হেফাজতে ইসলামের হরতালে সহিংসতার ঘটনায় পুলিশের করা মামলা থেকে মৃত বিএনপি নেতা এবং ২০ দিন ধরে কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি যুবদল নেতাকে আসামির তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। বিষয়টি গণমাধ্যমে প্রকাশ পাওয়ার পর পুলিশ মামলা থেকে তাদের নাম বাদ দেওয়ার কথা জানিয়েছে।

এ প্রসঙ্গে সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ওসি মশিউর রহমান বলছেন, খসড়া এজাহারে নাম টাইপ করার ভুলে তাদের দু'জনের নাম এসেছিল। ভুল সংশোধন করে আদালতে মামলার কাগজপত্র পাঠানো হয়েছে।

বিষয়টি চোখে পড়ার পর তাদের নাম বাদ দিয়ে চূড়ান্ত এজাহার তৈরি করে আদালতে পাঠানো হয়েছে।

গত রোববার ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কাঁচপুর থেকে সাইনবোর্ড পর্যন্ত ছিল হেফাজতে ইসলাম আহূত হরতাল সমর্থকদের দখলে। বিজিবি-পুলিশের সঙ্গে বারবার সংঘর্ষ ও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। হরতালকারীদের তাণ্ডবে পুলিশ-সাংবাদিকসহ কমপক্ষে ১৫ জন আহত হন। ১২ জন সাংবাদিককে মারধর ও দুটি মিডিয়ার গাড়ি ভাঙচুর করে পিকেটাররা। ভোর থেকে রাত পর্যন্ত এ সড়ক ছিল হরতাল সমর্থকদের দখলে।

পুলিশের তথ্যমতে, এ সময় ১৮টি ট্রাক, বাস ও কাভার্ডভ্যানে আগুন দেওয়া হয়। নির্বিচারে যানবাহনে ভাঙচুর করা হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে প্রায় চার হাজার রাউন্ড গুলি (রাবার, সিসা, চায়নিজ রাইফেল) ছুড়েছে পুলিশ। এক থেকে দেড়শ কাঁদানে গ্যাসের শেলও নিক্ষেপ করা হয়েছে।

সহিংসতার ঘটনার পরদিন গত সোমবার রাতে সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় পুলিশ ও র‌্যাব বাদী হয়ে ছয়টি মামলা করে। মামলায় ১৩৬ জনের নাম উল্লেখসহ তিন সহস্রাধিক জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে। মামলায় বিএনপির সাবেক সাংসদ মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দিন, তার ছেলে নাসিক কাউন্সিলর গোলাম মুহাম্মদ সাদরিল, জেলা বিএনপির সদস্য সচিব অধ্যাপক মামুন মাহমুদ, যুগ্ম আহ্বায়ক মনিরুল ইসলাম রবি, আবদুল হাই রাজু, মহানগর যুবদলের সাধারণ সম্পাদক মমতাজ উদ্দিন মন্তু, মহানগর ছাত্রদল সাধারণ সম্পাদক মমিনুর রহমান বাবু, বিএনপি সমর্থক ২ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ইকবাল হোসেন, জামায়াত নেতা বশিরুল্লাহসহ আরও কয়েকজন বিএনপি-জামায়াতের নেতা-কর্মী-সমর্থককে আসামি করা হয়েছে। তবে মামলায় বাদ পড়েছেন জেলা হেফাজতে ইসলামের শীর্ষস্থানীয় নেতারা।

এদিকে বিএনপি বলছে, হেফাজতের হরতালে তাদের সমর্থন ছিল না। সরকার তাদের ঘায়েল করার জন্য এই মামলাগুলোতে তাদেরও আসামি করেছে।

এদিকে পুলিশের করা পাঁচ মামলার দুটি মামলার বাদী হয়েছেন সিদ্ধিররগঞ্জ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আবু শাহাদাৎ মোহাম্মদ শাহীন ও কাজল চন্দ্র মজুমদার। এসআই শাহীনের করা মামলায় ২৫ নম্বর আসামি করা হয়েছে মৃত বিএনপি নেতা আলী হোসেন প্রধানকে এবং এসআই কাজলের মামলায় ৭ নম্বর আসামি করেছেন আলী হোসেন প্রধানকে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০১৬ সালের ২৪ ডিসেম্বর আলী হোসেন প্রধান কারাগারে বন্দি অবস্থায় মারা যান। তার বয়স হয়েছিল ৬৫ বছর। এর আগে ২০১৬ সালের ৩ নভেম্বর নাশকতার অভিযোগে একটি মামলায় গ্রেপ্তার হন তিনি।

হেফাজতের হরতালে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে এসআই আবু শাহাদাৎ মোহাম্মদ শাহীনের করা মামলাতে যুবদল নেতা শহীদুল ইসলাম ওরফে মো. শহীদুল্লাহকে আসামি করা হয়েছে। অথচ শহীদুল ইসলাম ২০ দিন আগে থেকেই কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি রয়েছেন।