ঢাকা বৃহস্পতিবার, ০৭ ডিসেম্বর ২০২৩

সাইকেল ছেড়ে মঞ্জু কেন নৌকায়

আসন পুনর্বিন্যাসে তছনছ জেপির ঘাঁটি, সাইকেলের কাণ্ডারিরাই এখন প্রতিদ্বন্দ্বী

সাইকেল ছেড়ে মঞ্জু কেন নৌকায়

আনোয়ার হোসেন মঞ্জু

সুমন চৌধুরী, বরিশাল ও রিয়াজ মাহমুদ মিঠু, ভাণ্ডারিয়া (পিরোজপুর)

প্রকাশ: ২১ নভেম্বর ২০২৩ | ২৩:৩৮ | আপডেট: ২১ নভেম্বর ২০২৩ | ২৩:৪১

বর্ষীয়ান রাজনীতিক আনোয়ার হোসেন মঞ্জু ১৯৯৬ সালে জাতীয় পার্টি (জেপি) প্রতিষ্ঠার পর থেকেই আওয়ামী লীগঘেঁষা। ১৪ দলীয় জোটের শরিক হলেও এ পর্যন্ত সব নির্বাচনে জেপি দলীয় ‘সাইকেল’ প্রতীকে অংশ নিয়েছে। তবে আসন্ন সংসদ নির্বাচনে দলীয় প্রতীক পরিহার করে ‘নৌকা’ নিয়ে ভোট করতে চান জানিয়ে নির্বাচন কমিশনে (ইসি) চিঠি দিয়েছেন মঞ্জু।

এরপর থেকে রাজনৈতিক মহলে আলোচনা– কেন তিনি সাইকেল ছেড়ে নৌকায়? খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মঞ্জু একাই সংসদে দলের প্রতিনিধিত্ব করছেন। বিভিন্ন মেয়াদে ১৭ বছর পূর্ণ মন্ত্রী ছিলেন। পিরোজপুর-২ আসনে তিনি সাতবার ও তাঁর স্ত্রী তাসমিমা হোসেন একবার এমপি নির্বাচিত হন। আসনটিকে বলা হয় জেপির আঁতুরঘর।

এক সময়ে উপজেলা ও ইউনিয়নের চেয়ারম্যান-মেম্বর এমনকি পৌর মেয়র– সবাই জেপি থেকে নির্বাচিত হতেন। কিন্তু তারা দল ত্যাগ করায় চলতি বছরে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি শূন্যের কোঠায় নেমেছে জেপির।

আবার নির্বাচন কমিশনের আসন পুনর্বিন্যাসে মঞ্জুর ৩৭ বছরের সাজানো নির্বাচনী মাঠ তছনছ হয়ে গেছে। নির্বাচনী এলাকায় সাবেক শিষ্যরাই এখন তাঁর শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠেছেন। ফলে আসন্ন নির্বাচনে সাইকেল প্রতীকের জয় অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। এ কারণেই জয় নিরাপদ করতে মঞ্জু সাইকেল ছেড়ে নৌকা নিয়ে নির্বাচনের আগ্রহ প্রকাশ করেছেন বলে স্থানীয়রা মনে করছেন।

ভাণ্ডারিয়া-কাউখালী-ইন্দুরকানী আসন নিয়ে গঠিত পিরোজপুর-২ আসনে ১৯৮৬ সাল থেকে নির্বাচিত হয়ে আসছেন মঞ্জু। এবার আসন পুনবির্ন্যাসে ভাণ্ডারিয়া-কাউখালী-নেছারাবাদ (স্বরূপকাঠি) নিয়ে পিরোজপুর-২ গঠিত হয়েছে। রিট আবেদন হলেও আদালত ইসির সিদ্ধান্ত বহাল রেখেছেন। ফলে নেছারাবাদের ভোটারদের কাছে মঞ্জু একেবারেই নতুন মুখ, জেপিরও সাংগঠনিক ভিত্তি নেই। অথচ আসনের তিন উপজেলার মধ্যে অর্ধেকের বেশি ভোট স্বরূপকাঠিতে। ৩ লাখ ৮১ হাজার ৪৯৫ ভোটারের মধ্যে স্বরূপকাঠিতেই ভোটার ১ লাখ ৮৮ হাজার ১৫২ জন।

