সিরাজগঞ্জে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) তদন্তে খুলেছে আরেকটি মামলার রহস্য জট। ২০১৮ সালের ২৮ জুন ভোরে বেলকুচি উপজেলার ধুকুরিয়াবেড়া গ্রামে পাওয়া গিয়েছিল তাঁত মালিক নুরুল ইসলাম ওরফে নুর ইসলামের ঝুলন্ত লাশ। এ ঘটনায় হওয়া মামলায় পর ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয় আত্মহত্যা করেছেন নুর ইসলাম। পরে আদালতে পুলিশের দেওয়া অভিযোগপত্রেও (চার্জশিট) এটিকে আত্মহত্যা বলে উল্লেখ করা হয়। 

অবেশেষ তিন বছর পর পিবিআইর তদন্তে জানা গেল, খুন হয়েছিলেন নুর ইসলাম। সমকামিতায় বাধ্য করায় তাকে গলা টিপে হত্যা করেন একই গ্রামের তাঁত শ্রমিক ওমর ফারুক। এরপর লাশ গাছে ঝুলিয়ে রেখে আত্মহত্যা বলে প্রচার করেন। ঋণের টাকা তুলতে ব্যর্থ হওয়ায় নুর ইসলাম রাগে-ক্ষোভে আত্মহত্যার পথ বেছে নেন বলে জানান ফারুক। তবে গত ২৯ এপ্রিল আদালতে ১৬৪ ধারায় দেওয়া জবানবন্দিতে হত্যার কথা স্বীকার করেন তিনি।

সোমবার দুপুরে সিরাজগঞ্জ পিবিআই কার্যালয়ে প্রেস ব্রিফিংয়ে পুলিশ সুপার রেজাউল করিম এসব তথ্য জানান। তিনি আরও বলেন, নুর ইসলামের ঝুলন্ত লাশ উদ্ধারের ঘটনায় তার স্ত্রী মনো বেগম বাদী হয়ে ওমর ফারুক এবং তার বাবা আব্দুর রহমান ও মা নাজমা খাতুনসহ চারজনকে আসামি করে বেলকুচি থানায় হত্যা মামলা করেন। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই আব্দুল আলীম ঘটনাটি আত্মহত্যা এবং এতে প্ররোচণার অভিযোগে ফারুক ও বাবা-মাকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট জমা দেন। বাদী পরে নারাজি দিলে আদালত মামলাটি তদন্তের ভার দেন পিবিআইকে।

এদিকে, পিবিআইর তদন্ত চলাকালে সামাজিক ও পারিবারিক চাপে আসামি ওমর ফারুক গত ১ এপ্রিল আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। পরে রিমান্ডে হত্যার কথা স্বীকার করেন। নুর ইসলাম সমকামী ছিলেন এবং তাকে (ফারুক) সমকামিতায় বাধ্য করায় হত্যা করেন বলে আদালতে স্বীকারোক্তি দেন।

ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনের বিষয়ে জানতে চাইলে সিরাজগঞ্জ ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসক ফয়সাল আহম্মেদ বলেন, পুরনো ঘটনাটির সংরক্ষিত নথিপত্র ও সুরতহাল প্রতিবেদন না দেখে এ বিষয়ে মন্তব্য করা সম্ভব নয়।

বেলকুচি থানার ওসি গোলাম মো. মোস্তফা বলেন, পিবিআইর তদন্তের বিষয়টি জানা নেই। মামলার সাবেক তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই আব্দুল আলিমও বেলকুচি থেকে অন্যত্র বদলি হয়েছেন।