ঢাকা বুধবার, ২৯ নভেম্বর ২০২৩

‘স্যার নাই, ক্লাস হয় না ছাওয়া পাঠায় কী লাভ’

‘স্যার নাই, ক্লাস হয় না ছাওয়া পাঠায় কী লাভ’

উলিপুর উপজেলার সিদ্ধান্ত মালতিবাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকের সংকট থাকায় একসঙ্গে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির ক্লাস নিচ্ছে পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী হরি প্রিয়া রায়- সমকাল

উলিপুর (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০৬ নভেম্বর ২০২৩ | ১৮:১০ | আপডেট: ০৭ নভেম্বর ২০২৩ | ০০:১০

‘ইস্কুলে স্যার নাই, ক্লাস হয় না। সে ইস্কুলে ছাওয়া পাঠায় কী লাভ? হামরা গরিব মানুষ। তার চায়া সংসারের কাজ করলে অনেক উপকার হয়।’ কথাগুলো আয়েশা বেগম নামে এক অভিভাবকের। তাঁর সন্তান উলিপুর উপজেলার সিদ্ধান্ত মালতিবাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী।

বিদ্যালয়টিতে ১০৪ শিক্ষার্থী রয়েছে। তাদের জন্য মাত্র একজন শিক্ষক। দোতলা ভবন, চেয়ার, বেঞ্চ, শ্রেণিকক্ষসহ সব সুযোগ-সুবিধা থাকলেও শিক্ষকের অভাবে ব্যাহত হচ্ছে পাঠদান। সম্প্রতি দুই শিক্ষককে একসঙ্গে বদলি করায় শিক্ষক সংকটে পড়েছে বিদ্যালয়টি। একজন শিক্ষক পাঠদানে হিমশিম খাচ্ছেন। এতে দেখা দিয়েছে অচলাবস্থা। অনিয়মের অভিযোগ ও দুই শিক্ষকের মধ্যে দ্বন্দ্বে বিদ্যালয়টির এ অবস্থা বলে জানা গেছে।

একমাত্র শিক্ষক হিসেবে তামান্না ফেরদৌসী পাঠদান করছেন। ১৯৮৯ সালে বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হয়। সাত পদের বিপরীতে প্রতিষ্ঠানটিতে দীর্ঘদিন প্রধান শিক্ষকসহ চার শিক্ষকের পদ শূন্য ছিল। তিনজন শিক্ষক দিয়ে চলছিল পাঠদান। গত ২৯ সেপ্টেম্বর ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মালারানী ও সহকারী শিক্ষক বিলকিচ জাহানকে বদলি করা হয়।

তামান্না ফেরদৌসী জানান, তিনি একা বিদ্যালয় চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন। বাধ্য হয়ে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থীদের এক কক্ষে বসিয়ে পাঠদান করেন। তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির ক্লাস পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীকে দিয়ে করাচ্ছেন। বিদ্যালয় খোলা ও বন্ধ, পতাকা উত্তোলন, বেল বাজানোসহ পিয়নের কাজও তাঁকেই করতে হচ্ছে। বিষয়টি শিক্ষা কর্মকর্তাকে জানিয়েছেন। কিন্ত কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী হরি প্রিয়া রায় তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির ক্লাস নিচ্ছিল। তার ভাষ্য, ‘আপা একা কী করবে? তাই আমি ক্লাস নিচ্ছি। শিক্ষক না থাকায় আমাদের পড়ার খুব ক্ষতি হচ্ছে। আপনারাই বলেন, এটাকে কি স্কুল বলে?’ শিক্ষার্থী রাসেল মিয়া ও আইরিন আক্তার বলছিল, শিক্ষক না থাকায় ক্লাস হয় না। ফলে তাদের বাবা-মা আসতে দেয় না। অন্য জায়গায় ভর্তি করাতে চায়। 

তবে কান্নাকাটি করে স্কুলে এসেছে তারা। দ্বিতীয় শ্রেণির আপন জুয়েলের কথায়, ‘স্কুলে আসি, ক্লাস হয় না। খেলাধুলা করে চলে যাই।’

বিদ্যালয়ের বদলি হওয়া ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মালারানীর বিরুদ্ধে ‘স্লিপের টাকা আত্মসাৎ’ ও অনিয়মের অভিযোগ দিয়েছেন বলে জানান ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি হাফিজুর রহমান। 
তিনি বলেন, কর্তৃপক্ষ তদন্ত না করে দু’জনকে বদলি করেছে। অথচ নিয়ম আছে নির্ধারিত শিক্ষকের পদ শূন্য থাকলে সে বিদ্যালয় থেকে শিক্ষক বদলি করা যাবে না। শিক্ষক না থাকায় এ অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।

এ বিষয়ে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আমির হোসেন বলেন, দীর্ঘদিন শিক্ষক মালারানী ও বিলকিচ জাহানের মধ্যে বিবাদ চলছিল। কমিটি ও স্থানীয়দের মাধ্যমে এটি মীমাংসার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছেন। পরে স্কুলের পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে দুই শিক্ষককে সংযুক্তি (এক বছর পর ফিরবেন) বদলির প্রস্তাব দিলে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা তা বাস্তবায়ন  করেছেন।

জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. নবেজ উদ্দিন সরকার বলেন, দুই শিক্ষকের বিরোধ নিরসন ও শিক্ষার পরিবেশ ফেরাতে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা প্রস্তাব দেওয়ায় তাদের সংযুক্তি বদলি করা হয়েছে। শিক্ষকের পদ শূন্য থাকলে সেখান থেকে বদলি করা যায় কিনা, সে প্রশ্নের জবাব দেননি তিনি। 

তবে নতুন শিক্ষক দেওয়ার প্রস্তাব পেলে দেবেন বলে তিনি জানান।

আরও পড়ুন