প্রতিদ্বন্দ্বী সাইকেলের সাবেক চালকরা

পিরোজপুর-২ আসনে মনোনয়নপ্রত্যাশী জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মহিউদ্দিন মহারাজ ব্যক্তিগত কর্মকর্তা ছিলেন মঞ্জুর। পরে তিনি জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হন। মহারাজের ভাই উপজেলা চেয়ারম্যান মিরাজুল ইসলাম ভাণ্ডারিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। এমপি প্রার্থী হওয়ার লক্ষ্যে দুই ভাই জেপিকে কোণঠাসা; বিপরীতে আওয়ামী লীগকে শক্তিশালী করার উদ্যোগ নেন। এরই ধারাহিকতায় ভাণ্ডারিয়ায় জেপি থেকে নির্বাচিত উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান, তিন ইউপি চেয়ারম্যান ও মেম্বার এবং বিভিন্ন ইউনিয়ন পর্যায়ের নেতা একে একে আওয়ামী লীগে যোগ দেন। গত ৮ অক্টোবর আওয়ামী লীগে যোগ দেন কাউখালী উপজেলা চেয়ারম্যান ও জেপি সভাপতি আবু সাইদ মিয়াসহ  কয়েকশ নেতাকর্মী। ১৭ জুলাই ভাণ্ডারিয়া পৌরসভা নির্বাচনে নৌকা প্রার্থীর কাছে সাইকেল প্রতীকের প্রার্থী মঞ্জুর চাচাতো ভাই জেপির প্রেসিডিয়াম সদস্য মহিবুল হোসেন মাহিম বিপুল ভোটে পরাজিত হন।

বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়ায় আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর এক সময়ের আস্থাভাজন ধাওয়া ইউনিয়ন চেয়ারম্যান সিদ্দিকুর রহমানসহ অনেককে জেপি থেকে বহিষ্কার করা হয়। জানতে চাইলে সিদ্দিকুর বলেন, ‘৩৮ বছর এমপি থাকার পর নিজের মার্কা ছেড়ে নৌকার ওপর ভর করা মঞ্জুর দেউলিয়াত্ব প্রমাণ করে।’

জেপি ত্যাগ করা কাউখালী উপজেলা চেয়ারম্যান আবু সাইদ মিয়া বলেন, ‘জেপি করে এলাকায় কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন করতে পারছিলাম না। মঞ্জু উন্নয়নে তেমন গুরুত্ব দিতেন না। জেপি ছাড়ার পর যথেষ্ট উন্নয়ন বরাদ্দ পাচ্ছি।’

জেলা আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণবিষয়ক সম্পাদক আবু বক্কর সিদ্দিক মন্টু হাওলাদার বলেন, ‘মঞ্জু ১৪ দলের সমর্থনে নির্বাচিত হলেও আমাদের মূল্যায়ন করেননি।’

নেছারাবাদ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এস এম মুয়িদুল ইসলাম বলেন, ‘সাইকেল নিয়ে জেতার সক্ষমতা আর মঞ্জুর নেই। তাই তিনি নৌকায় ভর করতে চাচ্ছেন।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর চাচাতো ভাই ও জেপির প্রেসিডিয়াম সদস্য মহিদুল ইসলাম মাহিম সমকালকে বলেন, ‘জেপির সাংগঠনিক সংকট নেই। তবে ইন্দুরকানী বাদ দিয়ে স্বরূপকাঠি অন্তর্ভুক্ত করে পিরোজপুর-২ আসন পুনর্বিন্যাস করায় সংকটে পড়তে হয়েছে। দুই উপজেলার চেয়ে বেশি ভোটার স্বরূপকাঠিতে। অথচ সেখানে সাইকেল ভোটারদের কাছে পরিচিত নয়। এজন্য জেপি নৌকা নিয়ে নির্বাচনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘কেউ জেপি ছাড়েনি। তাদের বহিষ্কার করা হয়েছে।’

আরও পড়ুন