- সারাদেশ
- এক বছর ধরে গৃহকর্মীকে ধর্ষণের অভিযোগে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র গ্রেপ্তার
এক বছর ধরে গৃহকর্মীকে ধর্ষণের অভিযোগে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র গ্রেপ্তার

অভিযুক্ত আমজাদ মাহমুদ নিলয়
চাঁদপুরে শহরে একবছর ধরে গৃহকর্মীকে ধর্ষণ করার অভিযোগে আমজাদ মাহমুদ নিলয় (২১) নামে পলাতক এক বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। মঙ্গলবার ভোলা জেলার বোরহানউদ্দিন থানা এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে তাকে চাঁদপুর মডেল থানায় নিয়ে আসা হয়েছে। বুধবার তাকে আদালতে সোপর্দ করা হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ। এ ঘটনায় এর আগে নিলয়ের মা শাহনাজ বেগমকে গ্রেপ্তার করা হলেও পালিয়ে যান বাবা আব্দুল মাজেদ ও নিলয়।
পুলিশ জানায়, চাঁদপুর শহরের ওয়ারলেস এলাকার বীর মুক্তিযোদ্ধা সিরাজ বরকন্দাজের বাড়িতে ভাড়া বাসায় থাকেন চাঁদপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২ এ কর্মরত আব্দুল মাজেদ ও শাহনাজ বেগম দম্পতি। তাদের বাসায় দীর্ঘ চার বছর যাবৎ কাজ করছিল ভিকটিম ওই তরুণী। তারা চার বছর ধরে ভিকটিমকে দিয়ে বাসার কাজ করালেও তাকে কোনো টাকা পয়সা দেয়নি। উপরন্তু তাদের বড় ছেলে ঢাকার একটি বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া আমজাদ মাহমুদ নিলয় (২১) দীর্ঘ এক বছর ধরে মেয়েটিকে ধর্ষণ করেছে।
পুলিশ আরও জানায়, করোনার কারণে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকায় বাবা-মায়ের সঙ্গে চাঁদপুরের বাসাতেই অবস্থান নেন অভিযুক্ত যুবক। তার বাবা-মা যখন কর্মস্থলে চলে যান তখই গৃহকর্মীকে একা পেয়ে এক বছর ধরে ধর্ষণ করছে সে। এ বিষয়টি নিলয়ের বাবা এবং মাকে জানিয়েও কোনো প্রতিকার পাননি অসহায় গৃহকর্মী। উল্টো শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনসহ বিভিন্ন ধরনের ভয়ভীতি দেখিয়ে ভিকটিমকে চুপ থাকতে বাধ্য করে। সর্বশেষ গত ১৪ এপ্রিল দুপুরে আব্দুল মাজেদ দম্পতি অফিসে চলে গেলে এই সুযোগে তাদের ছেলে আমজাদ মাহমুদ নিলয় ওই তরুণীকে ধর্ষণ করে। ভিকটিম সর্বশেষ ঘটনার বিষয়টি আব্দুল মাজেদ দম্পতিকে জানিয়ে প্রতিকার চাইলে মা-ছেলে তাকে নির্যাতন করে। এ অবস্থায় ওই তরুণী দীর্ঘদিনের নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে গত ৩০ এপ্রিল বাসা থেকে পালিয়ে সড়কে এসে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। কিন্তু আশপাশের মানুষ তা দেখে ফেলায় এই যাত্রায় রক্ষা পান তিনি। এমন ঘটনার পর বিষয়টি চাঁদপুর জেলা পুলিশ সুপার মিলন মাহমুদের নজরে পড়ে। তিনি ঘটনার শিকার তরুণীকে উদ্ধার করে সদর মডেল থানা পুলিশকে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেন।
চাঁদপুর সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুর রশিদ জানান, এ ঘটনায় গৃহকর্মী তরুণীর কাছ থেকে বিস্তারিত শুনে ভিকটিমের আবেদনের প্রেক্ষিতে ওই পরিবারের তিনজনের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন তদম আইনে মামলা গ্রহণ করা হয়। মামলার প্রেক্ষিতে শহরের ওয়ারলেস এলাকার বাসায় অভিযান চালায় পুলিশ। এ সময় নিলয়ের মা শাহনাজ বেগমকে আটক করা হয়েছে। পরে তাকে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়।
তিনি বলেন, মূল অভিযুক্ত পলাতক আমজাদ মাহমুদ নিলয় ভোলায় তার এক বন্ধুর বাড়িতে আত্মগোপন করে ছিলেন। আমরা তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় তার অবস্থান শনাক্ত করে মঙ্গলবার সকালে তাকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হই। রাতে তাকে চাঁদপুর মডেল থানায় আনা হয়েছে।
এ বিষয়ে পুলিশ সুপার মো. মিলন মাহমুদ বলেন, বিষয়টি আমি জানতে পেরে তাৎক্ষণিক থানা পুলিশকে নির্দেশনা দেই। কিন্তু পুলিশ যাওয়ার আগেই অভিযুক্ত যুবক এবং তার বাবা পালিয়ে যায়। তবে তার মাকে গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়। তিনি বলেন, ২২ ধারায় ভিকটিম ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে ঘটনা সম্পর্কে বিস্তারিত জানিয়েছে। ঘটনা সত্য। বাড়ির আশপাশের লোকজনও আমাদের জানিয়েছে মেয়েটিকে মাঝে মধ্যেই মারধর করা হতো। বিষয়টি বাড়ির মালিককেও বিভিন্ন সময় জানানো হয়।
পুলিশ সুপার জানান, ভিকটিমকে ডাক্তারি পরীক্ষা করানো হয়েছে। রিপোর্ট পেলেই সবকিছু পরিস্কার হয়ে যাবে। আমরা মেয়েটিকে ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে পাঠাবো। তার অভিভাবক তাকে নিতে চাইলে নিবে। না হলে আমরা একটা ব্যবস্থা করবো।
মন্তব্য করুন