান্দগাঁও এলাকার এক শিক্ষকের কাছে সারোয়ারের নামে ১০ লাখ টাকা চাঁদা চায় আকবর। বিষয়টি জানতে পেরে ১১ সেপ্টেম্বর নগর পুলিশ কমিশনারের কাছে অভিযোগ ও মামলা করে সারোয়ার। সেই মামলাতেই ২৬ সেপ্টেম্বর আকবরকে আবার গ্রেপ্তার করা হয়।
নগরের বায়েজিদ বোস্তামী থানার হাজীরপুল এলাকায় দোকানের পাশে সীমানাপ্রাচীর তুলছিলেন মক্কা এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী মো. আলাউদ্দিন। খবর পেয়ে চাঁদা চাইতে আসে আকবর। চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানালে গত ২০ জানুয়ারি শ্রমিকদের মারধর ও নির্মাণ সরঞ্জাম নিয়ে যায় সে। এ ঘটনায় ২৪ জানুয়ারি থানায় জিডি করেন আলাউদ্দিন। এর আগে ২০২২ সালের ১৭ জুলাই বায়েজিদ বোস্তামী থানার চালিতাতলী এলাকায় ‘কমফোর্ট হোমটেক্স’ নামে একটি কারখানা জ্বালিয়ে দেয় আকবরের লোকেরা। ২০২০ সালে বিবিরহাটে চাঁদা না পেয়ে প্রবাসী নুরুল আক্কাসের বাড়িতে পেট্রোল বোমা ছোড়ে আকবর। একই বছরের ৬ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রামে গাড়ির যন্ত্রাংশের ব্যবসায় যুক্ত এক ব্যক্তির কাছ থেকে চাঁদা দাবি করা হয়। না দেওয়ায় ২৩ সেপ্টেম্বর নয়াহাটে ওই ব্যবসায়ীর বাড়িতে পেট্রোল বোমা ছোড়া হয়।
২০১১ সালের ১৬ মার্চ চাঁদাবাজির অভিযোগে গ্রেপ্তার হয়েছিল আকবর। জামিনে বেরিয়ে আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠে সে। ২০১৭ সালের ২ আগস্ট চাঁদা না পেয়ে একটি বাড়িতে গুলি করার পর তাকে ফের গ্রেপ্তার করেছিল বায়েজিদ বোস্তামী থানা পুলিশ। চাঁদা না পেয়ে প্রবাসীর বাড়িতে পেট্রোল বোমা ছোড়ার অভিযোগে ২০২০ সালের ৩০ এপ্রিল আবার আকবরকে পাঁচলাইশ থানা পুলিশ গ্রেপ্তার করে। ২০২২ সালের ৪ সেপ্টেম্বর জামিনে বেরিয়ে এসে আবারও সে অপরাধে জড়িয়ে পড়ে।
সর্বশেষ গত মঙ্গলবার লক্ষ্মীপুর জেলার সদর থানার শাকচর হাজীরহাট এলাকা থেকে ফের তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
বায়েজিদ বোস্তামী থানার ওসি ফেরদৌস জাহান বলেন, ‘আকবরের চাঁদাবাজির কথা সবাই জানলেও কেউ ভয়ে অভিযোগ করতেন না। পুলিশের তৎপরতা টের পেয়ে সে চট্টগ্রাম থেকে পালিয়ে যায়। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে লক্ষ্মীপুর থেকে ২৬ সেপ্টেম্বর তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। এখন সে কারাগারে আছে।’