খুলনাসহ উপকূলীয় জেলাগুলোয় টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণের দাবিতে জনমত জোরালো হচ্ছে। ঘূর্ণিঝড় 'ইয়াসে'র প্রভাবে বেড়িবাঁধ ভাঙা এবং গ্রামের পর গ্রাম প্লাবিত হওয়ার ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে টেকসই বাঁধ নির্মাণের দাবি জানাচ্ছেন উপকূলের নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ। বিভিন্ন কর্মসূচিও পালন করছেন তারা। টেকসই বেড়িবাঁধের দাবিতে শুক্রবার সাতক্ষীরার শ্যামনগরে কাফনের কাপড় পরে মানববন্ধন করেন উপজেলার বিভিন্ন এলাকার মানুষ। খুলনায় মানববন্ধন করে বিভিন্ন সংগঠন।

শুক্রবার সকাল ১০টা থেকে দুই ঘণ্টাব্যাপী শ্যামনগরের পদ্মপুকুর ইউনিয়নের পাতাখালীর ভাঙনকবলিত উপকূল রক্ষা বাঁধের ওপর মানববন্ধন করা হয়। 'একবারই মরব, বার বার নয়', 'কর্তৃপক্ষ মরে গেছে, আমরা বেঁচে করব কী', 'ভাসতে চাই না, বাঁচতে চাই'- এমন নানা স্লোগান সংবলিত প্ল্যাকার্ড হাতে শরীরে কাফনের কাপড় জড়িয়ে নিজেদের দুর্ভোগের কথা তুলে ধরেন ভাঙনের শিকার মানুষ। ইয়াসের প্রভাবে জলোচ্ছ্বাসে বাঁধ ভেঙে তলিয়ে যাওয়া পাতাখালী, ঝাপা, গড়কোমরপুর, বন্যাতলা, খুটিকাটাসহ পার্শ্ববর্তী অংশের দুর্গত এলাকার শিক্ষার্থীরা মানববন্ধনে অংশ নেয়।

ম্যানগ্রোভ স্টুডেন্ট সোসাইটির আয়োজনে এ কর্মসূচিতে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন সংগঠনের সভাপতি আরিফুল ইসলাম, তরুণ জলবায়ু অ্যাক্টিভিস্ট শাহিন বিল্লাহ, তরিকুল ইসলাম, মুহতারাম বিল্লাহ, মুতাসিম বিল্লাহ, হাসানুল বান্না প্রমুখ।

মানববন্ধনে অংশগ্রহণকারীরা বলেন, গত ১২ বছর ধরে সাগরের লোনা পানিতে উপকূলের মানুষ ভাসছে। প্রতিবারই এমন পরিস্থিতিতে শুধু আশ্বাসবাণী শোনালেও কার্যত রক্ষা বাঁধ তৈরির কোনো উদ্যোগ কখনও নেওয়া হয়নি।

এদিকে খুলনা নগরীর শিববাড়ী মোড়ে বিকেল ৪টায় মানববন্ধন করে দক্ষিণবঙ্গ স্বেচ্ছাসেবী ঐক্য পরিষদ। মানববন্ধনে খুলনা ব্লাড ব্যাংক এবং ফুড ব্যাংকের সদস্যরা অংশ নেন। বিকেল সাড়ে ৪টায় মানববন্ধন করে সাতক্ষীরার শ্যামনগরের 'গাবুরা ওয়েলফেলার সোসাইটি'। তারা দ্বীপ ইউনিয়ন গাবুরাসহ বন্যাকবলিত এলাকায় টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণের দাবি জানান।

মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, ষাটের দশকে নির্মাণ করা বেড়িবাঁধ গত অর্ধশত বছরে মেরামত করা হয়নি। বিভিন্ন সময় ভাঙনের পর বাঁধ মেরামতের নামে জনপ্রতিনিধি ও রাজনৈতিক নেতা এবং পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের পকেট ভারী হয়েছে। কিন্তু ঝড়-জলোচ্ছ্বাসে পানিতে ডুবছে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের লাখো মানুষ। দেশের একটি অঞ্চলকে পানিতে ডুবিয়ে কোনো দেশ উন্নত দেশের কাতারে যেতে পারে না।

বক্তারা বলেন, টেকসই বেড়িবাঁধ দয়া নয়, উপকূলের মানুষের বেঁচে থাকার অধিকার। মেট্রোরেলের পেছনে হাজার হাজার কোটি টাকা খরচ হচ্ছে, অথচ ভঙ্গুর বেড়িবাঁধ পুনর্নির্মাণে অর্থ বরাদ্দ পাওয়া যায় না। এই বঞ্চনার অবসান হতে হবে। আমরা ত্রাণ চাই না, টেকসই বেড়িবাঁধ চাই।

মানববন্ধনে সভাপতিত্ব করেন দক্ষিণবঙ্গ ঐক্য পরিষদের আহ্বায়ক সালাউদ্দিন সবুজ। সংগঠনের সমন্বয়কারী গৌরভ গাইন ও কমলেষ বাছাড়ের সঞ্চালনায় বক্তব্য দেন দেলোয়ার হোসেন, শাহ জিয়াউর রহমান স্বাধীন, অসাদ শেখ, নয়ন, আসাদ, জাহিদ, তুহিন প্রমুখ।