প্রণোদনায়ও আবাদ বাড়ছে না গমের

.
শাহজাহান সোহেল, সাদুল্লাপুর (গাইবান্ধা)
প্রকাশ: ২০ নভেম্বর ২০২৩ | ২২:৩১
গাইবান্ধার সাদুল্লাপুরে গম চাষে আগ্রহ হারাচ্ছেন কৃষক। দাম না পেয়ে সরকারি খাদ্যগুদামে দুই মৌসুমে গম সরবরাহ করেননি তারা। এ কারণে গম কিনতে চাওয়া হচ্ছে না সরকারি অর্থ বরাদ্দ। কৃষি বিভাগ গম চাষে উৎসাহ দিতে প্রণোদনা হিসেবে ৭০০ কৃষককে বীজ ও সার দিলেও
আবাদ বাড়েনি। বরং গত আট বছরে চাষ কমেছে ২৭০ হেক্টর কম জমিতে।
উপজেলায় ২০১৫-১৬ মৌসুমে গম আবাদ হয় ৪১০ হেক্টর জমিতে। ২০১৬-১৭ মৌসুমে ৩০০ হেক্টরে। ২০১৭-১৮ মৌসুমে ২৯০ হেক্টরে। ২০১৮-১৯ মৌসুমে ২৭০ হেক্টরে। ২০১৯-২০ মৌসুমে ২১০ হেক্টরে। ২০২০-২১ মৌসুমে ১৮০ হেক্টরে। ২০২১-২২ মৌসুমে ১৬০ হেক্টরে। ২০২২-২৩ মৌসুমে ১৪০ হেক্টরে। এ হিসাব অনুযায়ী দেখা গেছে, প্রতি মৌসুমে কমেছে গম চাষ। কেন কমছে? এর উত্তরে কৃষি বিভাগের উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা আব্দুর রব সরকার বলেন, কয়েক বছর ধরে গমের উপযুক্ত মূল্য পাচ্ছেন না কৃষক। তাই লোকসানে গম চাষে আগ্রহ নেই। গমের পরিবর্তে তারা ভুট্টা চাষে ঝুঁকেছেন। ভুট্টা এখন লাভজনক ফসল।
উত্তর কাজীবাড়ি সন্তোলা গ্রামের কৃষক মোজাহেদুল ইসলাম বলেন, তেল ও সারের দাম বেড়েছে। বেড়েছে শ্রমিকের মজুরি। বাড়তি খরচে ফসল ফলিয়ে লাভ কী? সরকার সঠিক দাম দিলে কৃষকরা অবশ্যই গম চাষে আগ্রহী হবেন।
জানা গেছে, সরকারিভাবে গত দুই মৌসুমে প্রতি কেজি গমের দাম ছিল ৩৫ টাকা। কিন্তু এই দামে উপজেলার দুটি খাদ্যগুদামে গম বিক্রি করেননি কোনো কৃষক। তাই গম কেনার জন্য এখন সরকারি অর্থ বরাদ্দ চাওয়া হয় না বলে জানান উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক এএইচএম তৌহিদুল্লাহ। তিনি বলেন, দাম বাড়ালে কৃষকরা গুদামে আসবেন।
গত রোববার সাদুল্লাপুর বাজার ঘুরে জানা গেছে, সরকারি মূল্যের চেয়ে খোলাবাজারেই গমের দাম বেশি। বাজারের লতা স্টোরের মালিক নরেশ চন্দ্র সাহা বলেন, প্রতি কেজি গম বিক্রি হচ্ছে ৪৮ টাকায়। তাও পর্যাপ্ত পরিমাণে পাওয়া যাচ্ছে না। তাই আটার দাম আরও বাড়তে পারে।
খুচরা বিক্রেতা রাজা মিয়া বলেন, এক কেজি খোলা আটা বিক্রি হচ্ছে ৪৫ টাকায়। দুই মাস আগেও ৩৮ টাকা কেজিতে বিক্রি হয়েছে।
প্রতি কেজি প্যাকেটজাত আটা ৬০ টাকা। দুই মাস আগে ৫৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
‘স্বাস্থ্যসচেতন’ পরিবারে এখন আটার চাহিদা বেশি বলে জানান উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. শাহিনুল ইসলাম মণ্ডল। তিনি বলেন, ডায়াবেটিস রোগীরা রুটি খান। এর সঙ্গে ফাস্টফুড সামগ্রী তৈরিতেও আটা বেশি ব্যবহার হচ্ছে। এ ছাড়া ফিড কোম্পানি এবং পশুপাখির খাবার হিসেবে গমের চাহিদা বেড়েছে।
কথা হলে কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মাহবুবুল আলম বসুনিয়া বলেন, গম লাভজনক ফসল।
তাই আবাদ বাড়াতে সরকারিভাবে প্রণোদনা দেওয়া হচ্ছে। এবার উপজেলার ৭০০ জন কৃষক পাবেন ১০০ হেক্টর জমিতে বপনের জন্য বিনামূল্যে গমবীজ ও সার।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মতিউল আলম এ প্রতিবেদককে বলেন, আধুনিক পদ্ধতিতে একই জমিতে বছরে গমসহ তিন ফসল ফলানো যাবে। গম কর্তনের পর পাট চাষ। আবার পাট কেটে চাষ হবে রোপা আমন। তাতে ৬ থেকে ৭ হাজার টাকা খরচে এক বিঘা জমিতে উচ্চফলনশীল গম পাওয়া যাবে। বিঘায় উৎপাদন হবে ১০ থেকে ১২ মণ গম। লাভবান হবেন কৃষকরা।