- সারাদেশ
- সালিশে হাজির না হওয়ার 'অপরাধে' বাড়িতে হামলা, নারীসহ আহত ৪
সালিশে হাজির না হওয়ার 'অপরাধে' বাড়িতে হামলা, নারীসহ আহত ৪

যাশোরের কেশবপুরে সালিশি বৈঠকে হাজির না হওয়ার 'অপরাধে' ইউপি সদস্যের নেতৃত্বে সংখ্যালঘু এক পরিবারে হামলার অভিযোগ উঠেছে। এ সময় হামলাকারীদের মারধরে ওই পরিবারের ৩ নারীসহ ৪ জন আহত হয়েছেন। আহতদের উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। এ ঘটনায় রোববার রাতে ওই ইউপি সদস্যসহ ৬ জনের বিরুদ্ধে থানায় লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়েছে।
অভিযোগ ও এলাবাবাসী সূত্রে জানা গেছে, শনিবার কেশবপুর উপজেলার গৌরীঘোনা ইউনিয়নের ভেরচি দাস পাড়ার চায়না রাণী দাস তার ভাশুর অশোক দাসের গাছ থেকে জামরুল পেড়ে খান। এতে অশোক দাস রেগে গিয়ে তাকে মারধর করেন। এ সময় চায়নার অনার্স পড়ুয়া ছেলে সুমন দাস প্রতিবাদ করলে দু’পক্ষের মধ্যে মারধরের ঘটনা ঘটে। পরে বিষয়টি নিয়ে অশোক দাস ভেরচী ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আসাদুজ্জামানের কাছে অভিযোগ দেন। ইউপি সদস্য মোবাইল ফোনে সুমন দাসকে ওই এলাকার একজন প্রভাবশালী আওয়ামীলীগ নেতার বাড়িতে যেতে বলেন। সুমন সেখানে গেলে তিনি তাকে মারধরের হুমকি দিয়ে শনিবার সন্ধ্যায় বাবা-মাকে নিয়ে ভেরচী বাজারে মুক্তি সংঘে সালিশে হাজির থাকার নির্দেশ দেন।
এ দিকে শনিবার সন্ধ্যায় সুমন তার বাবা-মাকে নিয়ে সালিশে উপস্থিত না হওয়ায় রাত সাড়ে ১০টার দিকে ইউপি সদস্য আসাদুজ্জামান কয়েক জনকে সাথে নিয়ে চায়না দাসের বাড়িতে গিয়ে তার ছেলে সুমনের খোঁজ করেন। তাকে না পেয়ে অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ শুরু করলে চায়না দাস এর প্রতিবাদ করেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে ওই ইউপি সদস্য ও তার লোকজন চায়না দাস (৪৫), তার স্বামী গোবিন্দ দাস (৫৫), মেয়ে লক্ষ্মী দাস (২২) ও ননদ পারুল দাসের উপর হামলা চালিয়ে এলোপাথাড়ি মারধর করে। গুরুতর আহত অবস্থায় ওই রাতেই চারজনকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়।
ইউপি সদস্য আসাদুজ্জামান বলেন, সুমনের জ্যাঠা অশোক দাসের অভিযোগের ভিত্তিতে বাবা-মাসহ শনিবার সন্ধ্যায় ভেরচী ক্লাবে সালিশে তাদেরকে আসতে বলা হয়। ওই দিন সন্ধ্যার পর থেকে সালিশের জন্য অনেক বিশিষ্ট ব্যক্তি ক্লাবে অপেক্ষার করার পরও সুমন আসেনি। তাকে মোবাইলে ফোন করা হলে সে ক্লাবে আসতে অস্বীকৃতি জানিয়ে ফোন কেটে মোবাইল বন্ধ করে রাখে।
তিনি জানান, পরে তিনিসহ কয়েক জন সুমনের বাড়িতে তাদের ডাকতে যান। এ সময় সুমনের বাবা গোবিন্দর সঙ্গে কথা কাটাকাটি হলে তাদের এক সঙ্গী গোবিন্দকে একটি চড় মারেন। কিন্তু ওই পরিবারের আর কাউকে মারধর করা হয়নি। তার অভিযোগ, প্রতিপক্ষ সাবেক মেম্বার জাকির ওই পরিবারকে উদ্বুদ্ধ করে নাটক সাজিয়ে চারজনকে হাসপাতালে ভর্তি করে।
গৌরীঘোনা ইউপি চেয়ারম্যান ও আওয়ামীলীগ নেতা হাবিবুর রহমান হাবিব বলেন, ওই ওয়ার্ডে আমারও বাড়ি। অথচ মেম্বার আসাদ আমাকে কিছুই জানাননি। তিনি আরও বলেন, বিষয়টি নিয়ে ক্লাবে না বসে দু’পক্ষকে ইউনিয়ন পরিষদে ডাকানো যেত। তা ছাড়া অধিক রাতে মেম্বার লোকজন নিয়ে নিজে না গিয়ে গ্রাম পুলিশ দিয়ে সুমনকে ডাকতে পারত।
ভুক্তভোগী সুমন দাস জানান, থানায় অভিযোগ করার পর থেকে ইউপি সদস্য আসাদ তাকে হুমকি দিচ্ছেন। এমনকী তাকে ভারতে পাঠিয়ে দেয়ারও হুমকি দেওয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, মেম্বার আসাদ তার জ্যাঠা অশোক দাসকে দিয়ে তার বিরুদ্ধে থানায় মিথ্যা অভিযোগ করিয়েছেন। তিনি এখন নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন।
কেশবপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) বোরহান উদ্দিন বলেন, রোববার সন্ধ্যায় অভিযোগপত্রটি পাওয়ার পর বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে। তদন্তের পর আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মন্তব্য করুন