- সারাদেশ
- মোবাইল চুরির অভিযোগ তুলে যুবককে পিটিয়ে হত্যা, ‘বেওয়ারিশ’ হিসেবে লাশ দাফন
মোবাইল চুরির অভিযোগ তুলে যুবককে পিটিয়ে হত্যা, ‘বেওয়ারিশ’ হিসেবে লাশ দাফন

নিহত মনির হোসেন
কুমিল্লা নগরীর অদূরে আদর্শ সদর উপজেলার দুর্গাপুর এলাকায় মোবাইল চুরির অভিযোগ তুলে মনির হোসেন (৪৫) নামের এক ব্যক্তিকে পিটিয়ে হত্যা করে পরিচয় গোপন করে হাসপাতালে লাশ রেখে পালিয়ে যায় নির্যাতনকারীরা। পরে পুলিশ ‘বেওয়ারিশ’ হিসেবে লাশ দাফন করে। ঘটনার ৪ দিন পর স্বজনরা তার খোঁজে থানায় গিয়ে জানতে পারে মনির নিহত হয়েছেন।
পুলিশের কাছে থাকা লাশের ছবি দেখে তার পরিচয় নিশ্চিত করে স্বজনরা। ৩ মেয়ের জনক মনির জেলার আদর্শ সদর উপজেলার বলারামপুর এলাকার মৃত আবদুল জব্বারের ছেলে। তিনি একই উপজেলার দুর্গাপুর এলাকায় ভাড়া বাসায় থেকে ফেরি করে গৃহস্থালি মালামাল বিক্রি করতেন।
এ ঘটনায় রোববার রাতে নিহতের স্ত্রী সালমা বেগম বাদী হয়ে আটজনের বিরুদ্ধে কোতয়ালী মডেল থানায় মামলা দায়ের করেছেন। মামলায় অভিযুক্তরা হচ্ছেন-একই উপজেলার ঘোড়ামারা কৃষ্ণনগর গ্রামের তৌহিদ, মনির, এরশাদ, আজাদ, রাশেদ মিয়া, জাহিদ, আমির আলী ও আরিফ হোসেন। তবে সোমবার দুপুর সাড়ে ১২টায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত পুলিশ অভিযুক্ত কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি।
মামলায় অভিযোগ করা হয়, চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে মনির তার একটি নষ্ট মোবাইল মেরামত করার জন্য দুর্গাপুর এলাকার তৌহিদের কাছে দেন। কিন্তু মোবাইল সেটটি ফেরত না পেয়ে ১১ মে সন্ধ্যায় মনির দোকানে গেলে তৌহিদ তাকে মারধর করেন। পরে মোবাইল চুরির অভিযোগ তুলে তৌহিদের অন্য সহযোগী এরশাদ, আজাদ, রাশেদ মিয়া ও জাহিদসহ অজ্ঞাতনামা আরও কয়েকজন মনিরকে মারধর করে। ১৩ মে সকালে পুনরায় একই ব্যক্তিরা তাকে বাসার অদূরে উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় পেয়ে মারধর করে রাস্তা থেকে উঠিয়ে একই উপজেলার ঘোড়ামারা কৃষ্ণনগর গ্রামে তৌহিদের বাড়িতে নিয়ে মারধর করে। এতে তিনি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। এ সময় জরুরি বিভাগে মনিরের নাম ও পরিচয় অজ্ঞাত হিসেবে লেখা হয়। রাতে হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়। পরদিন হাসপাতাল থেকে কোতয়ালী মডেল থানায় খবর দেওয়ার পর পুলিশ ময়নাতদন্তের পর মরদেহ বেওয়ারিশ হিসেবে দাফনের জন্য আঞ্জুমানে মফিদুলে হস্তান্তর করে। ১৫ মে নগরীর টিক্কাচর কবরস্থানে বেওয়ারিশ হিসেবে মনিরের দাফন সম্পন্ন হয়।
নিহত মনির হোসেনের ভায়রা ভাই আদর্শ সদর উপজেলার দুর্গাপুর উত্তর ৫ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি আলমগীর হোসেন জানান, মনিরকে মারধর করে কোথায় নিয়ে যাওয়া হয়েছিল এ নিয়ে আমাদের নিশ্চিত কোনো ধারণা ছিল না। তাই হাসপাতাল, কারাগার এবং সর্বশেষ থানায় গিয়ে ছবি দেখে নিশ্চিত হই বেওয়ারিশ হিসেবে দাফন করা ব্যক্তিই মনির।
নিহত মনিরের স্ত্রী ও মামলার বাদী সালমা বেগম বলেন, মামলায় অভিযুক্ত এরশাদ ও তৌহিদ তাদের অপর সহযোগীদের নিয়ে আমার স্বামীকে হত্যা করেছে। তারাই তাকে হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত জেনে পালিয়ে যায়। ঘটনার শুরুতে এলাকার লোকজন প্রভাবশালী এসব আসামিদের বিরুদ্ধে মুখ না খুললেও মনিরের মৃত্যুর পর এখন তারা মনিরের উপর ভয়াবহ নির্যাতনের বর্ণনা দিচ্ছে।
তিনি অবিলম্বে ঘটনায় জড়িত সব আসামির গ্রেপ্তার ও বিচার দাবি করেছেন।
এ বিষয়ে সোমবার দুপুরে কোতয়ালী মডেল থানার ওসি আনোয়ারুল হক জানান, হাসপাতাল থেকে অজ্ঞাত লাশ হিসেবে ওই ব্যক্তির মরদেহ দাফন করার আগে বিধি মোতাবেক ময়নাতদন্ত করা হয়েছে। এখন তার পরিবারের লোকজন এসে ছবি দেখে তাকে শনাক্ত করেছে। নিহতের স্ত্রী আটজনের বিরুদ্ধে থানায় মামলা করেছেন। সকালে আসামিদের বাড়ি থেকে কিছু আলামত জব্দ করা হয়েছে। এ ঘটনার সঙ্গে যারা জড়িত রয়েছে এখন সবাই এলাকা ছেড়ে পালিয়েছে। তাদের গ্রেপ্তারে পুলিশ অভিযান চালাচ্ছে।
মন্তব্য করুন