চেয়ারম্যানের স্ত্রীর মৃত্যু নিয়ে রহস্য
মৌসুমী আক্তার
পটুয়াখালী ও দশমিনা প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৬ নভেম্বর ২০২৩ | ১৮:১৭ | আপডেট: ০৭ নভেম্বর ২০২৩ | ০০:১৭
দ্বিতীয় স্ত্রীকে হত্যার অভিযোগ এনে পটুয়াখালীর দশমিনা উপজেলার বহরমপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. আসাদুজ্জামান সোহাগসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা হয়েছে। তাঁর স্ত্রীর বড় ভাই মো. মনিরুজ্জামান বিপ্লব গতকাল সোমবার দুপুরে পটুয়াখালী নারী ও শিশু নির্যাতন আদালতে মামলাটি দায়ের করেন।
মামলাটি আমলে নিয়ে বিচারক নিলুফা ইয়াসমিন এজাহার গ্রহণের জন্য দশমিনা থানাকে নির্দেশ দিয়েছেন। মামলার অন্য আসামিরা হলেন– চেয়ারম্যানের বড় ভাই উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কামরুল ইসলাম, চাচাতো ভাই দীপু মৃধা, জসিম মৃধা, ফুফাত ভাই রবিউল মৃধা ও রাকিব মৃধা।
গত রোববার দুপুরে উপজেলা সদরের নলখোলার একটি ভবনের চার তলার বাথরুম থেকে চেয়ারম্যানের স্ত্রী মৌসুমী আক্তারের (৩৫) মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। তাঁর স্বজনের দাবি, তাঁকে হত্যা করা হয়েছে। তবে চেয়ারম্যানের স্বজনরা ধারণা করছেন, তিনি আত্মহত্যা করেছেন।
ময়নাতদন্ত শেষে গতকাল সন্ধ্যায় মৌসুমীর লাশ বাড়িতে নিয়ে আসেন স্বজনরা। এ সময় তাঁর প্রথম সংসারের বড় ছেলে নবম শ্রেণির ছাত্র নাফিস ফুয়াদ স্বাধীন (১৪), মেজো ছেলে পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র আব্দুল্লাহ আল মিমো (১০) ও মেয়ে মেহেরিমাসহ (৫) অন্য স্বজনরা কান্নায় ভেঙে পড়েন।
মামলার বাদী মৌসুমীর বড় ভাই মো. মনিরুজ্জামান বিপ্লব বহরমপুর ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। তিনি অভিযোগ করেন, চেয়ারম্যান সোহাগ তাঁর বোনকে জোর করে বিয়ে করার পর থেকে তাঁর ওপর অমানসিক নির্যাতন চালিয়েছেন। নির্যাতনের কারণে একাধিকবার হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিতে হয়েছে তাঁকে। তাঁর শরীরের বিভিন্ন অংশে ভয়াবহ আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।
মৌসুমীর বড় বোন খুকি আক্তারের অভিযোগ, চেয়ারম্যান সোহাগ নিয়মিত মাদক গ্রহণ করে তাঁর বোনের ওপর মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন করতেন। তাঁর বোনকে হত্যা করা হয়েছে।
মৌসুমীর প্রথম স্বামী ফেরদাউস হোসেনের বোন খাদিজা বেগমের ভাষ্যমতে, দুই বছর আগে জোর করে মৌসুমীকে নিয়ে যান চেয়ারম্যান সোহাগ। সোহাগ তাঁকে বিয়ে করে দশমিনা সদরে বসবাস করতেন। তিনিও অভিযোগ করেন, ‘প্রায়ই মৌসুমী ভাবির ওপর শারীরিক নির্যাতনের খবর পেতাম। কিন্তু আমাদের কিছুই করার ছিল না। আমার ভাইয়ের তিন ছেলেমেয়ে এতিম হয়ে গেল।’
মৌসুমীর জানাজা চেয়ারম্যান সোহাগের বাড়ির সামনে অনুষ্ঠিত হওয়ার ঘোষণা দিয়ে মাইকিং করা হয়। তবে তাতে মৌসুমীর পরিবারের লোকজন
বাধা দেন। পরে তাঁর বাবার বাড়ি উত্তর আদমপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।
ইউপি চেয়ারম্যান সোহাগ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল আজীজ মিয়ার ছোট ভাই মো. খলিলুর রহমানের ছেলে। উপজেলা চেয়ারম্যান বলেন, বিষয়টি দুঃখজনক। সঠিক তদন্ত হলে সত্য বের হয়ে আসবে বলে আশা তাঁর।
দশমিনা থানার ওসি মো. আনোয়ার হোসেন তালুকদার জানান, আদালতে করা মামলার কপি এখনও থানায় আসেনি। এ ঘটনায় থানায় অপমৃত্যুর মামলা হয়েছে। তদন্ত চলছে।
ফোন বন্ধ থাকায় এ বিষয়ে চেয়ারম্যান সোহাগের বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে তাঁর ফুফাতো ভাই রবিউল হোসেন দাবি করেন, সকালে ভিজিডির চাল বিতরণের জন্য তিনি (সোহাগ) ইউনিয়ন পরিষদে যান। খবর পেয়ে তিনি বাসায় ফিরে ফ্ল্যাটের দরজা ভেঙে স্ত্রীর মরদেহ দেখতে পেয়ে পুলিশে খবর দেন। তাঁর (রবিউল) ধারণা, মৌসুমী আত্মহত্যা করেছেন।