রাত ১০টার দিকে হঠাৎ ঘরে আগুন। বিষয়টি টের পেয়ে সালেহা বেগম তার মা ফজিলত নেছা, মেজ মেয়ে মাহফুজা আক্তার ও ছোট ছেলে আরাফাতকে দ্রুত ঘরের বাইরে নিয়ে আসেন। তখনও ঘুমাচ্ছিল সেজ মেয়ে ১০ বছরের ফারজানা আক্তার। তাকে আনতে গিয়ে আর ফিরতে পারলেন না মা। কন্যাসহ তিনি পুড়ে অঙ্গার হয়ে গেলেন।

মর্মান্তিক এ ঘটনা ঘটেছে মঙ্গলবার রাতে কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলার ইলিয়টগঞ্জ উত্তর ইউনিয়নের ভেলানগর গ্রামে।

নিহত গৃহবধূ সালেহা বেগম (৩৫) পাঁচ সন্তানের জননী। স্বামী মোহাম্মদ আলী ভূঁইয়া কুয়েতপ্রবাসী। বড় মেয়ে মাহমুদা আক্তারের বিয়ে হয়েছে। ঘটনার দিন বিকেলে তিনি বাবার বাড়ি থেকে শ্বশুরবাড়িতে যান। আরেক ছেলে হোসাইন ছিল মাদ্রাসায়।

নিহত সালেহার শ্বশুর আবদুল আউয়াল ভূঁইয়া বলেন, মঙ্গলবার রাত ১০টার দিকে হঠাৎ টিনের ঘরটিতে আগুন লাগে। আমি ছিলাম অন্য একটি ঘরে। মুহূর্তে আগুন পুরো ঘরে এবং পাশের রান্নাঘরে ছড়িয়ে পড়ে। এ সময় এলাকাবাসী ও বাড়ির লোকজন আগুন নেভানোর চেষ্টা করেন। খবর পেয়ে রাত ১১টার দিকে ফায়ার সার্ভিসের একটি দল ঘটনাস্থলে আসে। এর আগেই আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। এরপর ফায়ার সার্ভিসের লোকজনসহ আমরা ঘরের ভেতরে প্রবেশ করে দেখি আগুনে পুড়ে মা ও মেয়ে অঙ্গার হয়ে গেছে।

তিনি আরও বলেন, পুত্রবধূ সালেহা একে একে তিনজনকে ঘরের বাইরে নিয়ে আসে। অনেক ডাকাডাকি করে ঘুমন্ত ফারজানাকে উঠানো যাচ্ছিল না। তাকে আনতে গিয়ে বিদ্যুতের তারে তার পা জড়িয়ে যায়। এতে বৈদ্যুতিক শক লাগলে সে আর উঠতে পারেনি। যে কারণে পুড়ে মরা গেছে মা-মেয়ে। আগুনে ঘরে থাকা নগদ দুই লাখ টাকাসহ অন্তত ২০ লাখ টাকার মালপত্র পুড়ে গেছে বলে জানান তিনি।

দাউদকান্দি মডেল থানার গৌরীপুর পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ পরিদর্শক সাইফুল ইসলাম সমকালকে বলেন, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট থেকে এ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। আমরা রাতেই মরদেহ উদ্ধার করেছি। বুধবার সকালে মরদেহ দুটি ময়নাতদন্তের জন্য কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা হবে। আমরা ঘটনাটি ভালোভাবে তদন্ত করে দেখছি।

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা ইউনুস মিয়া বলেন, অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় জেলা প্রশাসন থেকে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারটির জন্য ৪০ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কামরুল ইসলাম খানের মাধ্যমে এই অর্থ পরিবারের সদস্যদের কাছে হস্তান্তর করেছি।

দুপুরে ওই বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, প্রবাসী মোহাম্মদ আলীর ঘরটি একেবারেই পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। রান্নাঘরটিরও একই অবস্থা। ওই বাড়ির ১২টি ঘরের মধ্যে শুধু এই ঘর দুটিই পুড়েছে। সময়মতো আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে পারায় বাড়ির অন্য ঘরগুলো রক্ষা পেয়েছে। মা-মেয়ের মৃত্যুর ঘটনায় পুড়ে যাওয়া ঘরের সামনে স্বজনরা আহাজারি করছেন। পাড়া-প্রতিবেশীরা তাদের সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করছেন। নিহত সালেহার মা ফজিলত নেছা অনেকটাই বাকরুদ্ধ।