১৫ চুন কারখানায় স্বাস্থ্যঝুঁকি

সিদ্ধিরগঞ্জের মক্কীনগর এলাকায় মেসার্স আরাফাত লাইমস নামের চুন তৈরির কারখানার সামনে পাথরের স্তূপ সমকাল
শাহজাহান জনি, সিদ্ধিরগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ)
প্রকাশ: ২২ নভেম্বর ২০২৩ | ০০:২৮
নারায়ণগঞ্জের ঘনবসতিপূর্ণ আবাসিক এলাকা সিদ্ধিরগঞ্জে পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র নবায়ন ছাড়াই চলছে ১৫টি চুন কারখানা। কারখানাগুলো থেকে ছড়িয়ে পড়া বিষাক্ত কালো ধোঁয়া, পাথরের গুঁড়া ও উৎকট গন্ধে পরিবেশ দূষণের পাশাপাশি স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়েছে এলাকাবাসী।
জানা যায়, নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ১ নম্বর ও ৪ নম্বর ওয়ার্ডে ১৯৮৫ সাল থেকে পর্যায়ক্রমে এসব কারখানা গড়ে ওঠে। সিটি করপোরেশনের লাইসেন্স ও পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র নবায়ন ছাড়াই বছরের পর বছর কারখানাগুলোতে পাথর পুড়িয়ে চুন উৎপাদন
করা হচ্ছে। পরিবেশ অধিদপ্তর এসব কারখানাকে অন্য স্থানে সরিয়ে নেওয়ার জন্য একাধিকবার নোটিশ দিলেও এগুলো সরানো হচ্ছে না। এলাকাবাসীর অভিযোগ এসব কারখানার মালিকদের মধ্যে ওয়ার্ড কাউন্সিলর, আওয়ামী লীগ, যুবলীগ নেতা থাকায় এ নোটিশ যেমন কার্যকর হচ্ছে না, তেমনি কারখানাগুলোর বিরুদ্ধে কেউ কিছু বলার সাহস পাচ্ছে না।
পাইনাদি এলাকার বাসিন্দা রাবেয়া আক্তার ও লিটন মিয়া বলেন, চুন কারখানাগুলো থেকে পাথরের গুঁড়া, বিষাক্ত কালো ধোঁয়া ও উৎকট গন্ধ ছড়িয়ে পড়ে এলাকার পরিবেশ দূষিত হচ্ছে। স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়েছে এলাকাবাসী। শিশুরা বেশি স্বাস্থ্যঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।
হিরাঝিল এলাকার বাসিন্দা জসিম উদ্দিনের ভাষ্য– চুন কারখানাগুলোর কারণে যেসব মানুষের শ্বাসকষ্ট রয়েছে, তারা প্রতিনিয়ত আরও বেশি শ্বাসকষ্টে ভুগছেন।
সূত্র জানায়, আবাসিক এলাকার পরিবেশ দূষণ রোধে তিন বছর আগে কারখানাগুলো সরিয়ে নেওয়ার জন্য নারায়ণগঞ্জ পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে একাধিকবার নোটিশ দেওয়া হয়। তখন থেকে পরিবেশ অধিদপ্তর কারখানাগুলোর ছাড়পত্র নবায়ন করছে না, সিটি করপোরেশনও ট্রেড লাইসেন্স নবায়ন করছে না। তবু অবাধে চলছে কারখানাগুলো।
সিদ্ধিরগঞ্জের সিআইখোলা এলাকায় রয়েছে ১ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আনোয়ার ইসলামের মেসার্স জাজিরা লাইমস, পাশাপাশি রয়েছে নাসিক ৩ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ সভাপতি খোরশেদ আলমের মেসার্স ঢাকা লাইমস ও মেসার্স যমুনা লাইমস। পাইনাদিতে ১ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর যুবলীগ নেতা ওমর ফারুকের মেসার্স মদিনা লাইমস। হিরাঝিলে জালাল উদ্দিনের মেসার্স সুরমা লাইমস, পাশেই মেসার্স রকি লাইমস। এর ১০০ গজ পশ্চিমে ফয়সাল নেওয়াজ রানার মেসার্স ফয়সাল লাইমস। মিজিমিজি পূর্বপাড়ায় রয়েছে শফিউল্ল্যাহর মেসার্স শরীফ লাইমস। সিদ্ধিরগঞ্জপুল এলাকায় মৃত আবু তালেবের মেসার্স ভাই ভাই লাইমস, আটি ওয়াপদা কলোনিতে শহিদ হাসান বিটুর মেসার্স রহমান লাইমস, মক্কীনগর এলাকায় হযরত আলীর মেসার্স আরাফাত লাইমস, ৪ নম্বর ওয়ার্ডের আটি ওয়াপদা কলোনিতে সোহেল রানার মেসার্স খাজা লাইমস, নারায়ণগঞ্জ-আদমজী সড়কের আটি এলাকায় রয়েছে আব্দুল হাইয়ের মেসার্স মেঘনা লাইমস, জালাল উদ্দিনের মেসার্স আশ্রাব আলী লাইমস ও মো. সাদেকের মেসার্স হারুন লাইমস।
জানা গেছে, তিতাস গ্যাসের নিয়ম থাকলেও কারখানাগুলোতে কোনো ছাদ নেই। ফলে গ্যাসের মাধ্যমে পাথর পোড়ানোর সময় আগুন দাউ দাউ করে অনেক ওপরে ওঠে এবং চুনের গুঁড়া আশপাশের রাস্তাঘাট ও বাড়িতে ছড়িয়ে পড়ে। আগুনের প্রচণ্ড উত্তাপে কারখানার আশপাশের বাড়িঘরের বাসিন্দারা ভোগান্তিতে রয়েছেন।
পাইনাদির বাসিন্দা আলাউদ্দিন বলেন, পাথরের গুঁড়া ও ধোঁয়া থেকে রক্ষা পেতে ঘরের জানালা সব সময় বন্ধ রাখতে হয়।
আটি এলাকার বাসিন্দা শাহিনুর আক্তার বলেন, চুন কারখানার কারণে এলাকায় বসবাস করতে তাদের নানা ধরনের সমস্যা হচ্ছে। বাড়িঘরে চুনের গুঁড়া জমা হয়। ধোঁয়ায় শ্বাসকষ্টসহ বাড়ছে নানা ধরনের রোগব্যাধি।
পরিবেশ অধিদপ্তরের নারায়ণগঞ্জের উপপরিচালক আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ২০১৯ সাল থেকে তারা চুন কারখানার ছাড়পত্র নবায়ন
বন্ধ রেখেছেন। আবাসিক এলাকার পরিবেশ দূষণ রোধে কারখানাগুলোকে অন্য জায়গায় সরিয়ে নেওয়ার জন্য নারায়ণগঞ্জ পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে একাধিকবার নোটিশ দেওয়া হয় বলে জানান ওই কর্মকর্তা।
নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ১ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও সিদ্ধিরগঞ্জ চুন কারখানা মালিক সমিতির সভাপতি আনোয়ার ইসলাম বলেন, এ শিল্পের সঙ্গে কয়েকশ পরিবারের জীবন-জীবিকা জড়িত। তাদের যদি সরকার অন্য জায়গায়
ব্যবস্থা করে দেয়, তাহলে তারা সেখানে কারখানাগুলো নিয়ে যাবেন।
তিনি আরও বলেন, যখন কারখানাগুলো গড়ে তোলা হয় তখন এলাকা ফাঁকা ছিল; ঘরবাড়ি ছিল না বললেই চলে। যার কারণে একের পর এক কারখানা গড়ে তোলা হয়েছে।