স্বাধীনতার পরবর্তী সময়ে সিলেট সীমান্তের পর্যটন এলাকা জাফলংয়ের চৈলাখেল (তৃতীয় খণ্ড) মৌজার ৬ দশমিক ৫৮ একর ভূমি বন্দোবস্ত গ্রহণ করে মেসার্স জালালাবাদ লাইম ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড ট্রেডিং অ্যাসোসিয়েশন। চুনাপাথর উত্তোলনের জন্য ১৯৭২ সালের ১১ অক্টোবর ওই ভূমি অধিগ্রহণ করে বন্দোবস্ত দেয় খনিজসম্পদ উন্নয়ন ব্যুরো (বিএমডি)।পরবর্তী সময়ে ওই ভূমিসহ ৭৮ দশমিক ২৭ একর ভূমি অধিগ্রহণ করে 'মাইনিং লিজ' দেওয়া হয়। চুনাপাথরের সেই প্রকল্প না করায় ১৯৯১ সালের ৪ ও ১২ ডিসেম্বর পৃথক চিঠিতে বন্দোবস্ত বাতিল করে বিএমডি।

৩০ বছর ধরে ভূমি নিয়ে সরকার ও অ্যাসোসিয়েশনের মধ্যে টানাপোড়েন চলছে। সর্বশেষ উচ্চ আদালত সেই ভূমির বন্দোবস্ত বাতিলের আদেশের বিরুদ্ধে রুলনিশি জারি ও অন্তর্বর্তীকালীন আদেশ দেন। যদিও ওই এলাকাটি ২০১২ সালে পরিবেশ ও প্রতিবেশ সংকটাপন্ন এলাকা (ইসিএ) হিসেবে ঘোষণা করা হয়। এমনকি ২০১৬ সালের ১১ জানুয়ারি জাফলংকে 'ভূতাত্ত্বিক ঐতিহ্য' ঘোষণা করে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়। এতে জাফলংয়ের ২২ দশমিক ৫৯ একর জায়গাকে সংরক্ষিত ঘোষণা করা হয়। সে জায়গাটিও পড়েছে ৭৮ একরের মধ্যে।

এ অবস্থায় প্রশ্ন দেখা দিয়েছে জাফলংয়ের সেই ৭৮ একর জায়গার মালিক কে- জালালাবাদ লাইম ম্যানুফ্যাকচারার্স না খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়? উচ্চ আদালতের রায়ের পর বন্দোবস্ত বহাল দাবি করে জালালাবাদ লাইম কয়েক মাস আগে প্রশাসনে কাগজপত্র দাখিল করে। এমনকি সেই জায়গায় সাইনবোর্ড টানিয়ে কাজও শুরু করে। তারা দাবি করছে- তাদের জায়গা ইসিএভুক্ত নয়। অবশ্য জায়গাটি ইসিএ দাবি করে গত সোমবার রাতে টাস্কফোর্স অভিযান চালিয়ে বাঁধ অপসারণ ও জরিমানা করে উপজেলা প্রশাসন। অভিযান ও জায়গা প্রসঙ্গে গোয়াইনঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাহমিলুর রহমান সমকালকে বলেন, জায়গাটি ইসিএভুক্ত। রাতের আঁধারে মাটি ভরাট করে তারা বাঁধ নির্মাণ করছিল। তিনি জানান, উচ্চ আদালতের নির্দেশনা আমরা পেয়েছি। সেই অনুযায়ী কাজ করব। আদালত তাদের কেন জায়গা দেওয়া হবে না জানতে চেয়েছেন। এর অর্থ এই নয় যে, তারা পাথর উত্তোলন করবে। ইসিএভুক্ত এলাকায় কোনোভাবেই পাথর উত্তোলন বা প্রকল্প করা যাবে না।

বিএমডির বন্দোবস্ত বাতিলের চিঠি চ্যালেঞ্জ করে ২০১৭ সালে উচ্চ আদালতে রিট আবেদন করেন অ্যাসোসিয়েশনের ব্যবস্থাপনা অংশীদার আফছার উদ্দিন। রিটের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত খনিজসম্পদ ব্যুরোর চিঠিকে বেআইনি উল্লেখ করে অসুবিধা সৃষ্টি না করতে নির্দেশ দেন। জায়গা বুঝে না পাওয়ায় সর্বশেষ গত বছর সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট ডিভিশনে রিট পিটিশন করেন তিনি। ওই বছরের ১৭ আগস্ট উচ্চ আদালত রিটের শুনানি শেষে বন্দোবস্ত বাতিলের আদেশের বিরুদ্ধে স্থগিতাদেশ ও মন্ত্রণালয়ের সচিব, বিএমডির পরিচালকসহ ৭ জনকে ৪ সপ্তাহের মধ্যে কারণ দর্শাতে রুল জারি করেন বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ ও বিচারপতি মো. মাহমুদ হাসান তালুকদার। এ বিষয়ে আফছার উদ্দিন সমকালকে বলেন, উচ্চ আদালতের রায় উপেক্ষা করছে স্থানীয় প্রশাসন। এমনকি রাতের আঁধারে অভিযান চালিয়ে প্রকল্পের কাজও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। তিনি জানান, তাদের বন্দোবস্ত নেওয়া জায়গা ইসিএভুক্ত নয়। সরকারি কোনো কাগজে তার উল্লেখ নেই।