ঢাকা বৃহস্পতিবার, ০৭ ডিসেম্বর ২০২৩

নৌকা চান ‘আসল মাঝি’

নৌকা চান ‘আসল মাঝি’

.

 সারোয়ার সুমন, চট্টগ্রাম

প্রকাশ: ২১ নভেম্বর ২০২৩ | ০০:৪০

নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী। চট্টগ্রাম-২ (ফটিকছড়ি) আসনের এমপি। তরীকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান স্থানীয়ভাবে পরিচিত ‘ভান্ডারী’ নামে। মহাজোটের টিকিটে টানা দুইবার এমপি হয়েছেন। এ হিসাবে ১০ বছর ধরে এই আসনে নির্বাচন করতে পারেননি আওয়ামী লীগের কেউ।
আওয়ামী লীগ নেতাদের এমন দুঃখ আরও দীর্ঘ চট্টগ্রাম-৫ (হাটহাজারী) আসনের ক্ষেত্রে। টানা তিনবার নৌকা প্রতীক নিয়ে হাটহাজারী থেকে এমপি হয়েছেন জাতীয় পার্টির সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ। 

এ দুই আসনে এবার প্রার্থী বদল করতে মরিয়া আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশীরা। তারা নৌকার ‘আসল মাঝি’ চান। কিন্তু রাজনীতির সমীকরণ এবারও ‘বাড়া ভাতে দিতে পারে ছাই’। ফটিকছড়ি আসনের দিকে এবার নতুন করে নজর দিয়েছে নবগঠিত বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টি। সরকার-ঘনিষ্ঠ দল হিসেবে নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধনও পেয়েছে তারা। আবার হাটহাজারীতে চোখ রেখেছে বিএনপির পদবঞ্চিতদের নিয়ে গঠিত নতুন দল প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক ফোরামও।

ফটিকছড়ির সমীকরণ
একসময় বিএনপির হয়ে, আরেক সময় আওয়ামী লীগের হয়ে নির্বাচন করার বিরল রেকর্ড রয়েছে নজিবুল বশর মাইজভান্ডারীর। ১৯৯১ সালে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হয়ে প্রথমবার এমপি হন তিনি। ১৯৯৬ ও ২০০১ সালে বিএনপির হয়ে নির্বাচন করেন। তবে আওয়ামী লীগের প্রার্থী রফিকুল আনোয়ারের কাছে হেরে যান। ২০০৮ সালে তিনি নির্বাচন করেননি। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচনে তরীকত ফেডারেশনের হয়ে নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করে মহাজোট থেকে প্রথমবারের মতো এমপি হন নজিবুল বশর। ২০১৮ সালের নির্বাচনেও মহাজোটের প্রার্থী হয়ে এমপি হন। বিএনপি শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে না এলে নজিবুল বশরের ভাগ্য সুপ্রসন্ন হতে পারে এবারও। মহাজোটের হয়ে নির্বাচন করবে বলে এরই মধ্যে নির্বাচন কমিশনে লিখিতভাবে জানিয়েছে তরীকত ফেডারেশন। তবে ভান্ডারীর সাম্প্রতিক কিছু কাজে তাঁর ওপর ক্ষুব্ধ আওয়ামী লীগ। 

দুদক তাঁর ছেলের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করলে সম্প্রতি কড়া ভাষায় সরকারের সমালোচনা করেন নজিবুল বশর। তিনি বলেন, ‘আমি কি কোনো সহযোগিতা করিনি? দেশবাসী জানে সরকারের বিরুদ্ধে বিএনপি কী অবস্থা সৃষ্টি করেছিল, আমেরিকা কী করেছিল– এসব কে ঠেকিয়েছে, সরকার ঠেকিয়েছে?’ সরকারের সঙ্গে সম্পর্কের সূত্র তুলে ধরে নজিবুল বলেন, ‘আপনাদের সাহস হয়নি নিজামী-মুজাহিদদের বিরুদ্ধে মামলা করতে। আমি মামলা করেছি। যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসি হয়েছে। যদি আমি না থাকতাম আপনারা মামলা করতেন না।’ তবে কিছু দিন পর ভিন্ন সুরে কথা বলে পুরোনো সম্পর্ক আবার জোড়া লাগিয়েছেন ভান্ডারী। সর্বশেষ নবম সংসদ নির্বাচনে এই আসনে মহাজোটের মনোনয়ন পেয়েছিলেন উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের নেতা এ টি এম পেয়ারুল ইসলাম। কিন্তু বিএনপির সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর কাছে হেরে যান তিনি। তখন থেকে আওয়ামী লীগের কেউ আর মনোনয়ন পাননি এই আসনে।

