পেয়ারা নিয়ে বিপাকে চাষি

গোমস্তাপুরে বাগান থেকে পেয়ারা তুলে বস্তাবন্দি করা হচ্ছে সমকাল
চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২১ নভেম্বর ২০২৩ | ২১:৪৪
দুই বিঘা জমিতে আমের বাগান করেছিলেন গোমস্তাপুর উপজেলার নদিয়ারী গ্রামের জিল্লুর রহমান। দাম না পেয়ে গাছ কেটে তৈরি করেন পেয়ারা বাগান। সেই পেয়ারা শহরের সেন্টু মার্কেটে বিক্রি করতেন। প্রতিদিন গড়ে ৫০০ টাকা লাভ হতো। তা দিয়ে চলছিল স্ত্রীসহ ছয়জনের সংসার। কিন্তু অবরোধের কারণে সেই পেয়ারাই এখন তার গলার কাঁটা।
জিল্লুর রহমান বলেন, বিএনপি-জামায়াতের অবরোধের কারণে পাইকার আসছে না। এদিকে পেয়ারা পচে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। তাই ২০ কেজি পেয়ারা পানির দরে বিক্রি করেছি।
শুধু জিল্লুর রহমান নয়, একই অবস্থা এলাকার সব পেয়ারা চাষির। উৎপাদিত পেয়ারা মোকামে পাঠাতে না পারায় নষ্ট হচ্ছে বাগানে। কিছু পেয়ারা বিক্রি করা গেলেও পাওয়া যাচ্ছে না কাঙ্ক্ষিত দাম।
জেলা কৃষি অধিদপ্তরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, চলতি মৌসুমে চাঁপাইনবাবগঞ্জে ৭৮৫ হেক্টর জমিতে পেয়ারা চাষ হচ্ছে। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১৭ হাজার ৭৬০ টন। এবার আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ফলনও হয়েছে ভালো। এসব পেয়ারা ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় বিভিন্ন পরিবহনের মাধ্যমে চলে যায়। অবরোধের কারণে পরিবহন মালিকরা ট্রাক নামান না। চাষিরাও উৎপাদিত পেয়ারা অন্য জেলায় পাঠাতে পারছেন না। এতে আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছেন তারা।
শহরের সেন্টু মার্কেটে চারজন চাষি পাইকারের অপেক্ষায় বসে ছিলেন। তারা জানান, হাতেগোনা কয়েকজন পাইকার এলেও পেয়ারার দাম বলছে কম। অবরোধের আগে পরিপক্ব পেয়ারা প্রতি মণ বিক্রি হয়েছে ১ হাজার থেকে ১ হাজার ৩০০ টাকায়। এখন সেই পেয়ারা সাড়ে ৭০০ থেকে ৮০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এতে লাভ দূরের কথা, উৎপাদন খরচই উঠছে না। খুচরা বাজারে ৯০ টাকার পেয়ারা ৪০ থেকে ৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
নাচোল উপজেলার পেয়ারা চাষি সালাম বলেন, অবরোধের কারণে ঢাকায় পেয়ারা পাঠাতে পারছি না। পাইকাররাও যোগাযোগ করছেন না। ৩০ বিঘা জমিতে পেয়ারা চাষ করেছি। কমপক্ষে ১৫ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। পেয়ারা বিক্রি করে লাভ দূরের কথা, শ্রমিক খরচই উঠছে না।
শিবগঞ্জের সমন্বিত খামার মালিক মাসুদ রানা বলেন, পেয়ারা পাকলে ঘরে রাখা যায় না। তাই নষ্ট হওয়ার আগেই কম দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। হরতাল-অবরোধের আগে ১ হাজার ২৫০ থেকে ১ হাজার ৩৫০ টাকায় প্রতি মণ পেয়ারা বিক্রি হয়েছিল। এখন ৮০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
জেলা কৃষি অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মুনজের আলম মানিক বলেন, এমনিতেই কৃষক ফসল ফলিয়ে কাঙ্ক্ষিত দাম পান না। তার ওপর রাজনৈতিক অস্থিতিশিলতা যোগ হয়েছে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ড. পলাশ সরকার বলেন, উৎপাদিত পেয়ারা যথাসময়ে মোকামে পাঠাতে না পারলে ব্যাপক লোকসান গুনতে হবে চাষিদের।