চাকরি ছেড়ে টমেটো চাষ প্রকৌশলীর বাজিমাত
নিজ ক্ষেতে টমেটোর পরিচর্যা করছেন প্রকৌশলী মো. লিখন আলী সমকাল
কুমারখালী (কুষ্টিয়া) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০২ ডিসেম্বর ২০২৩ | ০০:৪৫ | আপডেট: ০২ ডিসেম্বর ২০২৩ | ০০:৫১
কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে চাকরি ছেড়ে টমেটো চাষ করে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন প্রকৌশলী মো. লিখন আলী (২১)। চলতি মৌসুমে পাঁচ বিঘা জমিতে ‘বাহুবলি’ জাতের টমেটো চাষ করেছেন তিনি। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে টমেটো চাষ থেকে চলতি মৌসুমে ১০ লক্ষাধিক টাকা মুনাফা সম্ভব হবে বলে জানিয়েছেন এই তরুণ।
কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার চাঁদপুর ইউনিয়নের বরইচারা গ্রামের কৃষক মো. বাহারুল ইসলামের ছেলে লিখন । তাঁর ভাষ্য, চারা, পরিচর্চাসহ পাঁচ বিঘা জমিতে টমেটো চাষে তাঁর খরচ হয়েছে প্রায় চার লাখ টাকা। গত ২০ দিনে প্রায় ৭০ মণ টমেটো তুলেছেন। প্রতি মণ টমেটো পাইকারি তিন হাজার টাকা করে ২ লাখ ১০ হাজার টাকায় বিক্রি করেছেন। বাগানে যে পরিমাণ টমেটো রয়েছে তাতে উৎপাদন হাজার মণ ছাড়িয়ে যাওয়ার প্রত্যাশা করছেন। এতে অনায়াসেই ১৫ থেকে ১৬ লাখ টাকার টমেটো বিক্রি করা সম্ভব হবে বলে তিনি আশাবাদী।
২০১৫-২০১৬ শিক্ষাবর্ষে এসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ লিখন। পরে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষে টেক্সটাইলে ডিপ্লোমা সম্পন্ন করেন। উপজেলা শহর থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটার দূরে পান্টি-বাঁশগ্রাম সড়ক ঘেঁষে তাদের গ্রাম। সড়ক থেকে প্রায় ৫০০ মিটার দূরের মাঠে মালচিং প্রদ্ধতিতে টমেটো চাষ করেছেন লিখন। গত শনিবার সকালে সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, টমেটো ক্ষেতে পরিচর্চা করছেন তিনি। তাঁর বাবা বালতি হাতে পাকা টমেটোগুলো তুলছেন।
আলাপে লিখন জানান, করোনাকালে কিছু একটা করার তাগিদ থেকে আধুনিক পদ্ধতিতে চাষাবাদে আগ্রহী হন। এ সময় ইউটিউবে কৃষিবিষয়ক ভিডিও ঘাঁটতে শুরু করেন। এক পর্যায়ে ‘বাহুবলি’ জাতের টমেটো চাষে উব্দুদ্ধ হন। ২০২১ সালে অনলাইনের মাধ্যমে চারা ও অন্যান্য সামগ্রী সংগ্রহ করে ১২ শতাংশ জমিতে টমেটো চাষ করেন। তবে সে বছর চাষে লোকসান হয়। এ ছাড়া শিক্ষিত হয়ে কৃষিকাজ করায় পরিবার থেকে বাধা ও এলাকাবাসীর কটু কথা শুনতে হয়। এক পর্যায়ে বাধ্য হয়ে চাকরি করতে ঢাকায় চলে যান। কিন্তু চাষাবাদে মন পড়ে থাকায় চাকরি ছেড়ে ফের চলে আসেন গ্রামে। পরের বছর আবারও ১২ শতাংশ জমিতে টমেটো চাষ করেন। সে বছর লাভের মুখ দেখেন। প্রায় ১ লাখ টাকা মুনাফা হয়। এতে উদ্বুদ্ধ হয়ে চলতি বছর বাবার কাছ থেকে পাঁচ বিঘা জমি নিয়ে প্রায় ১৫ হাজার পিস বাহুবলি জাতের টমেটো চারা রোপণ করেছেন। রোপণের মাত্র ২৮ দিনের মাথায় গাছে টমেটো ধরতে শুরু করে।
লিখনের বাবা বাহারুল ইসলাম লেখাপড়া করে ছেলে কৃষিকাজ করবে– তা প্রথমে ভালোভাবে নিতে পারেননি। খারাপ লাগত। তবে গত বছর টমেটো চাষে লাভ হওয়ায় তিনি খুশি হন। এ বছর গাছে ফল আরও বেশি ধরেছে। এতে কয়েক লাখ টাকা লাভের প্রত্যাশা করছেন তিনি।
স্থানীয় বাসিন্দা রিংকু ইসলাম জানান, তিনি ছয় বছর ধরে প্রবাসে ছিলেন। দেশে এসে লিখনের চাষাবাদ দেখে তিনি মুগ্ধ হয়েছেন। চলতি বছর তিন বিঘা জমিতে উচ্ছে ও লাউয়ের চাষ করেছেন। আগামী বছর বাহুবলি টমেটো চাষ করবেন।
বিল্লাল হোসেন নামে এক কৃষক বলেন, বাহুবলি জাতের টমেটো খেতে খুব সুস্বাদু। প্রচুর ফলন হয়। আগামী বছর তিনি বিঘাখানেক জমিতে এই জাতের টমেটো চাষ করবেন।
উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. আল মামুন জানান, লিখন টমেটো চাষ করে ব্যাপক সাড়া ফেলেছেন। তিনি ধারণা করছেন, চলতি বছরে লিখনের ক্ষেত থেকে প্রায় এক হাজার মণ টমেটো উৎপাদন হবে। কৃষি বিভাগ সার্বক্ষণিক তাঁর চাষাবাদে সহযোগিতা করছে।