প্রজেরিয়ায় আক্রান্ত নীতুর খবর রাখছে না কেউ

বিরল রোগে আক্রান্ত শিশু নীতু -সমকাল
হবিগঞ্জ প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৬ নভেম্বর ২০২৩ | ১৮:১৯ | আপডেট: ০৭ নভেম্বর ২০২৩ | ০০:১৯
হবিগঞ্জ শহরের শায়েস্তানগর এলাকার বাসিন্দা দিনমজুর কামরুল হাসান ও গৃহিণী জোসনা বেগমের সন্তান নীতু বিরল প্রজেরিয়া রোগে আক্রান্ত। তবে এ অবস্থায় নীতুর খবর নেওয়ার যেন কেউ নেই। বিরল এ রোগে আক্রান্ত মেয়েকে নিয়ে কঠিন সময় পার করছে তার পরিবার।
এ রোগের প্রভাবে মাত্র ১৬ বছর বয়সী নীতু দেখতে প্রবীণদের মতো। তার মাথার চুল ধীরে ধীরে ঝরে যাচ্ছে। মরে যাচ্ছে হাত-পায়ের নখও। শরীরের শিরা-উপশিরাগুলো ভেসে উঠেছে চামড়ার ওপর। সেই সঙ্গে চামড়ায় বার্ধক্যের ছাপ। পরিবারের পাঁচ ভাইবোনের সঙ্গেই নীতুর বসবাস।
মেধার দিক থেকে অনেক স্বাভাবিক শিশুর চেয়ে এগিয়ে থাকলেও অধিকাংশের কাছেই অবহেলার পাত্রী নীতু। তার সমবয়সীরা তাকে দেখলে রীতিমতো ভয় পায়। বাধ্য হয়ে বাবা-মা তাকে প্রতিবন্ধী স্কুলে ভর্তি করান। যদিও সে প্রতিবন্ধী নয়।
নীতু বেশ গরিব পরিবারের সন্তান। মাস কয়েক আগে মারা গেছেন তার বাবা। যার কারণে তার যথাযথ চিকিৎসা করানো সম্ভব হচ্ছে না। বিভিন্ন সময় নীতুকে নিয়ে সংবাদ প্রকাশ হলে চিকিৎসা সহায়তায় কিছু অর্থ পেলেও পরবর্তী সময়ে তার আর খোঁজখবর রাখছে না কেউ।
রোববার নীতুর মা জোসনা আক্তার চিকিৎসার সাহায্যের জন্য যান জেলা প্রশাসক দেবী চন্দের কাছে। এ সময় জেলা প্রশাসক নীতুর চিকিৎসা ও ভরণপোষণের জন্য সমাজসেবার মাধ্যমে ১০ হাজার ও জেলা প্রশাসন থেকে ১০ হাজার টাকা অনুদানের ব্যবস্থা করেন। পরে নীতুর জন্য আরও ৫০ হাজার টাকা সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয় থেকে অনুদানের ব্যবস্থা করে দেওয়ার আশ্বাস দেন।
নীতুর মা জোসনা আক্তার বলেন, মেয়েকে নিয়ে অনেক লেখালেখি হয়েছে। অনেকেই সহযোগিতার কথা বলেছেন, কিন্তু কেউ সহযোগিতা করেননি। এখন জেলা প্রশাসকই তাদের একমাত্র ভরসা। নীতুর চিকিৎসায় সামান্য যা কিছু ছিল তার সবই বিক্রি করেছেন। তবে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, এ ধরনের রোগী বেশি দিন বাঁচে না।
চিকিৎসকরা ভাষ্য, বিরল এ রোগে আক্রান্ত রোগীরা অধিকাংশ সময় অসুস্থ থাকে। চিকিৎসা করে কোনো লাভ হয় না। চিকিৎসাবিজ্ঞানের হিসাবে ৪০ লাখ মানুষের মধ্যে এমন রোগাক্রান্তের সংখ্যা মাত্র এক। অল্প বয়সে বুড়িয়ে যাওয়ায় এ রোগে আক্রান্তদের গড় আয়ু সাধারণত ১৩ বছর। এরই মধ্যে শারীরিক নানা জটিলতায় ধীরে ধীরে মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাচ্ছে ছোট্ট নীতু।
হবিগঞ্জ ২৫০ শয্যা আধুনিক জেলা সদর হাসপাতালের চিকিৎসক দেবাশীষ দাস জানান, প্রজেরিয়া বিরল রোগ। এ রোগে আক্রান্ত শিশুদের আয়ু কম হয়।