এদিকে এই আসন ঘিরে তৎপরতা বাড়িয়েছে বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টি (বিএসপি)। সরকারের আস্থাভাজন হয়ে সম্প্রতি পেয়েছে তারা নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধন। এই সংগঠনের চেয়ারম্যান শাহজাদা ড. সৈয়দ সাইফুদ্দীন আহমেদ। তিনিও ফটিকছড়ির খুব পরিচিত মুখ। এবার নির্বাচন করবেন তিনি। কোনো কারণে নজিবুলের সঙ্গে আওয়ামী লীগের দূরত্ব থেকে গেলে শেষ হাসি হাসতে পারেন সাইফুদ্দীন। উপজেলা আওয়ামী লীগের একাধিক শীর্ষ নেতার সঙ্গেও বর্তমান এমপির টানাপোড়েন তৈরি হয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে জোটও বাঁধছেন অনেকে। 

হাটহাজারীর হিসাব-নিকাশ
উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এম এ সালাম, নগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ইব্রাহিম হোসেন চৌধুরী বাবুল, বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান এস এম রাশেদুল আলম এই আসন থেকে নৌকার মনোনয়ন চাচ্ছেন। এম এ সালাম এরই মধ্যে বড় ধরনের শোডাউনও করেছেন। আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশীরা মনে করছেন, এবারও যদি এই আসনে অন্য দল থেকে কেউ মনোনয়ন পান; তাহলে নেতাকর্মীরা হতাশ হবেন চরমভাবে। 
হাটহাজারী আসন নিয়ে স্বপ্ন দেখছে চট্টগ্রাম থেকে আত্মপ্রকাশ করা নতুন দল ‘প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক ফোরাম’। এই দলের চেয়ারম্যান চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির সাবেক নেতা ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (চাকসু) ভিপি নাজিম উদ্দিন। মহাসচিব সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট থেকে চাকসুর নির্বাচিত জিএস আজিম উদ্দিন। দলে বিএনপির পদবঞ্চিত সাবেক নেতাকর্মীরাও রয়েছেন। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এই দল গঠনে সরকারের গ্রিন সিগন্যাল আছে বলে গুঞ্জন রয়েছে। নাজিম উদ্দিন হাটহাজারী থেকে নির্বাচন করতে পারেন। এমনটি হলে আবারও কপাল পুড়বে নৌকার আসল মাঝিদের। 

নেতাদের কে কী বলেন 
হাটহাজারী থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী এম এ সালাম বলেন, ‘১৫ বছর ধরে এই আসনের মধু খাচ্ছেন জাতীয় পার্টির এক নেতা। আওয়ামী লীগ উন্নয়ন করছে, দলের কর্মীরা ঝড়বৃষ্টিতে ভিজছে; কিন্তু নাম হচ্ছে উড়ে এসে জুড়ে বসা একজনের। আমরা এবার ঐক্যবদ্ধ।’ আরেক মনোনয়নপ্রত্যাশী উপজেলা চেয়ারম্যান এস এম রাশেদুল আলম বলেন, ‘একবার, দুইবার হলে মানা যায়; কেন বারবার এ আসনটিই দিতে হবে জাতীয় পার্টিকে? তাদের যদি জনপ্রিয়তা থাকে লাঙ্গল নিয়ে নির্বাচন করুক। নৌকার সঙ্গে জিতে আসুক তারা।’ 
ফটিকছড়ি থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী এ টি এম পেয়ারুল ইসলাম বলেন, ‘যার কোনো জনসমর্থন নেই, গ্রহণযোগ্যতা নেই– তাকেই জোটের প্রার্থী করে এমপি করা হচ্ছে বারবার। এবার এর পরিবর্তন চাই আমরা। নৌকার মানুষই নৌকা পাক ফটিকছড়িতে।’ আরেক মনোনয়নপ্রত্যাশী খাদিজাতুল আনোয়ার সনি বলেন, ‘আমার বাবা এই আসন থেকে দুইবার এমপি হয়েছেন। এখানে আছে ভোটব্যাংক। কিন্তু বারবার আমরা বঞ্চিত হচ্ছি সমীকরণের কাছে। এই আসনে এবার নৌকার হাল ধরুক আসল মাঝি।’

 

আরও পড়ুন