জালিয়াতি করে ভোট কেড়ে নেওয়াসহ তিন অভিযোগে নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে তিনটি মামলা করার ঘোষণা দিয়েছেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) নির্বাচনে বিএনপির পরাজিত মেয়র প্রার্থী ডা. শাহাদাত হোসেন। তিনি বলেছেন, নির্বাচনে বাস্তবে সাড়ে ৭ শতাংশ ভোট পড়লেও দেখানো হয়েছে ২২ শতাংশ।

গতকাল রোববার দুপুরে নগর বিএনপি কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে তিনি ভোটে নানা অনিয়ম তুলে ধরে নতুন নির্বাচনের দাবিও করেছেন। ভোটে কারসাজি ছাড়াও ডা. শাহাদাতের অপর দুই অভিযোগ হলো- ইভিএমে ভোটের সংখ্যার প্রিন্টেড কপি না দেওয়া এবং ঘণ্টায় ঘণ্টায় ভোটের হিসাব না দেওয়া।

চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক ডা. শাহাদাত বলেন, '১৭নং পশ্চিম বাকলিয়া ওয়ার্ডে এক বছর আগে অনুষ্ঠিত উপনির্বাচনে বিএনপি সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থী আরিফুল ইসলাম ডিউক পাঁচ হাজারের বেশি ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছিল। কিন্তু এবারের নির্বাচনে তার ভোট দেখানো হয়েছে ৩৩৪টি। একইভাবে দক্ষিণ বাকলিয়া ওয়ার্ডের ইয়াছিন চৌধুরী আশু, মোহরা ওয়ার্ডের মোহাম্মদ আজম, পাথরঘাটা ওয়ার্ডের ইসমাইল বালিসহ অনেক জনপ্রিয় কাউন্সিলরের প্রাপ্ত ভোট দেখানো হয়েছে মাত্র ২০০ থেকে ৩০০।

ডা. শাহাদাত বলেন, পূর্ব ষোলশহর ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থী হাসান লিটনকে নির্বাচনের আগে থেকে গৃহবন্দি করে রেখেছিল প্রশাসন। ভোটের দিন তার বাসায় হামলা করে তাকে ঘর থেকে বের হতে দেওয়া হয়নি, অথচ নির্বাচনের দু'দিন পরে চান্দগাঁও থানায় তার নামসহ ৩৫ জনকে আসামি করে মামলা দেওয়া হয়েছে। পাথরঘাটা ওয়ার্ডের বিএনপির কাউন্সিলর প্রার্থী ইসমাইল বালীর বাসায় প্রকাশ্যে অস্ত্র উঁচিয়ে গুলিবর্ষণকারী ছাত্রলীগের সহসভাপতিকে এখনও গ্রেপ্তার করা হয়নি। উল্টো ইসমাইল বালীকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

এলাকাভেদে ভোটের ব্যবধান অস্বাভাবিক ছিল উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'কোনো কেন্দ্রে প্রাপ্ত ভোটের হার দেখানো হয়েছে ১ শতাংশ, আবার কোনো কেন্দ্রে ৯৪ শতাংশ। একই ভবনে ২টি কেন্দ্রে ১টিতে ৮৪ শতাংশ অন্যটিতে ১ দশমিক ৬৬ শতাংশ ভোট দেখানো হয়েছে। সবচেয়ে কম ভোট পড়েছে হালিশহর আহমদ মিয়া সিটি করপোরেশন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে। সেখানে ভোটার ২৩৬৫ জন। ভোট পড়েছে মাত্র ৪২টি। অস্বাভাবিক বেশি ভোট দেখানো হয়েছে দক্ষিণ হালিশহর ও রামপুর ওয়ার্ডে। দক্ষিণ হালিশহর এহসানউল উলুম আরাবিয়া মাদ্রাসা কেন্দ্রে ভোটার ৩১০৮, ভোটের হার দেখানো হয়েছে ৯৩ দশমিক ৮২ শতাংশ। রামপুর ওয়ার্ডের ঈদগাহ বড়পুকুর পাড় চিটাগাং লিবার্টি স্কুল অ্যান্ড কলেজ কেন্দ্রে ভোটের হার ৯০ দশমিক ৯৬ শতাংশ।'

শাহাদাত বলেছেন, 'আমি বিভিন্ন কেন্দ্র পরিদর্শনে গিয়ে দেখেছি বেলা ২টা পর্যন্ত ভোট পড়েছে মাত্র ৬ থেকে ৭ শতাংশ। কিন্তু ভোট দেখানো হয়েছে ২২.৫২ শতাংশ। আমার প্রশ্ন হলো দুই ঘণ্টার মধ্যে এত ভোট কোত্থেকে এলো? এতে বোঝা যাচ্ছে প্রিসাইডিং অফিসারের ১৫ শতাংশ ভোট দানের ক্ষমতা নৌকার পক্ষে কাজে লাগিয়েছে।' ডা. শাহাদাত আরও বলেন, 'ভোটের দিন সকাল ৯টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত অন্তত ৬০টি কেন্দ্র ঘুরে দেখেছি। সব কেন্দ্র থেকেই বিএনপির এজেন্টদের বের করে দেওয়া হয়েছে। ভোটারের উপস্থিতিও ছিল অনেক কম। দুপুরের পর দুই ঘণ্টায় ভোটারের উপস্থিতি অস্বাভাবিক দেখানো হয়েছে।'

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির চট্টগ্রাম বিভাগের দায়িত্বে থাকা কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীম, নগর বিএনপির সদস্য সচিব আবুল হাশেম বক্কর, দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সুফিয়ান প্রমুখ।