লক্ষ্মী রানী দাসের স্বামী ছিলেন নরসুন্দর। পৃথিবীর মায়া কাটিয়ে চলে গেছেন বহু বছর আগে। সেই থেকে লক্ষ্মী রানী মানুষের বাড়িতে কাজ করে নিজের জীবন সংগ্রাম চালিয়ে যান। নিজের কোনো আশ্রয় না থাকায় থাকেন অন্যের বাড়িতে। তবে ঈশ্বরগঞ্জের সোহাগী ইউনিয়নের ছোট তারাকান্দি গ্রামের বৃদ্ধা লক্ষ্মী রানী পেতে যাচ্ছেন স্বপ্নের মতো একটি ঘর। শুধু লক্ষ্মী রানী নয় মুজিববর্ষ উপলক্ষে ময়মনসিংহে এক হাজার ৩০৫ অসহায় পরিবারকে দেওয়া হচ্ছে নতুন ঠিকানা। ইতোমধ্যে অসহায়দের গৃহনির্মাণ কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। 

জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, ‘বাংলাদেশের একজন মানুষও গৃহহীন থাকবে না’ প্রধানমন্ত্রীর এই নির্দেশনা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ময়মনসিংহে ৪ হাজার ৭০৮ জন ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারের তালিকা করা হয়। ২০২০-২১ অর্থ বছরে মুজিব শতবর্ষে ভূমিহীন ও গৃহহীন অর্থাৎ ‘ক’ শ্রেণির গৃহ নির্মাণের জন্য প্রথম পর্যায়ে জেলার ১৩টি উপজেলায় ১ হাজার ৩০৫টি গৃহের অনুমোদন দেওয়া হয়। আশ্রয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে কর্মসূচির আওতায় প্রথম পর্যায়ে ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে দুই শতক খাস জমি দিয়ে ঘর নির্মাণ করে দেওয়া হচ্ছে। দুই কক্ষ বিশিষ্ট প্রতিটি আধাপাকা ঘরে নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে এক লাখ ৭১ হাজার টাকা। পরিবহনে প্রতি ঘরের জন্য আরো ৪ হাজার টাকা খরচ ধরা হয়েছে। টিনের চাল, দেয়াল ও মেঝে পাকা বাড়িগুলো সরকার নির্ধারিত একই ডিজাইনে নির্মাণ করা হচ্ছে। বাড়িতে থাকছে রান্নাঘর, সংযুক্ত টয়লেট ও ইউলিটি স্পেসসহ অন্যান্য সুবিধা। নভেম্বরের শেষ সপ্তাহে নির্দেশনা পাওয়ার পরই জেলা জুড়ে খাস জমি চি‎হ্নিতকরণ ও ডিসেম্বরের শুরু থেকে গৃহ নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে। আগামী ১৫ জানুয়ারির মধ্যে কাজ শেষ করার জন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নির্দেশনা থাকলেও ১০ জানুয়ারির মধ্যে গৃহ নির্মাণ কাজ শেষ করার জন্য চেষ্টা চলছে জেলা জুড়ে।

ভূমিহীন ও গৃহহীন হয়ে কষ্টে দিন পার করা পরিবারের জন্য জেলার সদর উপজেলায় ২৫০টি, গফরগাঁওয়ে ২০০টি, ভালুকায় ১৯৯টি, গৌরীপুরে ১০২টি, হালুয়াঘাটে ১০০টি, ফুলপুরে ৯৭টি, নান্দাইলে ৬২টি, ঈশ্বরগঞ্জ, মুক্তাগাছা, ত্রিশাল, ফুলবাড়িয়া, তারাকান্দায় ৫০টি করে এবং ধোবাউড়ায় ৪৫টি ঘর নির্মাণের কাজ প্রায় শেষের পথে। ঘরগুলোতে ভিক্ষুক, ভবঘুরে, গৃহপরিচারিকসহ ছিন্নমূল মানুষকে ঠাঁই দেওয়া হবে।

ঈশ্বরগঞ্জের ইউএনও মো. জাকির হোসেন বলেন, উপজেলার বেশ কয়েকটি স্পটে চলছে ভূমিহীন ও গৃহহীনদের জন্য গৃহনির্মাণের কাজ। ইতোমধ্যে ঘরগুলোর কাজ প্রায় শেষের পথে। ঘরগুলোতে তালিকাভুক্ত অসহায়দের নতুন ঠিকানা দেওয়া হবে। 

তিনি বলেন, যাদের ঘর নাই তাদের সামাজিক কোনো পরিচিতি নেই। ঘরগুলো অসহায় মানুষগুলোকে সামাজিক মর্যাদা দেবে।

ফুলপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার সীতেষ চন্দ্র সরকার বলেন, ঘরগুলোতে এখন টিনের ছাউনি দেওয়া হবে। চকচকে বাড়িগুলোতে যাদের ঠাঁই হবে তারা অত্যন্ত অসহায়। 

ময়মনসিংহ জেলা প্রশাসক মো. মিজানুর রহমান বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী উপকারভোগী নির্বাচন ও ঘরের গুণগত মান নিশ্চিতকরণ এবং নির্দিষ্ট সময়ে ঘর হস্তান্তরের জন্য কাজ চলছে। ঘরগুলো সুষ্ঠুভাবে নির্মাণে টিম সর্বাত্মক কাজ করে যাচ্ছে। দ্রত এবং গুণগত মান নিশ্চিত করে ঘর নির্মাণের পর তা উপকারভোগীদের মাঝে হস্তান্তর করা হবে।