অনুকূল পরিবেশ ও মৌসুমি বৃষ্টিপাতের ফলে এ বছর আমতলী উপজেলায় তরমুজের বাম্পার ফলন হয়েছে। কিন্তু বাম্পার ফলন হলেও আকস্মিক তরমুজের দাম কমে যাওয়ায় কৃষকের কপালে এখন দুশ্চিন্তার ছাপ পড়েছে। ক্রেতাশূন্য তরমুজ বাজার। মহামারি করোনাভাইরাসের ছোবলে দেশে লকডাউন চলায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলে জানিয়েছেন কৃষকরা।
উপজেলা কৃষি কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, এ বছর উপজেলার সাত ইউনিয়নে এক হাজার ৯৯০ হেক্টর জমিতে তরমুজ চাষ হয়েছে। তরমুজ লাভজনক এবং স্বল্পকালীন ফসল হওয়ায় কৃষকরা তরমুজ চাষের দিকে ঝুঁকছেন। এ কারণে এই বছর উপজেলায় প্রচুর পরিমাণে তরমুজ চাষ হয়েছে।
রাওঘার কৃষক হাসেম আলী বলেন, 'এক সময় পেট ভইরা ভাত খাইতে পারতাম না। তরমুজ চাষ কইরা মোগো ভাগ্য ফিররা গেছে। এহন মোরা অনেক টাহা পয়সার মালিক অইছি।'
লাভের আশায় অনেক কৃষক এ বছর তরমুজ চাষ করে এখন দুশ্চিন্তায় দিন কাটাচ্ছেন। করোনার কারণে তরমুজের দাম পড়ে গেছে। বাজারে তরমুজের কোনো ক্রেতা নেই। তাই বেচা-বিক্রিও বন্ধ। ক্ষেতে বিক্রি করতে না পারায় কৃষকরা তরমুজ নিয়ে এসেছেন আমতলীর আড়তে। সেখানেও তারা তরমুজ বিক্রি করতে পারছেন না। কেউ কেউ তরমুজ স্তূপ করে রেখেছেন আমতলী-পটুয়াখালী-কুয়াকাটা মহাসড়কের পাশে।
উপজেলার হলদিয়া চাওড়া ও আমতলী সদর ইউনিয়ন ঘুরে দেখা গেছে, মাঠে-মাঠে তরমুজের ছড়াছড়ি। যেদিকে দু'চোখ যায় শুধু সবুজ লতায় আচ্ছাদিত পাহারের টিলার মতো তরমুজ পড়ে রয়েছে। তরমুজ ক্ষেতে নারী-পুরুষ একত্রে কাজ করছেন তাদের স্বপ্নের ফসল ঘরে তোলার জন্য।
জানা গেছে, গত বছর তরমুজ ১০ হাজার থেকে ১৫ হাজার টাকা দরে ১০০ তরমুজ বিক্রি হতো।
এ বছর ওই তরমুজ বিক্রি হচ্ছে দুই হাজার থেকে তিন হাজার টাকা দরে।
পাইকার আজিজুল হক বলেন, করোনার ছোবলে দেশে এখন লকডাউন চলছে। এ অবস্থায় আকস্মিক তরমুজের দাম পড়ে গেছে।
চাষি মিজানুর ব্যাপারী বলেন, এ বছর ২৪ বিঘা জমিতে তরমুজ চাষ করেছি। খরচ হয়েছে এক লাখ ৮০ হাজার টাকা। কিন্তু বাজারে এ অবস্থা চলতে থাকলে তরমুজ বিক্রি করে কোনো লাভ হবে না। হলদিয়ার দুলাল মোল্লা বলেন, তরমুজের ফলন ভালো হয়েছে। কিন্তু বর্তমানে তরমুজ বিক্রি করতে পারছি না। ক্ষেতেই তরমুজ পচে যাওয়ার অবস্থা হয়েছে। চালান ওঠাতে পারব কিনা সে দুশ্চিতায় আছি।
আড়তদার মো. আবদুস ছালাম বলেন, করোনার লকডাউনের কারণে আমরা তরমুজ কিনে কোথাও পাঠাতে পারছি না। তাই তরমুজ কেনা বন্ধ রাখছি।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সিএম রেজাউল করিম জানান, করোনার কারণে কৃষকরা তাদের উৎপাদিত তরমুজের সঠিক দাম না পেলে সর্বস্বান্ত হয়ে যাবে।